১৪ আশ্বিন  ১৪৩০  সোমবার ২ অক্টোবর ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

ষাটেও চল্লিশের শক্তি, যৌন জীবনে স্ফূর্তি আনছে গন্ডারের হাড়ের গুঁড়ো!

Published by: Sulaya Singha |    Posted: November 16, 2019 6:22 pm|    Updated: November 16, 2019 6:22 pm

Bone dust of Rhinoceros is very benefitial to enhance conjugal life

ছবি: প্রতীকী

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য: যৌবন বর্দ্ধক টনিক! সামান্য স্পর্শে ফুরফুরে মেজাজ। উধাও যত রোগ। ডুবন্ত যৌবন স্বমহিমায় মধ্যগগনে হাজির। ষাটেও চল্লিশের শক্তি। কী ভাবছেন? গল্প কথা! বিশেষ ধরনের ওষুধ বিপননে এমনই প্রচার চালায় চিন, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম। আরও বিস্ময়কর হল, ওই ওষুধ তৈরির প্রধান উপাদান গন্ডারের হাড়ের গুঁড়ো!

সম্প্রতি কোচবিহার থেকে নেপালে পাচারের সময় ফরেস্ট টাস্ক ফোর্স অভিযান চালিয়ে প্রায় এক কেজি ওজনের হাড় উদ্ধারের পর এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। ঘটনায় ধৃত দুই দুষ্কৃতীকে জেরা করে বনকর্তারা জেনেছেন, গন্ডারের হাড় দিয়ে চিনে ৩৬ ধরনের দেশজ ওষুধ তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি বাজারে এসেছে যৌবন শক্তি বর্দ্ধক টনিক। সেটি রমরমিয়ে চলছে। বিশেষ ধরনের ওষুধ তৈরির জন্য দরকার গন্ডারের পায়ের হাড়। এক্ষেত্রে দুই শৃঙ্গ নয়, একশৃঙ্গ প্রাণীটির কদর বেশি। যার ৮৫ শতাংশ রয়েছে ভারতে। পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশের দুধওয়ার জঙ্গলে এক শৃঙ্গ গন্ডার দেখা যায়। ওই তথ্য হাতে আসতে বনকর্তারা প্রায় নিশ্চিত বিকৃত যৌন ভাবনায় তৃপ্তি আনতে চোরাবাজারে খড়্গর পাশাপাশি হাড়ের চাহিদাও উর্ধ্বমুখী। ওই কারণে শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে উত্তরের জঙ্গলে। ওই বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য জোরদার অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জলদাপাড়ার বনকর্তা মণীশ যাদব। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ভারতে ২ হাজার ২০০ গন্ডার রয়েছে। কিন্তু চোরাশিকারের কারণে সংখ্যা ক্রমশ কমছে। এখন শুধুমাত্র খড়্গ নয়, গন্ডারের শরীরের প্রতিটি অংশ পাচারের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। ধৃত দুষ্কৃতীদের সূত্রে বনকর্তারা জেনেছেন, চিন ও থাইল্যান্ডে গন্ডারের খড়্গের চাহিদা বেশি। হাত বদলের সঙ্গে ওই সামগ্রীর দাম বাড়তে শুরু করে। অসমের জঙ্গলের গন্ডার মেরে খড়গ কেটে নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে বিক্রি হয় ৮০ লক্ষ টাকা কেজি দামে।

[আরও পড়ুন: একুশ শতকেও ফুলশয্যায় সতীত্বের প্রমাণ! পিল বিক্রি করে বিতর্কে Amazon]

পায়ের হাড়ও কয়েক লক্ষ টাকা কেজি দামে হাত বদল হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে চিনে। ‘ইন্টারন্যাশনাল ল এনফোর্সিং এজেন্সি’র (ইন্টারপোল) মতে, বিশ্বে বেআইনি নার্কোটিক কারবারের পরই জায়গা করে নিয়েছে বন্যপ্রাণজাত সামগ্রীর কারবার। বছরে ২০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা চলছে। সন্দেহ নেই, যৌবন বর্দ্ধক টনিক তৈরি শুরু হতে ব্যবসা অনেক বেড়েছে। ওই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাতারাতি মোটা টাকা রোজগারের আশায় গন্ডার শিকার থেকে দেহাংশ পাচারকে ঘিরে এক অদ্ভুত পেশাও গড়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গ-সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। বন দপ্তর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে অন্তত ৭০টি গন্ডার শিকার করে চোরাশিকারিরা। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত পনেরো বছরে অসমে ৭৫৮টি এবং উত্তরবঙ্গে ১৩টি গন্ডার শিকার হয়। এর মধ্যে ছ’শো গন্ডারের খড়্গ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তাইওয়ান বিমান বন্দরে ২২টি গন্ডারের খড়্গ বাজেয়াপ্ত করা হয়। ওই সময় জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ ও অসম থেকে খড়্গ পাচার হচ্ছে ভুটানে। সেখান থেকে আকাশ পথে পৌঁছে যাচ্ছে ব্যাংকক ও তাইওয়ানে।

১৯৯৩ সালে মানস জঙ্গলে চোরাশিকার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ওই সময় অসমে গন্ডারের সংখ্যা ৯০ থেকে কমে হয় ২০। একই সময় উত্তরবঙ্গে দুটি গন্ডার মারা যায়। বন দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬৯ সালে জলদাপাড়া জঙ্গলে গন্ডারের সংখ্যা ছিল ৭৫টি। ১৯৮৩ সালের মধ্যে সেই সংখ্যা কমে হয় ১৪। এরপর কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বন কর্তাদের দাবি, ২০১১ সালের গন্ডার সুমারিতে জানা গিয়েছিল জলদাপাড়ায় ১৫৫টি এবং গরুমারায় ৪৯টি গন্ডার রয়েছে। ২০১৪ সুমারিতে সেই সংখ্যা বেড়ে যায়। গরুমারায় ৫২টি এবং জলদাপাড়ায় ১৬৭টি গন্ডারের খোঁজ মেলে। কিন্তু ২০১৪ সালে ফের চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। এক বছরে ৫টি গন্ডার খুন হয়। ২০১৮ সালে গরুমারা ও জলদাপাড়ায় দুটি গন্ডার মারা যায়। চলতি বছরে জলদাপাড়ায় একটি শিকার হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে পায়ের অংশ কেটে নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। যা দেখে বনকর্তাদের সন্দেহ, পায়ের হাড়ের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি ওয়াইন চালু খুব বেশিদিন হয়নি।

[আরও পড়ুন: চাঁদনি রাতে তাজমহলের সৌন্দর্যে ডুব দিতে চান? খুলল নয়া ভিউ পয়েন্ট]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে