সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্নেহের পরশ। নিশ্চিন্ত আশ্রয়। বাবা-মায়ের বকুনি বা শাসনের হাত থেকে রক্ষার বড় ভরসা। দাদু-দিদিমা বা ঠাকুরদা-ঠাকুরমার কোল বড় প্রিয় ঠাঁই ছোট ছোট শিশুদের। উলটোদিকে, নাতি-নাতনিদের কাছে পেতে অধীর প্রতীক্ষায় থাকেন তাঁরাও। কিন্তু করোনা মহামারীর সংক্রমণ তাতেও ছেদ টেনে দিয়েছে। উভয় তরফেই জড়িয়ে ধরে আদর করা নিরাপদ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সাম্প্রতিক নানা রিপোর্টে। অবস্থা এমনই যে, বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।
বিতর্কের সূত্রপাত সুইজারল্যান্ডের স্বাস্থ্য দপ্তরের সাম্প্রতিক নির্দেশিকার পর। যেখানে বলা হয়েছে, দশ বছরের কম বয়সি শিশুরা কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণ ছড়ায় না। তাই দাদু-ঠাকুরমা বা বয়স্ক ব্যক্তিদের জড়িয়ে ধরে আদর করতে কোনও সমস্যা নেই। বা শিশুরাও তাঁদের ঘনিষ্ঠ স্পর্শে আদর করতে পারে। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও তা জরুরি। তবে বেবি-সিটিংকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সব ধরনের সাক্ষাৎকারকেই সংক্ষিপ্ত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সুইস স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সংক্রামক রোগের প্রধান ড্যানিয়েল কোচ। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, করোনা মহামারীর জেরে সবচেয়ে বিপদে বয়স্ক, প্রবীণ ব্যক্তিরাই। তাঁদের মধ্যেই মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। তাই বিষয়টি নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করেননি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এমার্জেন্সি প্রোগ্রামের টেকনিক্যাল হেড মারিয়া ফন কেরকোভ। তাঁর মতে, “আমরা জানি, প্রবীণরা নাতি-নাতনিদের আদর করার জন্য অধীর হয়ে উঠছেন। কিন্তু ভাল করে খতিয়ে না দেখে আমরা ঝুঁকি নিতে পারি না।”
[আরও পড়ুন: লকডাউনে জন্ম নিয়ন্ত্রণ শিকেয়, বাড়িতে কন্ডোম পৌঁছে দিচ্ছে যোগী প্রশাসন]
সুইস সরকারের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে মোটেও একমত নন বহু বিশেষজ্ঞ। ‘গুড মর্নিং ব্রিটেন’ নামে জনপ্রিয় শো-তে এসে তেমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডাঃ হিলারি জোন্স। তাঁর সাফ বক্তব্য, “রিপোর্টটা দেখে আমি হতভম্ব। ইতালির ঘটনা তো তা বলছে না। সেখানে একাধিক প্রজন্ম একসঙ্গে বাস করার ঐতিহ্য ও ইতিহাস রয়েছে। সেখানে এই জন্যই এত দ্রুত ও ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই আমরা এতদিন যা জেনেছি, বুঝেছি, সবকিছুই নস্যাৎ করে দিচ্ছে সুইস রিপোর্ট। তাছাড়া যদি ধরেও নিই যে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শিশুদের থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ায় না, কিন্তু স্পর্শের মাধ্যমে তা ছড়াতেই পারে।” শুধু তাই নয়, ব্রিটেনের শিশুদের মধ্যে প্রদাহজনিত নানা উপসর্গ ক্রমশ বাড়ছে বলে সতর্ক করেছে হেলথ সার্ভিস জার্নাল। এবং তা করোনা সংক্রমণের জেরেই কিনা নিশ্চিত বলা না গেলেও অজানা সংক্রামক জীবাণুর দিকে আঙুল উঠছে। তাই জ্বর, অন্য ধরনের উপসর্গ থাকলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।