BREAKING NEWS

১১ আশ্বিন  ১৪৩০  শুক্রবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

নীল নির্জনে ডুবছে কৈশোর, চিন্তায় শহরের মনোবিদরা

Published by: Sayani Sen |    Posted: November 2, 2018 9:14 am|    Updated: November 2, 2018 9:14 am

Rising porn addiction in teenager worrying: Experts

গৌতম ব্রহ্ম: বাল্য উত্তীর্ণ সদ্য কৈশোর। নিস্পাপ মানবজমিনে ডালপালা মেলছে বিষবৃক্ষের বীজ। কচি মনের কোমল অন্দর ছারখার করে টেনে আনছে ক্লেদাক্ত আঁধার। পড়ার ফাঁকে, রাতের বিছানায় কিংবা বাথরুমে বসে মোবাইল স্ক্রিনে পর্ন দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই নীল ছবির নাছোড় জালে জড়িয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে অসংখ্য টিনএজার। পরিণতি অনেক ক্ষেত্রেই ভয়াবহ। জীবনের গোড়ায় এহেন অবৈধ আসক্তিতে কারও কারও ভবিষ্যৎ চুরমার হয়ে যাচ্ছে। যৌন সংসগের বেপরোয়া আকাঙ্খায় ঘটে যাচ্ছে চরম অঘটন। যেমন ঘটেছে দেরাদুনের স্কুলে, গত ১৪ আগস্ট। ক্লাস টেনের চার ছাত্র মিলে ধর্ষণ করেছে এক সহপাঠিনীকে। ওই জঘন্য কাণ্ড ঘটানোর আগে পর্ন ভিডিও দেখেছিল চার ছাত্র। স্কুল পর্যায়ে এমন অঘটন কিন্তু ঘটছেই। কখনও বিষয়টি প্রকাশ্যে আসছে। কখনও চাপা থাকছে।

[ট্যাক্সিতে ধূমপান মহিলা যাত্রীদের, আপত্তি জানিয়ে মার খেলেন চালক]

আসলে হতাশা বা বিরক্তির সিঁদ কেটে পর্ন আসক্তি ঢুকে পড়ছে রিডিং রুমে। মহামারীর মতো সংক্রামিত হচ্ছে। ছাত্ররা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না। যৌন সহিংসতার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, অশ্লীলতার চর্চা বাড়ছে। মা-বাবাকে প্রকাশে্য অপমান করছে কেউ কেউ। সবচেয়ে বড় কথা এই পর্নগুলি কৈশোর মনে ধর্ষণের ইচ্ছা জাগিয়ে তুলছে। এমনটাই পর্যবেক্ষণ পিজি হাসপাতালের ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’-র অধিকর্তা ডা. প্রদীপকুমার সাহার। তাঁর মত, “স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে পর্নোছবির আসক্তি। আউটডোরে অনেক এমন ছাত্র পাচ্ছি। আসলে ইন্টারনেটে পর্নোসাইটের অনিয়ন্ত্রণ খুব সহজেই শিশুদের ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকার জগতের দিকে। বয়ঃসন্ধির এ এক বড় সমস্যা। ফলে পরবর্তীকালে এই শিশু-কিশোররাই জড়িয়ে পড়ছে বড় বড় অপরাধের সঙ্গে। সুস্থ কৈশোরের স্বার্থে পর্ন সাইট ব্লক হওয়া উচিত।”

[বাজি ফাটানো যাবে মাত্র দু’ঘণ্টা, কালীপুজোয় নয়া নির্দেশ লালবাজারের]

মূূলত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও ট্যাবের মতো সহজলভ্য যন্ত্রে পর্ন দেখে কিশোর-কিশোরী। সামনে বই খুলে বসে অডিও পর্ন শুনে আদরের সন্তান সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়ে অত্যন্ত কুৎসিত ধারণা তৈরি করছে মনে মনে। নিজের পরিবারের নারী ছাড়া বাকি সব নারীদের নিয়ে বাজে চিন্তা করছে। এমনটাই জানালেন মনোবিদ মৌসুমী মজুমদার। তাঁর মত, ঘরে ঘরে ব্রডব্যান্ড আর ওয়াইফাই সহজলভ্য হওয়াতে পর্ন আসক্তি আরও ডালপালা মেলছে। এমনকী, ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সিদের মধ্যে ‘অ্যামেচার পর্ন’ বানানোর প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে মনোবিজ্ঞানীদের মত, বয়ঃসন্ধিকালে প্রত্যেক শিশুকেই সুস্থ আর স্বাভাবিক যৌনতা সম্পর্কে জানা উচিত। যদি না জানে তার ফলে দেখা যায় তারা পর্ন-সহ বিভিন্ন অ্যাডাল্ট সাইটগুলো দেখে যৌন সম্পর্ককে অস্বাভাবিক ভাবতে শুরু করে। এর প্রভাব পড়ে তাদের সামাজিক আচরণে। পরবর্তীকালে দাম্পত্য সম্পর্কেও এর প্রভাব পড়ছে। অনেক সময়ই অনেক স্বামী পর্নো মুভি যেভাবে দেখে ঠিক একইভাবে যৌন সম্পর্ক করতে চায় আর স্ত্রী রাজি না হলে শুরু করে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার।

[গতিতে ঝড় তুলে ছুটল চালকহীন মেট্রো, সফল পরীক্ষা]

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পর্নোগ্রাফি আসক্তি মাদকের চেয়েও ভয়ানক। যাঁরা অধিক মাত্রায় অশ্লীল দৃশ্য উপভোগ করেন, তঁাদের মগজের ধূসর পদার্থ উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকে। অবিরল যৌন দৃশ্য উপভোগ করলে মস্তিষ্কে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম-সহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে সরকারিভাবে কিশোরদের পর্নসাইটে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। পাভলভ মানসিক হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিস্ট অধ্যাপক ডা. শর্মিলা সরকারের ব্যাখ্যা, বর্তমান সময়ে বাবা-মা এতটাই ব্যস্ত সময় কাটায় যে তাদের সন্তানকে খুব একটা সময় দিতে পারে না। ফলে শিশুরা একাকী সময় কাটাতে এবং শরীরবৃত্তীয় কামনা নিবৃত্ত করতে পর্ন সাইটের আশ্রয় নেয়। আর এই একটা আসক্তির পথ ধরে আরও অনেক আসক্তি ঢুকে পড়ে কৈশোরের ঘেরাটোপে। এই সর্বনাশা পথ থেকে সন্তানদের ফেরাতে বাবা-মা-ই পারেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে। শিশুদের আউটডোর গেম, গল্পের বইতে আরও বেশী উৎসাহিত
করা উচিত।

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে