সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চালু হল এম আধারের নয়া সংস্করণ। আধার কার্ড এবং আধার তথ্যের নিয়ন্ত্রক ইউআইডিএআই (ইউনিক আইডেনটিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) মোবাইল আধার বা এম আধারের নয়া সংস্করণ চালু করল। এই নয়া সংস্করণ আরও নিরাপদ বলে দাবি করা হয়েছে আধার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপল ফোনের ব্যবহারকারীরা এই নয়া নিরাপদ অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে আগের অ্যাপটি ডিলিট করতে হবে। আগের এম আধার অ্যাপটি ডিলিট করে নয়া এম আধার অ্যাপটি তাঁরা কাজের সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।
আধার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আধার কার্ড, অফলাইন ই-কেওয়াইসি, আধারের QR কোড স্ক্যান করা, ঠিকানা রিপ্রিন্ট করতে দেওয়া, ঠিকানা আপডেট করা, ই-মেল যাচাই করা ইত্যাদি আধার সংক্রান্ত অনেক কাজই করা যাবে এই নয়া এম আধার অ্যাপের মাধ্যমে। বাংলা-সহ মোট ১৩টি ভাষায় কাজ করা যাবে এম আধার অ্যাপে। এম আধার অ্যাপে নিজের বায়োমেট্রিক তথ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য তথ্য ভাণ্ডার লক বা আনলক করতে পারবেন যে কেউ।
অন্যদিকে, আধার কার্ড নিয়ে সমীক্ষা চালাতে গিয়ে উঠে এসেছে অনেক মজাদার তথ্য। আধার কার্ড নিয়ে নাগরিকদের মনে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সম্প্রতি ডালবার্গ নামে একটি সংস্থা সমীক্ষা চালিয়েছে আধার কার্ড নিয়ে। ওম্মিদবার নেটওয়ার্ক ইন্ডিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই সমীক্ষার ব্যয়ভার বহন করেছে। ‘স্টেট অফ আধার: আ পিপলস পার্সপেক্টিভ’ নামে ওই সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষই বিশ্বাসই করে যে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের জন্য আধার আবশ্যিক।
আধার কার্ড নিয়ে শতকরা ৯০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্কর মনেই রয়েছে ভ্রান্ত ধারণা। একটি সমীক্ষায় তা দেখাও গিয়েছে। তাঁরা মনে করেন, আধার করানোর সময় তাঁরা যে আঙুলের ছাপ, রেটিনার ছবি দিয়েছেন (বায়োমেট্রিক তথ্য), তা একেবারে নিরাপদ এবং কেউ তা চুরি করতে বা হ্যাক করতে পারবে না। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরও লোকে মনে করেন, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে এবং মোবাইলের নতুন সিমকার্ড নিতে আধার কার্ড আবশ্যিক। কিন্তু দুটো ধারণাই ভুল। আধার কার্ডের তথ্য পুরোপুরি নিরাপদ নয় এবং তা হ্যাক করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন অনেক সাইবার বিশেষজ্ঞই। তার প্রমাণ অনেকবার মিলেছে। সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছিল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক নয়।
[আরও পড়ুন: ডিসেম্বরের আগেই আপনার গাড়িতে লাগান ফাসট্যাগ, জেনে নিন পদ্ধতি]
দেশে ৮ শতাংশ বা ১০.৩ কোটি বাসিন্দার এখনও আধার কার্ড নেই। এদের বেশিরভাগই (৭৩ শতাংশ বা সাড়ে সাত কোটি) অপ্রাপ্তবয়স্ক, এদের আবার তিন ভাগের এক ভাগের বয়স পাঁচ বছরের নিচে। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, আধার কার্ড নিয়ে দেশের বেশিরভাগ মানুষ কতটা আবেগপ্রবণ। আধার থেকে তাঁরা কী সুবিধা পান ও কী সুবিধা পান না, সে ব্যাপারেও তাঁদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। ৮০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষ বিশ্বাস করে যে, সরকারি ভরতুকি ও সুযোগসুবিধা যেমন- পেনশন, রেশন প্রভৃতি পাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য হল আধার কার্ড। ১ লক্ষ ৬৭ হাজার নাগরিকের উপর এই সমীক্ষা করা হয়েছে। ২৮টি রাজ্যের ১,৪৭,৮৬৮ জনের উপর ১০ মিনিটের এবং ১৬টি রাজ্যের ১৯,২০৯ জনের সঙ্গে ৪৫ মিনিটের কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে এই সমীক্ষা রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। এই সমীক্ষায় আরও একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আধার কার্ডের গ্রাহকদের ৯২ শতাংশই এই কার্ড নিয়ে সন্তুষ্ট, আধার কার্ডের জন্য অন্তত একবার পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েও ৬৭ শতাংশ ভারতীয় দাবি করেছে, তারা এই কার্ডের ব্যাপারে পুরোপুরি সন্তুষ্ট।
আধার ব্যবহারকারীরা এই কার্ডের মাধ্যমে নানা সুযোগসুবিধা ভোগ করছে। যেমন- রান্নার গ্যাসে ভরতুকি (৯২ শতাংশ), পেনশন (৮৮ শতাংশ), মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ নিশ্চয়তা প্রকল্প বা ১০০ দিনের কাজ (৭৭ শতাংশ) ও আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প (৭৪ শতাংশ)। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজন, গৃহহীন ও বহু মহিলার এটাই প্রথম কোনও পরিচয়পত্র।
এখন দেশের ১২০ কোটি মানুষের আধার কার্ড রয়েছে। রেশন পাওয়ার জন্য এঁদের ৩৯ শতাংশ কার্ড গ্রাহকই নিয়মিতভাবে তাঁদের আধারযুক্ত বায়োমেট্রিক ব্যবহার করে চলেছেন, ২৯ শতাংশ ভারতীয় তাঁদের মাসিক বিভিন্ন পরিষেবা পাচ্ছেন এই কার্ডের মাধ্যমে। সমীক্ষা বলছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের ৭৫ শতাংশেরই এখন আধার রয়েছে। ২০০৯ সালে এই কার্ড চালু হয়। বেশিরভাগ রাজ্যে যখন প্রায় সকলেরই আধার রয়েছে সেখানে ব্যতিক্রম অসম-মেঘালয়। অসমে ৯০ শতাংশ ও মেঘালয়ে ৬০ শতাংশ বাসিন্দার আধার নেই। রিপোর্ট বলছে, “অসমের মানুষ সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়েছেন আধারে নাম নথিভুক্ত করতে গিয়ে।”
[আরও পড়ুন: এক কানেকশনেই টিভি-ভিডিও কল, লাভের মুখ দেখতে নয়া উদ্যোগ বিএসএনএলের ]