সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনের কাচের ভিতরে লাগানো থাকবে একটা চিরকুটের মতো কাগজ বা স্টিকার। তাতে থাকবে নীল বা কালো রংয়ের একটি বিশেষ চিহ্ন। টোল প্লাজায় দাঁড়ালে একটা হালকা বিপ শব্দ হবে। তারপর টোল বা পথ-কর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই টাকা কেটে যাবে গাড়ির মালিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে। এই নয়া ইলেকট্রনিক স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি এবার থেকে সব গাড়িতে ইনস্টল করার বা বসানো বাধ্যতামূলক করছে সরকার। এই স্টিকারটির পোশাকি নাম ‘ফাসট্যাগ’। নয়া পদ্ধতি অনুসারে, টোল প্লাজায় আর গাড়ি নিয়ে থামার দরকার নেই। গাড়িতে আটকে দেখাতে হবে ফাসট্যাগ (FASTag)। ৩০ নভেম্বর থেকেই গাড়িতে লাগানো যাবে এই ট্যাগ।
কী এই ফাসট্যাগ?
গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে লাগাতে হবে ফাসট্যাগ। সেই গাড়ি যখন টোল প্লাজার পাশ দিয়ে যাবে, তখন ওই ট্যাগের সঙ্গে সংযুক্ত করা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ওয়ালেট থেকে আপনা আপনিই কেটে যাবে টোলের জন্য নির্দিষ্ট টাকা। আলাদা করে পকেট থেকে টাকা দেওয়ার দরকার নেই। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন Radio Frequency Identification (আরএফআই) প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে কাজ করে এই ফাসট্যাগ। এই ট্যাগের কোনও এক্সপায়ারি ডেট নেই। যদি ওই ট্যাগ না ছেঁড়ে তাহলে যত দিন খুশি ব্যবহার করা যাবে। নেফ্ট, আরটিজিএস, ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে যো কেউ রিচার্জ করাতে পারবেন এই ফাসট্যাগ।
কীভাবে কিনবেন ফাসট্যাগ?
২২ টি ব্যাংক থেকে দেওয়া হচ্ছে এই ফাসট্যাগ। ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে এবং টোল প্লাজা থেকে দেওয়া হবে সেইসব ‘ফাসট্যাগ’। আমাজনের মতো ই-কমার্স প্লাটফর্মেও ‘ফাসট্যাগ’ পাওয়া যাবে। কেনার পর এটি অ্যাকটিভেট করতে হবে।
গাড়ির মালিকরা নিজেই অ্যাকটিভেট করে নিতে পারবেন এই ‘ফাসট্যাগ’। অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোন থেকে ‘My FASTag’ মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করুন। এরপর আপনার যে কোনও একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আপনার ‘ফাসট্যাগ’ লিংক করুন। এছাড়া রয়েছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার ওয়ালেট। তাতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি টাকা না কেটে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটবে। এছাড়া ব্যাংকের শাখায় গিয়েও এটি অ্যাকটিভেট করতে পারেন। তার জন্য কেওয়াইসি জমা দিতে হবে। ডিসেম্বর মাস থেকেই দেশে ন্যাশনাল হাইওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (এনএইচএআই) সমস্ত টোল প্লাজায় বৈদ্যুতিন প্রক্রিয়ায় টোল আদায় করবে৷ ফলে হাইওয়ে দিয়ে চলাচল করা গাড়িগুলিতে ‘ফাসট্যাগ’ অ্যাকটিভেট করে নিতে হবে আর তা না করা থাকলে গাড়ির চালককে দিতে হবে দ্বিগুণ টোল ট্যাক্স৷
গাড়ি তৈরির সংস্থাগুলিও এবার নতুন গাড়িতে ‘ফাসট্যাগ’ প্রযুক্তিরও ব্যবস্থা রাখছে। যে সব গাড়িতে ‘ফাসট্যাগ’ স্টিকার লাগানো নেই সেগুলির জন্য টোল প্লাজায় আলাদা লেন আপাতত রাখা থাকবে এবং বর্তমান পদ্ধতিতেই সেখানে টোলের টাকা জমা দিতে হবে৷ সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে এই পকেট থেকে হাতে হাতে টাকা দেওয়ার লেন একেবারে তুলে দেওয়ার৷। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই গোটা টোল আদায়ের এই নয়া ব্যবস্থা মসৃণভাবে যাতে চালু করা যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে৷
[আরও পড়ুন: কীভাবে তৈরি হয় রকেট? তথ্য দেবে ন’বছরের খুদের বানানো অ্যাপ]
গাড়ির মালিকদের ‘ফাসট্যাগ’ ব্যবহার করার জন্যও সচেতন এবং উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে সময়, পরিশ্রম অনেক বাঁচবে। সরকারেরও খরচ বাঁচবে। যানজটও হবে না। তবে ‘ফাসট্যাগ’-এর মতো অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া চালু হলে অজস্র কর্মী কাজ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্নমহল।