সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: অযোধ্যার অদূরে বিস্তৃত জলাশয়ের বুকে গোধূলির আলোছায়ার খেলা কিংবা প্রকৃতির মাঝে আরেক টুকরো প্রকৃতি – জঙ্গলঘেরা মাটির কটেজে বন্দি হয়েও মুক্তির অনভূতি৷ মোহময়ী পুরুলিয়ায় অনাদরে পড়ে থাকা দুই ভ্রমণস্থল মুরগুমা আর দোলাডাঙার এমন পিকচার পোস্টকার্ড দেখলে মন হয়, একছুটে চলে যাই সেই ঠিকানায়৷
[আরও পড়ুন: কম খরচে পাহাড়ি গ্রামে ছুটি কাটাতে চান? গন্তব্য হোক ছালামাথাং]
সেই আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তুলতে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে পৃথক স্থান হিসেবে ঠাঁই পাচ্ছে পুরুলিয়ার মুরগুমা ও দোলাডাঙা। অযোধ্যা পাহাড় লাগোয়া মুরগুমা ও দক্ষিণ পুরুলিয়ার দোলাডাঙাকে সাজাতে ১৫ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। গত আর্থিক বছরে রাজ্যের পর্যটন বিভাগ এই টাকা বরাদ্দ করলেও
লোকসভা ভোটের কারণে কাজ শুরু করতে পারেনি পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। তবে গত জুন মাস নাগাদ মানবাজার এক নম্বর ব্লকের দোলাডাঙায় কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। খুব
শীঘ্রই কাজ শুরু হবে ঝালদা দু’নম্বর ব্লকের মুরগুমাতেও। জেলা প্রশাসনের আশা, আগামী শীতের মরশুমেই এই দুই পর্যটন ক্ষেত্রের দরজা খুলে যাবে।
রাজ্যের পর্যটন বিভাগ চাইছে, পৃথিবীর রূপ দেখা দেশ–বিদেশের পর্যটকদের আরও বেশি করে রূপসী বাংলাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে৷ তাই একেবারে প্রকৃতির কোলে ডুবে থাকা নতু্ন নতুন ল্যান্ডস্কেপকে বেছে সেই জায়গা সাজিয়েগুছিয়ে তুলছে রাজ্যের পর্যটন বিভাগ। পুরুলিয়ার পর্যটন বিভাগের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দার্জিলিং, দিঘা, শান্তিনিকেতনের একঘেয়েমি থেকে কাটিয়ে পর্যটকদের নজর অন্যদিকে ঘোরাতেই মুরগুমা ও দোলাডাঙাকে পৃথক পর্যটন কেন্দ্রের রূপ দেওয়ার ভাবনা৷ আমরা আশা করছি, আগামী শীতের মরশুমে এই দুই পর্যটন কেন্দ্রকে সাজিয়েগুছিয়ে তুলে ধরতে পারব৷” পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুরগুমাতে প্রায় ৯ কোটি ৫০ লক্ষ ও দোলাডাঙাতে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে পর্যটন বিভাগ। দুটি টুরিস্ট স্পটেই একাধিক কটেজ, ক্যাফেটেরিয়া, পার্ক তৈরি করা হচ্ছে। এই দুটি কেন্দ্রেই জলাধারকে কাজে লাগিয়ে পর্যটক টানতে চায় রাজ্য। তাই মুরগুমা জলাধারে পরবর্তী ধাপে ওয়াটার স্পোর্টসেরও পরিকল্পনা রয়েছে। ঠিক
তেমনই কংসাবতী জলাধার ছুঁয়ে থাকা দোলাডাঙাতে ‘বাটারফ্লাই গার্ডেন’ করার পরিকল্পনাও আছে প্রশাসনের।
অযোধ্যা পাহাড়ের সাইট সিয়িং হিসাবে পরিচিত মুরগুমাতে বেসরকারি কটেজ থাকলেও এই এলাকায় পর্যটনের প্রসারে এই প্রথম সরকারিভাবে কটেজ তৈরি হচ্ছে। সাধারণভাবে অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকরা অযোধ্যা হিলটপ থেকে প্রায় ষোল কিমি জঙ্গল পথে লং ড্রাইভে মুরগুমা আসেন। কিন্তু এই জলাধারকে ঘিরে থাকা অযোধ্যা পাহাড়তলির এই এলাকা একেবারে ক্যানভাসে আঁকা ছবি। লম্বা টানা পাহাড় ছুঁয়ে মুরগুমার নীল জলরাশি। পরিযায়ীর ডানা ঝাপটানো। সবে মিলিয়ে মাটির গন্ধে ভরপুর এই মুরগুমা।
একইভাবে কংসাবতী জলাধারের কোল ঘেঁষে গাছ–গাছালির ঠাসাঠাসিতে যে জনপদ
রয়েছে তার ঠিকানা – দোলাডাঙা৷ জলাধারের পাশে এই জনপদ যেন এক টুকরো গোয়া। সমুদ্র তটের মতই জলাধারের পাশে গাছ–গাছালির ফাঁকে তৈরি হচ্ছে কটেজ।
সেই কটেজের জানালা দিয়েই দেখা যাবে জলাধারে ভেসে বেড়ানো নৌকা, মিশে যাওয়া কুমারী নদী। ওপারে দক্ষিণ বাঁকুড়ার মুকুটমনিপুরের নীল জলরাশি। এই দোলাডাঙায়
মানবাজার এক নম্বর ব্লক প্রশাসন কয়েকটি অস্থায়ী কটেজ আগেই তৈরি করেছিল। এখন সেই কটেজ ভেঙেই স্থায়ীভাবে তৈরি হচ্ছে। তবে জলাধারে পাশে পাতা তাঁবু
থাকছেই। মানবাজার এক নম্বর ব্লকের বিডিও নীলাদ্রি সরকার বলেন, “আগামী শীতের মরশুমে এই পর্যটনকেন্দ্র চালু করে দিতেই জোরকদকমে কাজ হচ্ছে। তাই এখন
আমরা এই দোলাডাঙাই কোন বুকিং নিচ্ছি না। তাঁবুতে পর্যটক থাকলে দ্রুত গতিতে কাজ সম্ভব নয়।”
[আরও পড়ুন: ডাল লেক নয়, বছর শেষে কাশ্মীর ভ্রমণের তালিকায় থাক এই ৫ অফবিট জায়গা]
শহর যেখানে উপকণ্ঠের গলি পেরিয়ে পা রাখবে শান্ত শহরতলির বুকে, সেখানেই দেখা হবে আপনার সঙ্গে আপনার৷ তাই ক্লান্তি মাখা মনশরীরে একবার দোলাডাঙা বা মুরগুমা পৌঁছে গেলেই হল৷ প্রকৃতির স্নেহমাখা হাত মুছে দেবে আপনার ক্লান্তি, অবসাদ৷ আকাশের আঙিনায় সন্ধেতারাদের মৌনমুখর সংগীত মনে দোলা লাগাবেই৷
ছবি: অমিত সিং দেও৷