BREAKING NEWS

১০ চৈত্র  ১৪২৯  শনিবার ২৫ মার্চ ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

পুড়ে গেলে মাজন নয়, এভাবে করুন চিকিৎসা

Published by: Bishakha Pal |    Posted: February 19, 2019 9:35 pm|    Updated: February 19, 2019 9:35 pm

What to do on burn injury

মেজর বার্নে পরিচ্ছন্নতা ও সঠিক সাবধানতা মানলে ইনফেকশন থেকে মৃত্যুবিপদ এড়ানো সম্ভব। পরামর্শে আর জি কর হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিশিষ্ট প্লাস্টিক সার্জন ডা. রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য। লিখছেন পৌষালী দে কুণ্ডু।

কতটা তাপমাত্রার বস্তু কতক্ষণ ত্বকের সংস্পর্শে রইল তার উপর নির্ভর করছে ক্ষত কতটা হবে। গরম জল শরীরে ছিটকে সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন হতে পারে। আবার অল্প তাপমাত্রার ইলেকট্রিক্যাল হিটারও দীর্ঘক্ষণ ধরে রোগীর শরীরের সংস্পর্শে থাকলে থার্ড ডিগ্রি বার্নের মতো ভয়াবহ হতে পারে। আগুনে পোড়ার ঘটনাকে তিনভাগে ভাগ করা হয়। এক, আতসবাজি পোড়ানো, রান্না বা পুজো করতে গিয়ে গ্যাস বা প্রদীপ থেকে বা অন্য কোনও দুর্ঘটনায় পোড়া। অ্যাক্সিডেন্টাল বার্নের মধ্যে কারখানায় কাজ করতে গিয়ে কিছু ফেটে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাও পড়ে। দ্বিতীয়, হোমিসাইডাল বার্ন অর্থাৎ পণের জন্য বধূর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া। তৃতীয়, আত্মহত্যা করতে চেয়ে অগ্নিদগ্ধ হওয়া। এছাড়া গরম জল, গরম ডাল, তরকারি থেকেও ত্বক পুড়ে যায়। অগ্নিদগ্ধ রোগীর ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা ভীষণ বেড়ে যায়। পোড়া ক্ষতে নতুন চামড়া গজিয়ে যাওয়াও সহজ। কিন্তু ইনফেকশন এড়ানো বেশ কঠিন।

দগ্ধ স্টেজ

ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন
ত্বকের একদম বাইরের অংশ (এপিডারমিস) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে চামড়ার উপর কোনও দগ্ধ দাগ হয় না। ড্রেসিং ও সাধারণ কিছু ওষুধেই কাজ হয়ে যায়।

সেকেন্ড ডিগ্রি (সুপারফিসিয়াল) বার্ন
এতে এপিডারমিসের নিচে থাকা টিস্যুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছুদিন হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হতে পারে। সঠিক পদ্ধতিতে নিয়মিত ড্রেসিং করতে হয়। দ্রুত সঠিক চিকিৎসা শুরু হলে তিন সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। তবে ক্ষতের দাগ অল্প থেকে যায়।

সেকেন্ড ডিগ্রি (ডিপ) বার্ন
এক্ষেত্রে এপিডারমিসের নিচে থাকা অংশ গভীর পর্যন্ত পুড়ে যায়। এই ধরনের বার্ন কেস সারতে অনেক সময় লাগে। ক্ষতের চিহ্নও স্পষ্ট থাকে। বিশেষ সুবিধাযুক্ত বার্ন ইউনিটে প্লাস্টিক সার্জারি করে স্কিন গ্রাফটিং করতে লাগে।

থার্ড ডিগ্রি বার্ন
এই ধরনের বার্ন কেসে চামড়া-সহ পেশিও পুড়ে যায়। অত্যাধুনিক সুবিধাযুক্ত বার্ন ইউনিটে সার্জারি করে দগ্ধ মাংসপেশি কেটে বের করে স্কিন গ্রাফটিং করা হয়।

বসন্তে দূরে রাখুন ‘বসন্ত’, জেনে নিন চিকেন পক্স থেকে বাঁচার উপায় ]

ফার্স্ট এইড

  • গরম বাটির সামান্য ছ্যাঁকা, রং মশাল ফেটে ঝলসে যাওয়া কিংবা রান্না, পুজো করতে গিয়ে কাপড়ে আগুন লাগা- বিপদ যেভাবেই হোক, যতটুকুই হোক, ভয়াবহ হোক বা না হোক, প্রথমেই শরীরের দগ্ধ স্থান কলের জলের তলায় ধরে রাখুন। খুব বেশি পুড়লে পুরো চান করিয়ে দিন। হাত-পায়ে ক্ষত হলে বালতির জলে ডুবিয়ে বসে থাকুন অন্তত ১০-১৫ মিনিট।
  • আগুন নেভাতে কম্বলের ব্যবহার করা যায়। কিন্তু তারপর আর ব্যবহার করা উচিত নয়।
  • মাজন, ওষুধ বা কোনও ময়েশ্চারাইজার ক্ষতের উপর লাগাবেন না। এতে বিপদ বাড়ে।
  • হাতের চুড়ি, আংটি যত দ্রুত সম্ভব খুলে নিতে হবে।
  • মুখ ও হাতে ক্ষত হলে বাড়িতে ট্রিটমেন্ট না করিয়ে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যান।
  • হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় অ্যাম্বুল্যান্সে পাতলা, নরম, পরিচ্ছন্ন কাপড় বিছিয়ে তার উপর রোগীকে শুইয়ে দিন।

বার্ন ওয়ার্ড

  • এম আর বাঙ্গুর হাসপাতাল, টালিগঞ্জ
  • এসএসকেএম হাসপাতাল
  • আর জি কর হাসপাতাল
  • মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
  • ডিসান হাসপাতাল
  • ন্যাশনাল মেডিক্যাল হাসপাতাল

এছাড়া আইসিইউ পরিষেবাযুক্ত অন্যান্য হাসপাতাল বা নার্সিংহোম-

জেলায় জেলায়

  • বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ – ওয়ার্ড আছে
  • মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ – ওয়ার্ড আছে

ইনফেকশনই চিন্তার

শরীরের ৪০-৫০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া রোগীর প্রথম ছ-সাতদিন কেটে যাওয়ার পর দগ্ধ ত্বক শুকোতে থাকে।  এই সময় শরীরে ইনফেকশনের প্রার্দুভাব বাড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে সহজেই ইনফেকশন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যার জেরে ইনফেকশন একাধিক অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে তা বিকল হতে শুরু করে। তাই পুড়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহকে সবচেয়ে দুশ্চিন্তার সময় বলে ধরা হয়। অ্যান্টি বায়োটিক ও নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বারা রোগী এই পর্ব কাটিয়ে উঠলে সংকটজনক অবস্থা কেটে যায়। হাই সুগার, হাই প্রেশার নেই এমন কারও শরীরের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পুড়লে প্রাণে বাঁচা নিয়ে খুব একটা সংশয় থাকে না। ৪০-৫০ শতাংশের ক্ষেত্রেও প্রাণে বাঁচানো যায়। কিন্তু তার বেশি হলে পরিস্থিতি সতি্য কঠিন। তবে সবার ইনফেকশন হবে এমন নয়। ক্ষতের স্থান ও কতটা অংশ পুড়েছে তা নির্ভর করে। অনেক সময়ই ক্ষত দ্রুত কমে যায় এবং ইনফেকশন হয় না।

চিকিৎসা পদ্ধতি

সুপারফিসিয়াল বার্নের ক্ষেত্রে প্রথমেই চিকিৎসকরা দেখে নেন শরীরের কতটা পুড়েছ ও কোন অংশ পুড়েছে। এরপরই স্যালাইন বা স্টেরিলাইজড বস্তু দিয়ে ক্ষত ধুয়ে দেওয়া হয়। রোগী যদি হাঁটতে পারেন তাহলে তাঁকে স্নানঘরে নিয়ে গিয়ে শাওয়ারের জলের নিচে কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। এরপর রোগীকে জীবাণুমুক্ত, পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়। পরিচ্ছন্ন সুতির কাপড়ের উপর শুতে দেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে ক্ষতস্থানে একটু ড্রেসিংও করে দেওয়া হয়। এরপর দরকারমতো স্যালাইন ও ব্যথা কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়। ইঞ্জেকশন, অ্যান্টি বায়োটিক চালু করা হয়। মেজর বার্ন হলে অক্সিজেনও দেওয়া হয়। যত দিন পর্যন্ত ঘা শুকিয়ে যাচ্ছে ততদিন অ্যান্টি বায়োটিক চলতে থাকে। এই সময় সব কিছুর পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ নজর রাখা হয়। কারণ সামান্য অপরিচ্ছন্নতা থেকেই ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে। এরপর  যত দ্রুত সম্ভব প্লাস্টিক সার্জারি করে স্কিন গ্রাফট করা হয়।

সাধারণত, অল্প পুড়লে দু’তিনদিনের মধ্যেই আর্লি স্কিন গ্রাফটিং করা হয়। এক্ষেত্রে দগ্ধ মাংস কেটে বাদ দিয়ে পরিচ্ছন্ন মাংসপেশির উপর থাই বা শরীরের অন্য কোনও অংশ থেকে ত্বক এনে প্লাস্টিক সার্জারি করে দেওয়া হয়।  এতে ইনফেকশন হওয়ার শঙ্কা প্রায় কমেই যায়। ৩০-৪০ শতাংশ অংশ পুড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত তিন-চার সপ্তাহ পরে স্কিন গ্রাফট করা হয়। ততদিনে ক্ষতস্থান শুকিয়ে যায়। পোড়া মাংসের জায়গায় নতুন মাংসও গজাতে শুরু করে।

শরীরের নিচের অংশ আগুনে পুড়লে রোগীকে হাঁটাচলা করানো, ফিজিওথেরাপি করতে খুব অসুবিধা হয়। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে সমস্যা, ক্ষতস্থান প্লাস্টিক সার্জারি করে চামড়া দিয়ে ঢাকতে আক্রান্তের থাই থেকে ত্বক নিতে অসুবিধা হওয়া। থাই পুড়ে গেলে শারীরিক জটিলতাও অনেক গুণ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে সাধারণত স্কিন ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হতে হয়।

বাতাসে বইছে রেণু, বাড়ছে শ্বাসকষ্ট-অ্যালার্জির সমস্যা ]

কখন হাসপাতালে

শরীরের ১৫ শতাংশের বেশি পুড়লেই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। যদি দগ্ধ ব্যক্তি অনেক বয়স্ক হন তাঁদের ১৫ শতাংশের কম পুড়লেও হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হবে। এছাড়া হাই সুগার, হাই প্রেশার বা অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা থাকে তাহলে কোনও অবস্থাতেই বাড়িতে রেখে ট্রিটমেন্ট করা ঠিক হবে না। দ্রুত আইসিইউ পরিষেবাযুক্ত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। মুখ ও হাত পুড়লেও বাড়িতে রাখবেন না।

স্কিন ব্যাংক

ব্রেন ডেথ হওয়া রোগীর শরীর থেকে চামড়া নিয়ে প্রসেস করে স্কিন ব্যাংকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। রোগীর শরীর অনেকটা পুড়লে পা বা থাই থেকে তাঁর নিজস্ব স্কিন নিয়ে  প্লাস্টিক সার্জারি করা সম্ভব হয় না।  তখন স্কিন ব্যাঙ্কের ত্বকের দরকার হয়। সাধারণত বার্ন কেসের তিন-চার সপ্তাহ পর ক্ষত শুকিয়ে গেলে ও রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলে চামড়া বসানো হয়। তবে এই ত্বক আক্রান্তের শরীরে মাত্র তিন-চার সপ্তাহ থাকে। এরপর খসে পড়ে যায়। অবশ্য এর মধে্য আপনা থেকেই আক্রান্তের ক্ষতের উপর নিজস্ব চামড়া গজাতে শুরু করে দেয়।

এসএসকেএম হাসপাতালেই একমাত্র স্কিন ব্যাংক আছে। এই হাসপাতালের রোগীর পাশাপাশি অন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরাও সংরক্ষিত ত্বক পেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে অন্য হাসপাতালের অগ্নিদগ্ধ রোগীর স্কিনের দরকার হলে সেই হাসপাতালের সুপারিনটেন্ডেন্ট এসএসকেএম-এর সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেন।

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে