মৌশাখী বসু: বিয়ে একটা সুন্দর প্রতিষ্ঠান; সন্দেহ নেই! সন্দেহ আসলে অন্য জায়গায়! বিয়ে তো না-হয় হয়ে গেল! তার পরে সংসারটা সুখের হবে তো?
এখন, সুখী গৃহকোণের জন্য কী কী আবশ্যক, তা নিয়ে অনেকে নানা কথা তুলতে পারেন। অধিকাংশই বলবেন, আদর্শ সংসার-জীবন যাপনের জন্য দম্পতির মধ্যে একটা স্পষ্ট বোঝাপড়া থাকা খুব দরকার।
তার থেকেও বেশি দরকার কিন্তু রক্তপরীক্ষা! তাও বিয়ের আগেই! আসলে, বিয়ে মানে তো শুধুই একসঙ্গে থাকা নয়, পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে লালনের দিকেও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু, দম্পতি যদি সুস্থ না হন, তবে পরবর্তী প্রজন্মও সুন্দর হবে না! তাই, পরবর্তী প্রজন্মকে আপনার সুপ্ত অসুখের হাত থেকে বাঁচাতে চাইলে বিয়ের আগে কিছু মেডিক্যাল টেস্ট করাতেই হবে৷ সেগুলো কী, জানালেন রুবি জেনারেল হাসপাতালের হেমাটোলজিস্ট ডা. তুফানকান্তি দলুই৷
যে পরীক্ষা না করালেই নয়:
• থ্যালাসেমিয়া টেস্ট:
বাবা ও মা উভয়েই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে সন্তানের মধ্যে অসুখটি স্থানান্তরিত হওয়ার অন্তত ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে৷ তাই বিয়ের আগে ‘হিমোগ্লোবিন ই বিটা থ্যালাসেমিয়া’ টেস্ট করানো আবশ্যক৷ এ ক্ষেত্রে দু’জনেই বাহক হলে প্রেগন্যান্সির ১৮-২২ সপ্তাহের মধ্যে ‘প্রি ন্যাটাল চেক’ করতে হবে৷ গর্ভস্থ সন্তান থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হলে, সে সন্তানকে পৃথিবীর আলো না দেখানোই শ্রেয়৷ কারণ, তার জন্যও অপেক্ষা করবে এক অসুস্থ ভবিষ্যৎ।
• রক্তের গ্রুপ নির্ণয়:
বিয়ের আগে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় অতি আবশ্যক। কারণ, ব্লাড গ্রুপ ABO এবং RH- হলে দ্বিতীয় প্রেগন্যান্সির সময়ে ‘হিমোলাইটিক’ হয়ে সন্তানের মৃত্যু হতে পারে৷ এ ছাড়া মায়ের স্বাস্থ্যও খারাপ হয়ে নানা জটিলতা দেখা দেয়৷ তাই আগে থেকে ব্লাড গ্রুপ জানা থাকলে অন্তঃসত্ত্বাকে ‘অ্যান্টি ডি’ ইনজেকশন দিয়ে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব৷
• সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ (STD):
সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজের মধ্যে অন্যতম HIV, যা নিয়ে বর্তমানে সারা বিশ্ব তোলপাড়৷ তাই বিয়ের আগে এই টেস্ট করিয়ে নেওয়া সব চেয়ে দরকার৷ আর যদি ফলাফল পজিটিভ আসে, তাহলেও চিন্তার কিছু নেই! এক প্রকার ভাইরাল ইনজেকশন দিয়ে HIV নেগেটিভ করা সময়ের অপেক্ষা৷ সেক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সির সময়ে পরবর্তী প্রজন্ম এই অসুখের হাত থেকে রক্ষা পাবে৷
হেপাটাইটিস বি ও সি HIV-র মতো মারাত্মক না হলেও বিপজ্জনক সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ৷ এক্ষেত্রে HBsAg টেস্টের মাধ্যমে আগেই রোগ শনাক্ত করা গেলে প্রেগন্যান্সির সময়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা যায়৷ এছাড়াও, সিফিলিসের মতো STD হবু বরের শরীরে আছে কিনা জানতে বিয়ের আগে VDRL টেস্ট না করালেই নয়।
বিয়ের আগে বাধ্যতামূলক এই পরীক্ষাগুলো ছাড়াও আরও কিছু মেডিক্যাল টেস্ট করানো উচিত৷ তবে, তার দরকার কতটা আছে, সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে হবু দম্পতির শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসকের পরামর্শের উপর!
• হার্ট চেক আপ:
হাইপার টেনশন, ভালভের সমস্যা থাকলে কিংবা ছোটবেলায় রিউম্যাটিক ফিভার হলে ইসিজি ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি করিয়ে নেওয়া উচিত৷
• ডায়াবেটিস টেস্ট:
পরিবারে কারও ডায়াবেটিস থাকলে, কিংবা হবু দম্পতির মধ্যে কারও ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই ‘কাস্টিং’ এবং ‘ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স’-এর মতো টেস্টগুলি করানো আবশ্যক৷ তাতে প্রয়োজনমতো রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া যায় এবং প্রেগন্যান্সির সময়ে সন্তানের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে৷
• কিডনি বা রেনাল ফাংশন টেস্ট:
ইউরিনে ইউরিয়া এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নির্ধারণ করা একান্ত জরুরি৷ তবে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ থাকলে তবেই চিকিৎসকরা এই পরীক্ষাটি করানোর পরামর্শ দেন৷ না হলে নির্দিষ্ট বয়সে রুটিন চেক-আপ করিয়ে নিলেই চলবে!
• হরমোন লেভেল নির্ধারণ:
এখন কমবয়সি মেয়েদের মধ্যে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিমব্রম (PCOS) এবং থাইরয়েডের প্রবণতা খুবই বেশি৷ যার ফলে প্রেগন্যান্সির সময় নানান জটিলতা আসতে পারে৷ তাই চিকিৎসকের পরামর্শে বিয়ের আগে FACH, LH এবং TSH টেস্ট করানো উচিত৷
• সাইকোলজিক্যাল টেস্ট:
পরিবারে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী, স্কিৎজোফ্রেনিয়ার ইতিহাস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ‘সাইকোমেট্রি’ টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়া উচিত৷ এক্ষেত্রে টেস্টের রেজাল্ট যদি পজিটিভ আসে, তাহলে বিয়ে না করাই ভাল! সেক্ষেত্রে যেমন সংসারে সমস্যার সম্ভাবনা থেকে যায়, তেমনই পরবর্তী প্রজন্মও মানসিক ভারসাম্যহীনতার শিকার হতে পারে!
তাই ছাদনাতলায় যাওয়ার আগে বিয়ের হাজারও ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে একবার ডাক্তারবাবুকে ফোন করুন এই নম্বরে- 9874890275৷