কূটনীতির পাশাখেলা চলেছে গোটা বছর জুড়েই৷ কখনও প্রতিপক্ষ চালে বাজিমাত হয়েছে, কখনও আবার নিজের মন্ত্রী হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছে সাদাদের রাজাও৷ কি, হেঁয়ালি মনে হচ্ছে? পড়ুন বছরভর পাশার খেলার বিবরণ। ঘেঁটে দেখল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল–
বছরভর সবচেয়ে বেশি আলোচিত ইস্যু হল ডোকলাম৷ নয়াদিল্লি স্পষ্ট জানায়, ডোকলাম মালভূমিতে কোনও রকম পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ মেনে নেওয়া হবে না। কারণ ডোকালামে রাস্তা নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হলে চিন সহজেই ওই রাস্তা ব্যবহার করে ‘চিকেন নেক’-এ পৌঁছে যাবে। চিকেন নেক-এ পৌঁছে যাওয়ার অর্থ হল ভারতের ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলবে চিন। সেক্ষেত্রে বেজিং মনে করলে যে কোনও সময় সিকিমে ঢুকে আসতে পারে। যা নয়াদিল্লির কাছে আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। সে কারণেই ভারত বরাবরই ডোকলামে চিনের যে কোনও পরিকাঠামো নির্মাণের কাজের বিরোধিতা করে আসছে। জুন মাসে ডোকলামে ভারতের কাছে বাধা পেয়ে চিন সরে গিয়েছিল। পরে ফের ডোকলামে অব্যবহৃত একটি রাস্তার সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে ও ৫০০-রও বেশি লালফৌজ মোতায়েন করে। সেনাকে সতর্ক করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত৷
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ছেড়ে বেরিয়ে গেল ট্রাম্পের আমেরিকা
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে গেল আমেরিকা। নজিরবিহীন ও বিতর্কিত এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তে ধাক্কা খেলেও, এমনটাই যে হতে চলেছে তা গত কয়েকদিনে একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ট্রাম্প জানিয়েছেন যে, এখানে ভারত ও চিনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়। এই চুক্তি আমেরিকার পক্ষে প্রতিকূল। উল্লেখ্য, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে এই চুক্তি নিয়ে সহমত হয়েছিল ১৯০টিরও বেশি দেশ।
আমেরিকায় মুসলিম শরণার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করলেন ট্রাম্প:
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন বছরভর বিতর্কের মধ্যমণি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ একটি আদেশ জারি করে আমেরিকায় শরণার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তিনি৷ একই সঙ্গে সাতটি মুসলিম রাষ্ট্র থেকে আসা জনতার উপর কড়া বিধিনিষেধ জারি করে হোয়াইট হাউস৷ এই আদেশের ফলে সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের উপর অনির্দিষ্ট কালের জন্য নিশেধাজ্ঞা জারি হয়৷ পাশাপাশি সিরিয়া, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের নাগরিকদের মার্কিন ভিসা ‘ব্লক’ করা হয়৷
‘ব্রেক্সিট’-এ সমর্থন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের:
‘ব্রেক্সিট’-এর পথে আরও এক ধাপ এগোয় ব্রিটেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সংসদে যে প্রস্তাব পেশ হয়েছিল, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সেটি পাশ হয় ফেব্রুয়ারি মাসে৷ শাসক দল কনজারভেটিভ (টোরি) ও প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির বেশ কয়েকজন এমপি দলীয় হুইপ অমান্য করে প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলেও লাভ হয়নি৷ ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বেরিয়ে আসার জন্য আলোচনা শুরু করতে টেরেসা মে সরকারের আর কোনও বাধা থাকল না৷
ট্রাম্পকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ইরানের:
আমেরিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করল ইরান৷ সে দেশের রেভোলিউশনারি গার্ড বাহিনীর একটি মহড়ায় ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়ে ইরান৷ ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞাকে অগ্রাহ্য করে এই ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ইরান দেখাল, কোনও বিদেশি শক্তির কাছে তারা মাথা নত করবে না৷ সেনা দাবি করে, কোনও বিদেশি হুমকির মুখে পড়ে ইরান পিছিয়ে আসবে না৷ প্রয়োজনে যুদ্ধেও জড়াতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত তাঁরা৷
ভারতের বিরুদ্ধে অনড় অবস্থান, মাসুদ আজহারের পাশে চিন:
মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক স্তরে ‘জঙ্গি’ হিসাবে চিহ্নিত করার ভারতের উদ্যোগে বাধা হয়ে দাঁড়ায় চিন৷ বেজিংয়ের আপত্তিতেই জঙ্গিগোষ্ঠী জৈশ-ই-মহম্মদের ‘মাথা’ আজহারকে সন্ত্রাসবাদী তকমা দেওয়ার প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায় রাষ্ট্রসংঘে৷ চিন বাধা না দিলে স্বাভাবিকভাবেই আজহারকে জঙ্গি তালিকাভুক্ত করার প্রস্তাব বিনা আপত্তিতে পাস হয়ে যেত রাষ্ট্রসংঘে৷
ভারতকে প্রধান সামরিক সহযোগীর তকমা দিল আমেরিকা:
এবছর নতুন মাত্রা পায় ইন্দো-মার্কিন কুটনৈতিক সম্পর্ক৷ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার পক্ষে বরাবরই জোর দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণের সৃষ্টি করে এবছরই ভারতকে ‘মেজর ডিফেন্স পার্টনার’ বা প্রধান সামরিক সহযোগীর তকমা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ এর ফলে খুব সহজেই আমেরিকা থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তি আমদানি করতে পারবে ভারত৷ ভারতকে নিয়ে কৌশলগত ও সামরিক সম্পর্কে জোর দিয়ে বেশ কিছু রপ্তানি সংক্রান্ত আইন সংশোধন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ এই সংশোধনের ফলে, আমেরিকা থেকে অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি ও অস্ত্র আমদানি করতে পারবে ভারতীয় সংস্থাগুলি৷
পাক বন্দিদের মুক্তি দিয়ে শান্তির বার্তা ভারতের:
কুলভূষণকে নিয়ে পাকিস্তানের অমানবিক আচরণের সাক্ষী থাকার আগে, মার্চে সৌজন্য দেখায় নয়াদিল্লি৷ একসঙ্গে ৩৯ জন পাক বন্দিকে মুক্তি দিয়ে শান্তির নজির বজায় রাখে ভারত৷ ৩৯ জন বন্দির মধ্যে ২১ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামি৷ বাকি ১৮ জন বন্দি মৎস্যজীবী৷ পয়লা মার্চ তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়৷
‘মিসাইল শিল্ড’ তৈরি করে এলিট ক্লাবে প্রবেশ ভারতের:
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ইতিহাস ভারতের। ‘ব্যালিস্টিক মিসাইল শিল্ড’ তৈরি করে সামরিক ক্ষেত্রে আমেরিকা ও রাশিয়ার মত প্রথম সারির দেশগুলির সমকক্ষ জায়গায় পৌঁছে যায় ভারত। এই কৃতিত্বের জন্য ডিআরডিও এবং ইসরো বিজ্ঞানীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ এখন থেকে যে কোনও ব্যালিস্টিক মিসাইলকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করতে সক্ষম ভারত। উল্লেখ্য, ভারত ছাড়া শুধু আমেরিকা, রাশিয়া, ইজরায়েল ও চিনের কাছে এই প্রযুক্তি রয়েছে।
রামনবমীতে জেলায় জেলায় সংঘের মিছিল:
দেশ জুড়ে চলতে থাকা গেরুয়া ঝড়ের ছোঁয়া এসে লাগল এ বঙ্গেও। অভূতপূর্ব সমারোহে পালিত হয় রামনবমী। জেলায় জেলায় তো বটেই, শহর কলকাতাতেও দেখা মেলে রামনবমী উদযাপনের। সংঘ পরিবার ও রাজ্যে বিজেপির তরফে রামনবমী উদযাপনে জোর দেওয়া হয়। হাতে তরোয়াল নিয়ে, গেরুয়া নিশান উড়িয়েই ভগবান রামের জন্মতিথি উদযাপন করে সঙ্ঘ সমর্থকরা। এ নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। কেন এত ঘটা করে রামনবমী পালনের হিড়িক, এ প্রশ্ন ওঠে৷ রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য পালটা দেন, ধর্মীয় বিভাজনের প্রশ্নই নেই৷ যখন ইদ বা মহরম পালিত হয়, তখন তো বিভাজনের কথা ওঠে না। শুধু রামনবমী পালনের ক্ষেত্রেই বা এ প্রসঙ্গ উঠছে কেন? ভবানীপুর, গড়িয়াতেও যেমন দেখা গেল সভ্য সমর্থকদের মিছিল, তেমনই সিউড়িতে অস্ত্র হাতে স্কুলছাত্রীরা শামিল হন রামনবমী উদযাপনে।
সিরিয়ার বিরুদ্ধে টোমাহক মিসাইল ছুড়ল আমেরিকা:
সিরিয়ার বিরুদ্ধে মিসাইল দাগল আমেরিকা৷ সিরিয়ার বায়ুঘাঁটি লক্ষ্য করে ৫৯টি টোমাহক মিসাইল ছোড়ে পেন্টাগন৷ মিসাইল হামলার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেলে নাগরিকদের প্রতি ভাষণ দেন৷ মিসাইল লঞ্চ করার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়াকে এই কথা জানানো হয় বলে দাবি করে আমেরিকা৷ ট্রাম্প জানিয়ে দেন, সিরিয়ায় আম নাগরিকদের উপর নারকীয় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের বিরুদ্ধেই আমেরিকার এই পাল্টা আঘাত৷ প্রসঙ্গত, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশের একটি শহরের বায়ুঘাঁটি থেকে রাসায়নিক হামলায় অন্তত ২৭টি শিশুর মৃত্যু হয়৷
ইজরায়েলের সঙ্গে বড় মাপের মিসাইল চুক্তি স্বাক্ষর ভারতের:
কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে মান্ধাতা আমলের নীতি পাল্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে নয়াদিল্লি। সামরিক শক্তিতে আরও একধাপ এগিয়ে ইজরায়েলের কাছ থেকে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ভারত। ‘ইজরায়েল এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিস’ (আইএআই) জানায়, ভারতকে ‘মিডিয়াম রেঞ্জ সারফেস টু এয়ার’ (এমআরএসএম) মিসাইল সিস্টেমের অত্যাধুনিক সংস্করণ সরবরাহ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তারা। এছাড়াও ভারতের তৈরি বিমানবাহী রণতরীর জন্য দুরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও সরবরাহ করবে ‘আইএআই’। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের অন্তর্গত ভারতীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে ইজরায়েলি সংস্থা৷
৭০ বছর পর ফের সফর শুরু কলকাতা-খুলনা ট্রেনের:
৭০ বছরের পর ফের চালু হল কলকাতা-খুলনা যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা৷ জুলাই মাস থেকে কলকাতা থেকে পেট্রাপোল-বেনাপোল হয়ে খুলনা পর্যন্ত নিয়মিত যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা শুরু করে রেল৷ পাশাপাশি, চালু হয় কলকাতা-খুলনা-ঢাকা বাস পরিষেবা৷ নবান্ন থেকে বাস পরিষেবার উদ্বোধন করা হয়৷ এই পরিষেবার মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলে আশা করা হয়৷
মুগাবে জমানার অবসান, জিম্বাবোয়েতে উল্লাস:
৩৭ বছর প্রেসিডেন্ট থাকার পর ৯৩ বছরের মুগাবেকে সরতে হল সিংহাসন থেকে৷ ৫২ বছরের স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে নয়া প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিযুক্ত করার যে জোরাল প্রস্তাব সেনার কাছে রেখেছিলেন, তা পত্রপাঠ খারিজ করে সেনা জানিয়ে দেয়, যদি সসম্মানে মুগাবে সরে না যান তাহলে তাঁকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হবে তাঁরা। শুধু তাই নয়, যে কোনও শর্তেই মুগাবে সেনার হাতে তাঁর ক্ষমতা হস্তান্তর করুন না কেন, বিপুল দুর্নীতি, স্বৈরাচার চালানোর দায়ে তাঁর স্ত্রী ও বাছাই করা কয়েকজন অনুগামীকে সেনা গ্রেপ্তার করে আদালতে তুলবে বিচারের জন্য। এ ব্যাপারে কোনও আপস বা দর কষাকষি করা হবে না।
ভারতে ‘গ্লোবাল অন্তরপ্রনিওরশিপ সামিট’-এ ‘টিম আমেরিকা’-কে নেতৃত্ব দিতে হায়দরাবাদে ট্রাম্প-তনয়া ইভাঙ্কা। তাঁর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে রাস্তার দু’পাশ থেকে উচ্ছেদ করা হয় হাজার খানেক ভিখিরিকে। বিশ্বের ১৭০টি দেশের প্রায় দেড় হাজার ভাবী শিল্পপতিরা যোগ দেন। এই শীর্ষবৈঠকের এ বছরের থিম: ‘প্রথম সারিতে নারী, সমৃদ্ধি সকলের’। গুজরাটের সুরার একটি আঞ্চলিক শিল্প স্যাডেলি ক্রাফ্টের ডিজাইন করা একটি কাঠের বাক্স ইভাঙ্কাকে উপহার দেন মোদি।