Advertisement
Advertisement

Breaking News

দিনেদুপুরে ধান চুরি, ‘চোর’কে ধরলেই জেলের ঘানি টানবে গেরস্ত! মাথায় হাত চাষিদের

পাক ধান রক্ষা করাই এখন মাখাব্যথা চাষিদের।

Peacocks destroying paddy field in North Bengal, farmers in trouble | Sangbad Pratidin
Published by: Paramita Paul
  • Posted:November 15, 2023 4:27 pm
  • Updated:November 16, 2023 5:26 pm

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: সিঁধেল চোরকেও হার মানায়! দিন দুপুরে চুপিচুপি কখন এসে লোপাট করছে খেতের পাকা ধান কেউ টের পাচ্ছে না। টের পেয়েও লাভ কী! ওই চোরদের যে ধরতে মানা! জেলের ঘানি টানতে হবে দু’ঘা বসাতে গিয়ে জানাজানি হলে। কারণ, ওরা যে মানুষ নয়, জঙ্গলের ময়ূর-ময়ূরী! ঝাঁক বেধে উড়ে এসে ধানখেতে লুকিয়ে পড়ছে। এক ঘন্টায় খেয়ে সাবাড় করছে বিঘা পর বিঘা খেতের ফসল। ভীষণ চালাক ওই চোরদের দাপটে একরকম দিশাহারা দশা হয়েছে উত্তরের জঙ্গল লাগোয়া এলাকার কয়েক হাজার কৃষক পরিবারের।

ধান পেকে ফসলের মাঠ সোনালি হতে যেন বিপদ গর্জেছে। রাতে লোকালয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাতির দল। খেতের পাকা ধানে ‘ডিনার’ সেরে ভোরে জঙ্গলে ফিরে যাচ্ছে। সূর্য উঠতে আরও এক বিপদ। ঝাঁকঝাঁক ময়ূর জঙ্গল থেকে লোকালয়ে উড়ে আসতে শুরু করছে। ঝোপের আড়াল থেকে চুপিসারে ধারালো দুই ঠোঁটের মাঝে শিস পুরে নিয়ে এমন ভাবে ধান খাচ্ছে বাইরে থেকে কিছু বোঝার উপায় নেই। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে উজার হচ্ছে বিঘার পর বিঘা খেতের শস্য। ময়ূরের উপদ্রব এভাবে বেড়ে যাওয়ায় শিলিগুড়ি মহকুমার টুকুরিয়াঝাড়, বৈকুন্ঠপুর, ডুয়ার্সের গরুমারা, মোরাঘাট, জলদাপাড়া ও বক্সা জঙ্গল লাগোয়া এলাকার চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘ভুল রিপোর্টে’ই পুনরায় জেলা সভাপতি? সৌমেনকে নিয়ে আড়াআড়ি বিভক্ত পুরুলিয়া তৃণমূল]

বছরের খাবার রক্ষা করতে নিরুপায় হয়ে তাঁরা দিনেও ধান খেত পাহারা দিতে শুরু করেছেন। শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়ি, মাটিগাড়া, খড়িবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বাগডোগরা, বুড়াগঞ্জ, হাতিঘিসা, মণিরাম, কেটুগাবুরজোত, মতিধর, গিরিশচন্দ্র, মানঝা চা বাগান এলাকার বাসিন্দাদের এমনিতেই রাতের ঘুম উড়েছে। প্রতি রাতে হাতি তাড়াতে সময় চলে যায়। দিনে দু’দন্ড বিশ্রাম নেবে সেই ফুসরতও মিলছে না। ভোর হতে ময়ূর তাড়াতে ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। একই ছবি জলপাইগুড়ির রামশাই, লাটাগুড়ি, মেটেলি, নাগরাকাটা, ক্রান্তি এবং আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট, শামুকতলা, পোরো, রাজাভাত খাওয়া এলাকার।

Advertisement

জঙ্গল লাগোয়া এলাকার ফসলের মাঠে ময়ূর, শূকর, হাতির হানা নতুন কিছু নয়। ধান পাকতে প্রতি বছর ময়ূর লোকালয়ে ভিড় করে। কিন্তু এবার সংখ্যা এতটাই বেশি যে কৃষকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা জানান, এক-দুটো নয়। একসঙ্গে কয়েকশো ময়ূর উড়ে আসছে। আশপাশে কেউ না থাকলে লম্বা গলা নামিয়ে বিরাট পেখম নিয়ে ঢুকে পড়ছে খেতে। কিছুক্ষণের মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকার ধান লুঠ করে ফের ডানা মেলে পাড়ি দিচ্ছে জঙ্গলে। মোরাঘাট জঙ্গল সংলগ্ন ঝাড়আলতা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের রাভা জনজাতি অধ্যুসিত খুকলুং, মেলা, গোসাইহাট এবং গরুমারা লাগোয়া রামসাই গ্রাম পঞ্চায়েতের কালামাটি, চটুঁয়া, কালীপুর বস্তি এলাকায় ময়ূর এখন রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়েছে। খুকলুং বস্তি এলাকার রাভা সমাজের মণ্ডল গনাথ রাভা বলেন, “ভোর হতে কয়েকশো ময়ূর জঙ্গল থেকে উড়ে এসে ধান খেতে লুকিয়ে পড়ছে। ধান ছিঁড়ে খাচ্ছে। বাইরে থেকে কিছু বোঝার উপায় নেই। দুপুর হতে পালিয়ে যাচ্ছে। বিকেলের পরে আবার আসছে।” গনাথবাবুর নিজের দু’বিঘা জমির অর্ধেকের বেশি ধান ময়ূর চুরি করে পালিয়েছে। একই দশা হয়েছে অনিল রাভা, চন রাভা, ডাং রাভাদের। একই ছবি কালামাটি, চটুঁয়া, কালীপুর বস্তি এলাকায়। কালামাটি এলাকার বাসিন্দা সুনীল তিরকি বলেন, “এত ময়ূর আগে দেখিনি। মনে হচ্ছে ময়ূরের সংখ্যা বেড়েছে। ওই কারণে এবার উপদ্রব অনেক বেশি।”

[আরও পড়ুন: স্ত্রীর চোখের সামনে দুষ্কৃতীর গুলিতে খুন আদিবাসী যুবক! ব্যাপক চাঞ্চল্য করণদিঘিতে]

সত্যি কি ময়ূরের সংখ্যা বেড়েছে? ময়ূরসুমারি না হওয়ায় বন বিভাগের কর্তারা ওই বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। যদিও বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর অপূর্ব সেন বলেন, “জঙ্গলে ময়ূরের সংখ্যা বেড়েছে। সেজন্যই নজরে পড়ছে। তবে সংখ্যায় কত ময়ূর বেড়েছে সেটা সঠিক ভাবে বলা সম্ভব নয়।”এদিকে পরিস্থিতি দেখে জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি ময়ূর লোকালয়ে দেখা মিলছে। ধান না পেলে সবজি খেয়ে পালাছে। নিরুপায় হয়ে চাষি পরিবারের ছেলেমেয়েরা তাই সকাল হতে পটকা, গুলতি হাতে নিয়ে খেত পাহারায় নামছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হচ্ছে কোথায়! এক দিকে তাড়া খেয়ে অন্যদিকে ঢুকে পড়ছে ময়ূরের দল। চটুঁয়া বস্তি এলাকার বাসিন্দা বুধুনাথ ওঁরাও বলেন, “দুবেলা খেত পাহারা দিয়েও ধান রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। সামান্য ফাঁক পেলেই হল। সব খেয়ে শেষ করছে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ