Advertisement
Advertisement

Breaking News

Flat Earth theory

গোল নয়, পৃথিবী নাকি চ্যাপ্টা! বিশ্বজুড়ে কেন বাড়ছে এমন উদ্ভট চিন্তার মানুষের সংখ্যা?

‘কন্সপিরেসি থিয়োরি’র কথা শুনেছেন?

Why do some people think the Earth is flat | Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:January 1, 2021 11:00 pm
  • Updated:April 17, 2021 9:35 pm

বিশ্বদীপ দে: হিজবিজবিজকে মনে আছে? সেই ‘হযবরল’-র পাতায় যার দেখা মিলেছিল? আচমকাই অদ্ভুত সব কথা মনে পড়লে যার পেট ফেটে যেত হাসতে হাসতে। তার উদ্ভট খেয়ালে মনে হয়েছিল, ‘পৃথিবীটা (Earth) যদি চ্যাপ্টা হত, আর সব জল গড়িয়ে ডাঙায় এসে পড়ত’, তাহলে একটা কেলেঙ্কারি ব্যাপার হত বটে। তার জানা ছিল না পৃথিবীতে এমন মানুষের (Flat-Earthers ) অস্তিত্বও রয়েছে, যাঁরা ‘যদি’ নয়, সত্যিই বিশ্বাস করেন পৃথিবীটা চ্যাপ্টা! শুনতে যতই অবিশ্বাস্য মনে হোক, ‘ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি’-র (Flat Earth Society) সদস্যসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে! না, কো নো বাতিকগ্রস্ত খামখেয়ালি মানুষ নন তাঁরা। এঁদের মধ্যে অনেকেই নিজের নিজের ক্ষেত্রে রীতিমতো সফল।

তাহলে কেন? কেন এমন উদ্ভট কথা বিশ্বাস করেন তাঁরা? সেকথায় আসার আগে শুরু থেকে শুরু করা যাক। একেবারে পুরনো সময়ে পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে নানা লোকের যে নানা বিশ্বাস ছিল তা আমরা জানি। কিন্তু গ্রিক দার্শনিক এরাটোস্থেনিস খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে প্রথম প্রমাণ করেন পৃথিবী গোলাকার। তারপর ক্রমে সেই ধারণা পোক্ত হতে থাকে। যার শেষতম প্রমাণ মানুষের মহাকাশে যাত্রা। সেখান থেকে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, আমাদের এই নীল রঙের গ্রহটা গোলাকার।

Advertisement

[আরও পড়ুন: বিয়ের প্রস্তাবে বিপত্তি! পাহাড়চুড়ো থেকে নিচে পড়লেন যুবতী, বাঁচাতে লাফ প্রেমিকেরও, তারপর…]

Earth

Advertisement

কিন্তু এরই মধ্যে কীভাবে যেন একদল লোকের মধ্যে এই ধারণা গজিয়ে উঠল, নাহ। পৃথিবীটা চ্যাপ্টা। ব্রিটিশ সাহিত্যিক স্যামুয়েল রোবথাম উনিশ শতকের বেশ নামজাদা এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি দাবি করেন, পৃথিবী চ্যাপ্টা এবং এর একদন মাঝখানে রয়েছে উত্তরমেরু। অনেকেই তাঁর আজগুবি তথ্যে কান দিতে শুরু করলেও ব্যাপারটা আরও দানা বাঁধে একেবারে বিংশ শতাব্দীতে এসে। ১৯৫৬ সালে ব্রিটেনে স্থাপিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্ল্যাট আর্থ রিসার্চ সোসাইটি’। কিন্তু ঘটনা হল, এগুলো সবই ছিল বিক্ষিপ্ত ঘটনা। নতুন সহস্রাব্দে পৌঁছে ইন্টারনেটের রমরমার সময় থেকে মূলত আমেরিকায় এই নিয়ে ফের গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। আর তা ক্রমে বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালে নামটা একটু ছেঁটে নিয়ে নতুন করে ফিরে আসে ‘ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি’। শুরু হয় বার্ষিক সম্মেলন। সেই সম্মেলনে দলে দলে এসে লোকে আলোচনা করতে থাকে, কীভাবে একটা সত্যিকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে নাসার মতো সংস্থা! মিথ্যে প্রচার করে যাচ্ছে, পৃথিবী নাকি গোল!

আচ্ছা এমন নয় তো, এসবই প্রথম বিশ্বের খামোখা খেয়াল? জমিদাররা যেমন সময় কাটাতে বেড়ালের বিয়ে দিতেন এ তেমনই এক টাইম পাস? টেক্সাস টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ অ্যাশলে ল্যানড্র্যামের কথা শুনলে তা মনে হয় না। তিনি ২০১৮ সালে কলোরাডোর ডেনভারে ‘ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি’-র সম্মেলনে হাজির ছিলেন ব্যাপারটা কী তা খতিয়ে দেখতে। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা যদি স্রেফ ভরকি দিচ্ছেন বলে মনে করতে চান, তাহলে মানতে হবে ওঁরা রীতিমতো পেশাদার অভিনেতা। অন্তত ৯০ জন সদস্যের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাঁরা রীতিমতো নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের বিশ্বাসে অটল!’’

[আরও পড়ুন: সন্তানেরা দেখাশোনা করেনি, রাগে অর্ধেক সম্পত্তি পোষ্যর নামে লিখে দিলেন মধ্যপ্রদেশের কৃষক]

Mike

এই বিশ্বাসের ব্যাপারটা বুঝতে গেলে ‘পাগলা মাইক’-এর কথা বলতেই হবে। ক্যালিফোর্নিয়ার স্বঘোষিত বিজ্ঞানী মাইক হিউজকে এই নামেই ডাকত তাঁর প্রতিবেশীরা। তাঁর দাবি ছিল, নিজের তৈরি রকেটে চেপে ১৫০০ মিটার উপরে উঠতে পারলেই তিনি প্রমাণ করে দেবেন এতদিনের সব বুজরুকি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আনাড়ি হাতে বানানো সেই রকেট ভেঙে গত ফেব্রুয়ারিতে মারা গিয়েছেন তিনি। পৃথিবী চ্যাপ্টা প্রমাণ করতে গিয়ে নিজের প্রাণটাই খুইয়ে বসতে হল বেচারিকে।

সোসাইটির সম্মেলনে গেলে এমন অনেক মাইকের সঙ্গেই আলাপ হবে আপনার। প্রতিবারই বাড়ছে সম্মেলনের ভিড়। প্রথম দিকে শ’দুয়েক লোক হত। এখন তা বাড়তে বাড়তে ছশোয় পৌঁছেছে। তবে এঁরা সকলেই যে এক রকম ভাবে ব্যাপারটায় বিশ্বাস করেন তাও নয়। নানা মুনির নানা মত। কারও মতে, চ্যাপ্টা এই পৃথিবীর প্রান্ত ঘিরে রেখেছে বরফের পাঁচিল। তারাই সমুদ্রগুলিকে ধরে রেখেছে। আবার কেউ বিশ্বাস করেন, একটা অতিকায় বরফের গোলকের মধ্যে বসানো রয়েছে এই চ্যাপ্টা গ্রহটা। এঁদের বেশির ভাগই পাত্তা দেন না মাধ্যাকর্ষণকেও। তাঁদের মতে পৃথিবী ৯.৮ মিটার/সেকেন্ড বেগে নাকি পাক খাচ্ছে। সেখান থেকেই মাধ্যাকর্ষণের ‘ভ্রান্তি’ তৈরি হচ্ছে! একটু ইউটিউব ঘেঁটে দেখুন না। এমন নানা ভিডিও খুঁজে পাবেন।

Flat-earther

কিন্তু কেন? কেন বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত এক চরম সত্যকে এভাবে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চাওয়া? এঁরা কি সেই অর্থে ন্যূনতম শিক্ষাও পাননি? নাহ। ব্যাপারটা তা নয়। মনোবিদ অ্যাশলে ল্যানড্র্যামের মতে, এর সঙ্গে বিজ্ঞানমনস্কতা কিংবা বিজ্ঞান শিক্ষার কোনও যোগ নেই। তাঁর মতে, প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতার মানসিকতাই এই সব বিশ্বাসীদের শিকড়ে গেঁথে গিয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটাই ধর্মীয় গোঁড়ামির সঙ্গে তুলনীয়। ল্যানড্র্যাম চান, যে করেই হোক, এই সব মানুষগুলির ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করা দরকার। আর তা করতে হবে বিজ্ঞানী ও গবেষকদেরই। তিনি বলছেন, ‘‘বসে বসে ওদের দেখে হাসলে চলবে না। আমরা হেসে চলব আর ওরা দলভারী করতে থাকবে। ক্রমশ বাড়বে উদ্ভট বিশ্বাসীদের সংখ্যা।’’

আসলে এই ‘অন্ধ’ বিশ্বাসের কথা বলতে গেলে ‘কন্সপিরেসি থিয়োরি’-র প্রসঙ্গ আসতে বাধ্য। এই থিয়োরি কেবল চ্যাপ্টা পৃথিবী নয়, আরও নানা আজগুবি ধারণা নিয়ে ঘুরপাক খায়। সে পৃথিবী জুড়ে লুকনো এলিয়েনদের কলোনিই হোক কিংবা ৯/১১-র হামলা নিয়ে অদ্ভুত সব দাবি। সারা পৃথিবীতে বহু মানুষ এমনই নানা বিশ্বাস নিয়ে অটল। আর এই ধরনের সব বিশ্বাসের পিছনেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা এক অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়।

Flat Earth Society

‘কন্সপিরেসি থিয়োরি’ নিয়ে গবেষণা করছেন কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারেন ডগলাস। তিনি সাফ জানাচ্ছেন, ‘‘কোনও মতকে প্রতিষ্ঠা করা কিংবা অন্য কোনও কারণ নয়। এঁরা সকলেই মন থেকে বিশ্বাস করেন পৃথিবী গোলাকার নয়, চ্যাপ্টা।’’ ভাবতে গেলে মনে পড়ে যায় কেসি পালের কথা। ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে’— এই বিশ্বাসের চারদিকে পাক খেয়েই গোটা জীবন কাটিয়ে দিলেন তিনি। ‘ফ্ল্যাট আর্থার’-রা সব তাঁরই জাতভাই। বিশ্বাস আলাদা। কিন্তু বিশ্বাসের শিকড় একই রকম গভীর।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ