কোভিড কার্যত সকলেরই রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। পলিসিহোল্ডাররাও এর ব্যতিক্রম নন। এঁদের মনে যে প্রশ্ন এসে ভিড় করেছে, তা হল-এঁদের চালু পলিসিতে কোভিড কভার পাওয়া যাবে কি না। অর্থাৎ কোভিড আক্রান্ত হলে কতটা টাকা পাবেন, ক্যাশলেস বেনিফিট মিলবে কি না, প্রভৃতি। সমস্ত প্রশ্নের উত্তর রইল রাজীবলোচন ঘোষ-এর লেখায়।
বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম, ‘কোভিডের প্রেক্ষিতে হেলথ ইনসিওরেন্স’-এই বিষয়ের উপরে কিছু বলি। অনেকেই আমার প্রথম লেখাটি পড়ে এই নিয়ে আলাদাভাবে জানতে চেয়েছেন। তাই আজ এই বিষয়েই কলম ধরছি।
গত দু’মাস ধরে কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভের পর বহু পলিসিহোল্ডার বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। এঁদের বেশিরভাগই নানা ধরনের প্রশ্ন করেছেন, এবং এই সমস্ত প্রশ্নের নির্যাসই হল-তাঁদের চালু পলিসিতে কোভিড কভার পাওয়া যাবে কি না। কোভিড হলে কত টাকা-পয়সা পাওয়া যাবে, ক্যাশলেসের সুবিধা মিলবে কিনা, নার্সিং হোম যদি ইনসিওরেন্সের কথা শুনতে গোড়াতেই আপত্তি করে, তখন কী করণীয়- মানুষের মনে এই সমস্ত জিজ্ঞাসা জেগে ওঠা খুবই স্বাভাবিক।
সেক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাদের বলে রাখি যে সাধারণভাবে সব মেডিক্লেমেই আজকাল (২০২০-র পর) কোভিড কভার থাকছে, যা পেতে গেলে কিছু বিশেষ শর্ত পূরণ করতে হবে (পলিসি নেওয়ার তিরিশ দিন বাদেই লাগু হয়ে যায়) এবং বিমা কেনার সময় তা বুঝে নিতে হবে। এছাড়াও নির্দিষ্ট কিছু সাব ক্লজ থাকতে পারে (এখানে আমার আগের লেখা মনে করুন)। এর মধ্যে বেড চার্জ, ডাক্তারের ফি, অপারেশনের খরচ থাকাও সম্ভব। কোভিড চিকিৎসার কারণে অনেক সময় আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকতে হয়। তাই সেখানে সাধারণ সময়ের থেকে বেড চার্জ ও অন্য আনুষঙ্গিক খরচ বেশি। যেসব পলিসিতে কোভিডের সাবক্লজ আছে, সেখানে চিকিৎসার সময় আপনার যা খরচ হয়েছে, সেটা হাতে নাও পেতে পারেন। তাই আংশিক খরচ পূরণ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
এবার অন্য প্রসঙ্গে যাই। গত বছর যখন কোভিডের প্রাদুর্ভাব শুরু হল, তার পর থেকে স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্র বিস্তৃত হয়েছে। মানুষ এর উপকারিতা এখন বেশ বুঝেছেন, নিজের সাম-ইনসিওর্ড বাড়িয়েছেন। আমার পরিচিত অনেকেই ভাল পলিসিতে পোর্টেবিলিটির সুযোগ নিয়ে সরে গিয়েছেন। তবে এরই মধ্যে অভিজ্ঞতার ঝুলিও ভরে উঠেছে। বুঝেছি ইনসিওরেন্স কোম্পানিগুলির উপর প্রবল চাপ এসেছিল কোভিডের কারণে। একইসঙ্গে এতগুলি ক্লেমের কেস চলে এলে এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে সুখের কথা যে এই পরিস্থিতির বদল ঘটেছে, আজ ক্লেম সেটলমেন্টের সংখ্যা দেখলেই তা বোঝা যায়। হাসপাতাল, নার্সিং হোম যেন প্রথমেই ইনসিওরেন্স পলিসিকে মান্যতা দেয়, এমনটাই কাম্য। না হলে সাধারণ মানুষ ভীষণ অসুবিধায় পড়বেন।
আমার মতে মানুষ সর্বদা যথাযথ সার্ভিস, মানে সুষ্ঠু পরিষেবা, পেতে চান। কোভিডের ক্ষেত্রে এ কথা বেশি মাত্রায় প্রযোজ্য, রোগটির ক্ষতি করার ক্ষমতার কথা ভেবেই বলছি। তবে পরিস্থিতি বদলাবেই, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। ততদিন পর্যন্ত মনের জোরে এবং বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে লড়ে যেতে হবে। এবার আসি আরও একটি প্রসঙ্গে। বহু মানুষ, এঁদের মধ্যে আমার বন্ধুবান্ধবও আছেন, জানতে চাইছেন তাঁদের কত টাকার সাম ইনসিওর্ড হলে ভাল হয়।
দেখুন, আমাদের দেশে সাধারণ একটি ‘নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি’র জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার কভারেজ মোটামুটি ভাল বলেই ধরা হয়। বা ধরা হত – যদি কোভিড না থাকত। একই পরিবারে দুই বা তার বেশি সদস্যের কোভিড হয়েছে, এ তো হামেশাই দেখা যাচ্ছে। পরিবারের দু’জন একইসঙ্গে হাসপাতালে ভরতি, তাও বেশ অনেক ক্ষেত্রে হয়েছে। অতএব পাঁচ লক্ষ টাকার কভারেজ আজ আর যথেষ্ট নয় বলেই আমি মনে করি। এই মুহূর্তে এমনও পলিসি আছে, যেখানে সাম ইনসিওর্ড নিঃশেষ হয়ে গেলে আপনাআপনি ‘রিস্টোর’ হয়ে যাবে আলাদা খরচ ছাড়া। এই ব্যাপারটিও পলিসি কেনার সময়ই জেনে নিতে হবে- কোভিডের আবহাওয়ায় এটি ভীষণ জরুরি একটি বিষয়।
এ-ও মনে রাখুন যে, প্রিমিয়ামের রকমফের আছে। নেওয়ার সময় সামান্য বেশি কিছু দিলে হয়তো একটু উন্নত পলিসি আপনার হাতে থাকত। কাজেই, সোজা কথায়, প্রথমেই কার্পণ্য করবেন না। নিজে সুস্থ থাকার চেষ্টা জারি রাখুন, ইমিউনিটি বাড়ান এবং একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বিমার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে থাকুন। লেখা শেষ করার আগে এই মেসেজটাই আপনাদের দিয়ে যেতে চাই।
(লেখক বিমা বিশেষজ্ঞ)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.