১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল জন্ম হয় রানি এলিজাবেথের। যদিও সেই সময় তাঁর বাবা চতুর্থ জর্জ ব্রিটেনের সিংহাসনের দাবিদার ছিলেন না। পরবর্তীকালে রাজা অষ্টম এডয়ার্ডকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে দিয়ে জর্জকে ব্রিটেনের রাজা হিসাবে অভিষেক করা হয়। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী না হওয়া সত্বেও রাজপরিবারের সমস্ত দায়িত্ব পালন করতেন রাজকুমারী এলিজাবেথ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু আগে গ্রিসের রাজকুমার ফিলিপের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় এলিজাবেথের। গোড়ার দিকে এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি ব্রিটিশ রাজপরিবার। কিন্তু সব বাধা পেরিয়ে ১৯৪৭ সালে এলিজাবেথ-ফিলিপের চারহাত এক হয়।
১৯৫২ সালে এলিজাবেথ এবং ফিলিপ বিদেশ সফরে থাকাকালীনই মৃত্যু হয় তৎকালীন রাজা চতুর্থ জর্জের। সঙ্গে সঙ্গেই মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটেনের রানির দায়িত্ব নেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ১৯৫৩ সালে তাঁকে ব্রিটেনের রানি হিসাবে অভিষিক্ত করা হয়।
দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্বকালেই ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ক্ষমতা অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া হয়। ব্রিটেনের নানা নথিপত্রে রাজতন্ত্রের বদলে 'রাজপরিবার' কথাটি ব্যবহার করা হয়। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে রানির জনপ্রিয়তা কমেনি।
দেশের প্রতি কর্তব্য থেকে শুরু করে রাজপরিবারের শৃঙ্খলা বজায় রাখা-দক্ষ হাতে সমস্ত দায়িত্ব সামলেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেই সঙ্গে তাঁর সাজপোশাক নিয়েও চর্চা ছিল মানুষের মধ্যে। রানির বাহারি টুপিগুলি ফ্যাশনের তালিকায় বেশ গুরুত্ব পেয়েছে।
রাজসিংহাসনের পরবর্তী দাবিদার রাজকুমার চার্লসের সঙ্গে ডায়ানা স্পেনসারের বিয়ে হয় ১৯৮১ সালে। এই বিয়ের পরে একাধিক বিতর্ক তৈরি হয় রাজপরিবারের কর্মপদ্ধতি নিয়ে। চার্লস-ডায়ানার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। অবশেষে ১৯৯৭ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় যুবরানি ডায়ানার।
গ্রেট ব্রিটেনের অন্তর্ভুক্ত ওয়েলসের একটি স্কুলে ধস নেমে ১৪৪ জনের মৃত্যু হয়। তার মধ্যে ১১৬ জনই ছিল স্কুলপড়ুয়া। ১৯৬৬ সালের এই ঘটনা রানির কর্মজীবনের সবচেয়ে দুঃখের মুহূর্ত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে খুবই ভেঙে পড়েছিলেন রানি।
ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিদিন ধরে রাজত্ব করার রেকর্ড গড়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ৭০ বছর ২১৪ দিন ধরে ব্রিটেনের সর্বোচ্চ পদে আসীন ছিলেন তিনি। তাঁর আমলে মোট ১৫জনকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
২০২১ সালের ৯ এপ্রিল মৃত্যু হয় প্রিন্স ফিলিপের। দীর্ঘদিনের সঙ্গীকে হারিয়ে বেশ ভেঙে পড়েছিলেন রানি। তাঁর শারীরিক অবস্থাও খারাপ হতে থাকে। রাজপরিবারের বেশ কিছু দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি নিয়েছিলেন তিনি। রানির প্রতিনিধি হিসাবে নানা ক্ষেত্রে কর্তব্য পালন করেছেন তৎকালীন যুবরাজ প্রিন্স চার্লস।
২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর থেমে গেল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবন। রাজপরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, শান্তিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ব্রিটেনের একটি যুগের অবসান হল তাঁর মৃত্যুতে।
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.