ফের বেসুরো অযোধ্যা পাহাড়। সেন্দ্রা পরব সুষ্ঠু ভাবে মিটতেই পাহাড়ে কেমন যেন ছন্দপতন! গত লোকসভা ভোটের আগে ২০১৯ সালে অযোধ্যা পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে কুঁড়ে ঘরের দেওয়ালে যেভাবে টুরগা জল প্রকল্প নিয়ে প্রতিবাদের ভাষা ফুটে উঠেছিল। ঠিক যেন তার পুনরাবৃত্তি! তবে এবার প্রধান দাবি, গ্রামসভা, বনাধিকার আইন, সেই সঙ্গে গ্রামে স্বশাসন। আর এমন সব দাবিতেই উদ্বেগ পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন থেকে পুরুলিয়া বনবিভাগের।
সামনে পঞ্চায়েত ভোট আসায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই দাবির সঙ্গে ভোটের বিষয়টি টেনে আনা হয়েছে। অযোধ্যা পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে দেওয়াল লিখনে লেখা হয়েছে, "বনাধিকার আইন দু'হাজার ছয়, না মানলে ভোট নয়।" সেই সঙ্গে কোনও দেওয়ালে লেখা আছে, "আগে গ্রামসভা পরে ভোটসভা।" এই দেওয়াল লিখন অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসনের। সেই সঙ্গে বনদপ্তরের।
রাজ্যে পালাবদলের পর অশান্ত অযোধ্যা পাহাড় একেবারে স্বাভাবিক হয়ে গেলেও টুরগা জল প্রকল্পকে নিয়েই নতুন করে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। ২০১৯ সালের গোড়া থেকেই এই সমস্যা চলতে থাকলেও পরবর্তীকালে খানিকটা স্বাভাবিক হয়। কিন্তু ২০২১ সালের পুজোর আগে থেকে জমি দখল নিয়ে আবার সমস্যার শুরু। তবে সেই বিষয়টিতেও প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করে সবকিছু সামলে নিয়েছিল।
কিন্তু ২০২২ সালে আবার সেই পুজোর পর থেকেই বামনি ফলসকে ঘিরে অযোধ্যা পাহাড় অশান্ত হয়ে ওঠে। অযোধ্যা পাহাড়ের ওই সাইট সিয়িং বনভূমিতে থাকায় তার অধিকার ওই এলাকার মানুষজনদের হাতে তুলে দিতে হবে, এই দাবিতে সরব হন এলাকার বাসিন্দারা।
এই সমস্যা মেটাতে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সাধারণ প্রশাসন ও বনদপ্তরকে নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে খানিকটা সমাধানের রাস্তা বের করেছিল। কিন্তু আবার হঠাৎ করেই যেন তাল কাটলো অযোধ্যা পাহাড়ের!
ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল ও তাদেরই সংগঠন প্রকৃতি বাঁচাও ও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চ যৌথভাবে তিন-চারদিন ধরে অযোধ্যা পাহাড়ের গ্রামে গ্রামে বনাধিকার আইন, গ্রামসভা ও স্বায়ত্বশাসন নিয়ে নানান দেওয়াল লিখন করায় পরিস্থিতি যেন খানিকটা অন্যরকম।
ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের বাঘমুন্ডি ব্লক পারগানা তথা প্রকৃতি বাঁচাও ও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চের সভাপতি নকুল বাস্কে বলেন, "২০০৬ সালের বনাধিকার আইন সরকারকে মানতে হবে। আমাদের দাবি গ্রাম সভা। গ্রামে গ্রামে স্বশাসন চাই। এই দাবি পূরণ না হলে কোন ভোট নেই।" অর্থাৎ অযোধ্যা পাহাড় আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট বয়কটের পথে হাঁটবে! এমনই বলছেন এখানকার মানুষজন।
বনাধিকার আইনের বিষয় নিয়ে পুরুলিয়া বন বিভাগের ডিএফও কার্তিকায়েন. এম কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে যাঁকে ঘিরে এই অশান্তির সূত্রপাত, সেই বামনি ফলস নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, "ওই এলাকা বনভূমির মধ্যে রয়েছে। এটি বনদপ্তরের আওতাভুক্ত।"
সিরকাবাদ থেকে পাকদন্ডি পথে যে রাস্তা অযোধ্যা হিলটপের দিকে উঠেছে সেখানে লাহাডুংরি গ্রাম থেকেই অযোধ্যা হিলটপ পর্যন্ত কুঁড়ে ঘরের দেওয়ালে এলাকার মানুষজনদের নানা দাবি-দাওয়ার কথা ফুটে উঠেছে। দেওয়ালে-দেওয়ালে লেখা রয়েছে, বন সংরক্ষণের নামে বনাধিকার লঘু করা চলবে না। অধিকার চাই উচ্ছেদ নয়। গ্রামসভা চাই গ্রামসংসদ নয়।
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.