বাংলার লোকশিল্প, লোক উৎসবের সঙ্গে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী শ্রেষ্ঠ উৎসবের সুর আবহমান কাল থেকে যেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আর এই লোক উৎসবের সঙ্গে জড়িত যে সব মানুষ সমাজের আলোর আড়ালে রয়ে যান, এবার তাঁদের জীবনযাপন পরব আর টিকে থাকার অদম্য লড়াইয়ের কাহিনিই শোনাবে তেলেঙ্গাবাগান।
উত্তর কলকাতার উল্টোডাঙা এলাকার অতি জনপ্রিয় এই পুজো এবার সেজে উঠছে শিল্পী গোপাল পোদ্দারের হাত ধরে। দুর্গাপুজোর সঙ্গে যেখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে বাংলার এক অতি পরিচিত লোক উৎসব টুসু।
টুসু শুধু গান নয়, পুরুলিয়ার বাসিন্দা একমাস ধরে মেতে ওঠে এই পরবে। ধুমধাম করে হয় পুজো এবং শেষদিনে শোভাযাত্রা। রঙিন এই উৎসবের কথা শুনে থাকলেও হয়তো অনেকেই তা প্রত্যক্ষ করেননি। এবার তেলেঙ্গাবাগানের মণ্ডপে এলে সেই টুসু পরব ও তার আচারকে পরতে পরতে অনুভব করা যাবে।
দুর্গাপুজোর সঙ্গে টুসুর প্রকৃতিগত সাদৃশ্য বলতে টুসু যেন মা দুর্গার মতোই রাঢ় বাংলার ঘরের মেয়ে, যার বিসর্জনের সময় সম্মিলিত কণ্ঠে গানে তৈরি হয় বিষাদের আবহ। এই পরবে রঙিন কাগজের আর হাজার হাজার চৌদল ভিড় করে পৌষ সংক্রান্তির কংসাবতী ও সুবর্ণরেখার তীরে। এবার সেই চৌদলেই রঙিন হবে তেলেঙ্গাবাগান।
তবে শুধুই সীমান্ত বাংলার টুসু ব্রত রাখা সেই মেয়েদের দুঃখ দুর্দশা নয়, কলকাতার মাঝে থাকা, পেশায় ঠোঙাওয়ালি নামে পরিচিত প্রান্তিক শ্রমজীবী মায়েদের কথাও তুলে ধরা হবে এই মণ্ডপে। যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে কোনও পরিবারের চিকিৎসার খরচ তো কোনও মেয়ের শিক্ষা।
শহর ও গ্রামের দুই প্রান্তে লড়তে থাকা এই মেয়েদের অদম্য জেদ ও স্বপ্ন উড়ানের তাগিদের মেলবন্ধনেই মূর্ত হবে দেবীপ্রতিমর মৃন্ময়ী রূপ। ভাস্কর প্রদীপ রুদ্র পালের হাতে রূপ পাচ্ছে মাতৃপ্রতিমা। প্রান্তজনের আত্মকথনের সাক্ষী থাকতে পুজোয় আপনার গন্তব্য হোক তেলেঙ্গাবাগান।
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.