Advertisement
Advertisement

Breaking News

শিকাগোয় দুর্গাপুজো

প্রবাসেই বাঙালির সেরা উৎসব উদযাপন, সূবর্ণ জয়ন্তীর দোরগোড়ায় শিকাগোর পুজো

বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অফ গ্রেটার শিকাগোর পুজো আগামী বছর ৫০এ পা দেবে।

Bengali Association of Greater Chicago Durga Puja turns 50 year old
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:October 7, 2019 9:01 am
  • Updated:October 7, 2019 9:01 am

যেখানেই বাঙালি, সেখানেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। তাই প্রবাসের দুর্গাপুজোও কম আকর্ষণীয় হয় না। দেখতে দেখতে এবছর আমেরিকার শিকাগো শহরের বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুজো হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলল। প্রবাসে বসে বাঙালিয়ানার এই উদযাপন নিয়ে সংবাদ প্রতিদিনের জন্য কলম ধরলেন স্বর্ভানু স্যান্যাল।

দু’খানা সুটকেস নিয়ে বাঙালি যখন প্রবাসে পাড়ি জমায়, সঙ্গে থাকে আরও দুটো করে অদৃশ্য ঢাউস বস্তা ভরতি বাংলা ভাষা, গান, বাংলা সিনেমা, গল্প-কবিতা-উপন্যাস আর বাঙালিয়ানা। বিদেশ বিভুঁইয়ে বয়ে নিয়ে আসে গলি ক্রিকেট, রসগোল্লা, উত্তম-সুচিত্রা, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল, ঠাকুর দালান, তুলসী মঞ্চ, ঢাকের বাদ্যি আর ডাকের সাজে মা দুর্গাকে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: অষ্টমীর মুখার্জি বাড়িতে চাঁদের হাট, রানি-কাজলের আমন্ত্রণে হাজির সস্ত্রীক অমিতাভ]

ঠিক এই ভাবাবেগেই শিকাগোর বঙ্গবাসীরা দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন ১৯৭০ সালে। এবার তার ৪৯তম বর্ষ। অর্থাৎ শুরু হল শিকাগোয় প্রবাসীদের পুজোর অর্ধশত বর্ষ উদযাপন। সত্তরের দশকে শিকাগোয় ছিল গুটিকতক বাঙালি পরিবার। সুব্রত মুখোপাধ্যায়, গিরিন রায়, সুপ্রিয় রায়, পবিত্র সরকার এবং আরও অনেক ছিন্নমূল বাঙালি মিলে প্রথমে দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়। তার দু-এক বছরের মধ্যে প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে নিজের হাতেই দুর্গামূর্তি বানান পুজোর প্রধান কর্তা সুব্রত মুখোপাধ্যায়।  
প্রায় অর্ধশতক পরে এখন বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার শিকাগোর (বিএজিসি) দুর্গাপুজোয় অতিথি অভ্যাগতর সংখ্যা যখন হাজার তিন ছাড়িয়ে গেছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জাঁকজমকও। এবারের পুজো কমিটিতে রয়েছেন তিরিশের ওপর শিকাগোবাসী। পুজোর দিনগুলিতে স্বেচ্ছাসেবক থাকছেন শতাধিক বঙ্গসন্তান। সিনিয়র বিশ্বজিৎদার নেতৃত্বে, প্রধান কর্মকর্তা ঐন্দ্রিলাদি, পিনাকিদা, সৌরভদা, দেবাশিসদা, মহুয়াদির বছরব্যাপী নিরলস পরিশ্রমে এবং কালচারাল, ফেসিলিটিস, ফুড কমিটি, রেজিস্ট্রেশন, পুজো, নিউজলেটার প্রভৃতি কমিটির অনন্য সহযোগিতায় বিএজিসি-র মায়ের আরাধনা এবার অন্য মাত্রা পেয়েছে।
গোটা পুজোটাই হচ্ছে রেনেসাঁ কনভেনশন সেন্টার নামের এক বিরাট হোটেলে। শুক্রবার থেকেই হোটেলে চেক ইন করে গিয়েছেন হাজারের ওপর অতিথি। পুজোর বাজেট প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার। পুরোহিত সৌমেনদা মানবমনের ওপর ধ্যান, জপ, মন্ত্র এবং যোগের উপকারিতা নিয়ে ক্লাস নেন বেশ কিছু আমেরিকান সংগঠনের হয়ে। খুব নিষ্ঠাভরে তিনি পুজো করছেন। কুমোরটুলি থেকে ফাইবার গ্লাসের তৈরি মায়ের বিরাট মূর্তির বোধন হয়েছে সাড়ম্বরেই। শিকাগোর মেয়র পুজোর উদ্বোধন করেছেন।
পুজোয় থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয়রা মঞ্চস্থ করছেন বুদ্ধদেব বসু রচিত নাটক ‘সত্যসন্ধ’। কচিকাঁচারা অভিনয় করবে সুকুমার রায়ের ‘হ-য-ব-র-ল’। স্কুল পড়ুয়া বঙ্গসন্তানদের নৃত্যানুষ্ঠান ‘রংমশাল’। থাকছে ভয়েস অব শিকাগো সঙ্গীত প্রতিযোগিতা। বিএজিসি-র পুজোয় শিকাগোবাসীদের মনোরঞ্জন করতে ভারত থেকে এসেছেন হরিহরণ, কে কে। থাকছে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর নৃত্য পরিবেশনা। এবারের প্রধান আকর্ষণ ঋতুপর্ণার সঙ্গে সিঁদুরখেলা। প্রকাশিত হয়েছে স্থানীয় লেখক আর কলকাতার প্রতিষ্ঠিত লেখকদের মননসম্ভার নিয়ে সম্পাদিত শারদ পত্রিকা ‘সমাজ সংবাদ’।
স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত শিকাগোয় যাতে কলকাতার পুজো বেশি মিস না করি তার জন্য থাকছে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অভিষেক রায়ের উচ্চাকাঙ্খী প্রোজেক্ট, একটা চল্লিশ ফুটের কলকাতার চালচিত্র যাতে বাংলা সিনেমা, গান, কলকাতা স্ল্যাংস থেকে শুরু করে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ট্রাম ইত্যাদি। গোটা কলকাতার রোজনামচাকে রং তুলিতে ধরেছেন অভিষেক।        
পুজোর উইকএন্ডে এখানে হাঁড়ি চড়বে না কারও বাড়িতে। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, আফটারনুন স্ন্যাক্স, ডিনার, এমন কি মিডনাইট স্ন্যাক্সের ব্যবস্থা করেছে এবারের ফুড কমিটি। পুজোমণ্ডপে থাকছে আনলিমিটেড ফুড বাফে ‘যত চাই তত খাই’। এখানে থাকছে রসনা তৃপ্তির নানা পদ, খিচুড়ি, লাবড়া, কলকাতার বিরিয়ানি, মাটন রেজালা, রেশমি কাবাব, বাটার মশালা, রুই মাছের কালিয়া, তন্দুরি চিকেন, ডাল, ভেটকি পাতুরি আরও অনেক কিছু। স্ন্যাক্সে থাকছে ঘুগনি, সিঙাড়া, চিকেন চাপ, ফুচকা, চাট, পেঁয়াজি, ঝালমুড়ি আরও যা যা জাঙ্ক ফুড বাঙালি জিভে জল আনে। সঙ্গে থাকছে চমচম, মিষ্টি দই, রসগোল্লা, আঙ্গুরি রাবড়ি, পায়েস ইত্যাদি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: রাজপাট নেই, পঞ্চকোট রাজপরিবারে পঞ্চব্যঞ্জনের রীতি অটুট]

ভারতের অন্য প্রদেশের প্রবাসীরাও শয়ে শয়ে হাজির হয়েছেন। উৎসবে যোগ দিয়েছেন শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ অসংখ্য মার্কিন নাগরিকও। ভিন্ন সংস্কৃতি আর নানা জীবনধারার মেলবন্ধন এবার আমাদের পুজোয়। কবিগুরুর অনুপ্রেরণায় বলা যেতে পারে, দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে/ যাবে না ফিরে।/ এই শিকাগোর মহামানবের সাগরতীরে। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ