Advertisement
Advertisement

স্বপ্নাদেশ পেয়ে ২৫০ বছর আগে শুরু গোবরডাঙা রাজবাড়ির পুজো

মুখোপাধ্যায় বাড়িতে আগে মায়ের প্রতিমা গড়ছেন মহিলা শিল্পী।

Interesting fact about Gobardanga Rajbari Puja

গোবরডাঙা রাজবাড়িতে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ।

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:October 8, 2018 5:12 pm
  • Updated:October 8, 2018 5:12 pm

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির Sangbadpratidin.in৷ আজ রইল গোবরডাঙা রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর কথা।

সোমনাথ পাল, বনগাঁ: মায়ের পুজো শুরু করলেই কোল আলো করে আসবে পুত্র সন্তান। বংশের প্রদীপ। স্বপ্নাদেশে দেবীর এই বার্তা পেয়েই গোবরডাঙা রাজবাড়িতে শুরু দুর্গা আরাধনা। তৎকালীন জমিদার খেলারাম মুখোপাধ্যায় নিঃসন্তান ছিলেন। এতবড় বংশ, এত সম্পত্তি তিনি চলে যাওয়ার পর কে দেখবে জানতেন না। তাঁকেই একদিন স্বপ্নে দেখা দিলেন মা, জানালেন যমুনা নদীতেই আছে আরাধ্যদেবী। এরপর স্বপ্নাদেশ মেনে নদীতে ডুব দিয়ে বড়সড় কষ্ঠিপাথর খুঁজে পান খেলারাম। সেই পাথর কেটেই দেওয়া হয় মূর্তির আকার। প্রসন্নময়ী কালীমাতার মন্দির নির্মাণ হয়ে রাজবাড়িতে। সেই ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রসন্নময়ী মা রাজবাড়ির বংশধরদের পুজো পাচ্ছেন। এখনও মা প্রসন্নময়ী পুজো দেওয়ার পরেই দুর্গার আরাধনা শুরু। দেখতে দেখতে ২৫০টি বছর পেরিয়ে গেল গোবরডাঙা রাজবাড়িতে বচ্ছরকার কয়েকটি দিনের জন্য উমা আসেন সপরিবারে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাজবাড়ির সদস্যরাও মায়ের টানে বাড়িতে ফেরেন হইহই করে কেটে যায় কয়েকটা দিন।

Advertisement

প্রতিবছর জন্মাষ্টমীতেই রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে মায়ের কাঠামোতে মাটি পড়ে। আজ মহালয়া আগামী কাল প্রসন্নময়ী মায়ের মন্দিরে ঘট পেতে পুজোর পরই শুরু হবে দেবীর বোধন। ঠাকুরদালানে মায়ের প্রতিমা প্রতিষ্ঠা হয় ষষ্ঠীতে। তবে এবারে একটু আলাদা হয়েছে, ঠাকুরদালানে কালের নিয়মে প্রাচীনত্বের ছাপ পড়েছে। বেশ কয়েক জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় সংস্কারের কাজ চলছে। তাই উঠোনেই প্রতিমা গড়লেন মহিলা শিল্পী। যাইহোক নিয়মে কোনও ব্যাঘাত ঘটছে না। দেবীপক্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই রাজবাড়িতে উপচে পড়বে ভিড়।

Advertisement

[ঘটের বদলে মূর্তি গড়ে দুর্গা আরাধনায় মাতে মহিষাদলের রায়বাড়ি]

সপ্তমীতে কালীমন্দির থেকে কলাবউ নিয়ে এসে মায়ের অস্ত্র দান করে শুরু হয় সন্ধ্যা আরতি। অষ্টমী, নবমী, দশমীতে নিয়ম করে শাস্ত্রমতে পুজো হয়। শোনা যায়, এই পুজো উপলক্ষে সেকালে মোষ বলির প্রচলন ছিল। পরে তা পাঁঠা বলিতে রূপান্তরিত হলেও ৯৭ সালে বলিপ্রথা নিয়ম করে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে চাল কুমড়ো ও আখ বলি দিয়ে নিয়মরক্ষা করা হয়। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতেই দেওয়া হয় আঁখ বলি।

কথিত আছে মুখোপাধ্যায়দের পূর্বপুরুষরা পুজোর সূচনা করেছিলেন যশোরে। বংশের আদিপুরুষ রামরাম মুখোপাধ্যায় উমার আরাধনা শুরু করেন যশোরের সারশা এলাকায়। পরে তাঁর বংশধররা গোবরডাঙায় চলে আসেন। পুত্র শ্যামরাম মুখোপাধ্যায় গোবরডাঙার ইছাপুরে চৌধুরিবাড়ির জামাই ছিলেন। শ্যামরামের পুত্রই হলেন খেলারাম মুখোপাধ্যায়। তিনিই মাতুলালয়ে পুজো শুরু করেন। সেই সময় ইংরেজ শাসনকাল। ২৪ পরগনার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন হিঙ্কল সাহেব। সাহেবের কাজের তদারকি করতেন খেলারাম। তাতে খুশি মাতুলালয়ের বেশকিছু জমি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ওই ইংরেজ সাহেব। সেখানেই তৈরি হয় রাজবাড়ি। সেসব এখন ইতিহাস। ইতিহাস হয়েছে কামান দেগে সন্ধিপুজোর ঘোষণাও। তবে রাজবাড়ি থেকে গিয়েছে রাজবাড়িতেই। নিয়ম মেনে পুজো হয়। উমার আগমনে গোবরডাঙা রাজবাড়িও লোক সমারোহে গমগম করে।

[অত্যাচারী ইংরেজদের লুকিয়ে বিপ্লবীদের কার্যকলাপ চালু রাখতেই এই পুজোর শুরু]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ