Advertisement
Advertisement

Breaking News

মহাসপ্তমীতে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির লক্ষ্মীকে বসানো হয় দেবী দুর্গার বেদিতে

মোহনবাগানের ভক্ত, তাই নিরঞ্জনের সময় প্রতিমার পিছনে থাকে সবুজ মেরুন কাপড়।

Kolkata: This puja has an interesting story

ছবিতে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির প্রতিমা।

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:October 15, 2018 2:26 pm
  • Updated:October 15, 2018 2:26 pm

সেই কবেকার কথা। আজও একইরকম ঐতিহ্য বহন করে চলেছে বনেদি বাড়ির পুজো। কত নাজানা ইতিহাস কথা বলে পুজোর দালানে। কলকাতা, শহরতলি ও জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে এমন বহু পুজো। ছত্রধর সহযোগে নবপত্রিকা স্নানে যাওয়ার রীতি এখনও পালন করে চলেছে যে বাড়ি তার গল্প আজ।

শুভঙ্কর বসু:  রাজরাজেশ্বরীর দেবীদুর্গার সঙ্গে এখানে একই আসনে পূজিতা হন ঘরের লক্ষ্মীও! দেবী দুর্গাকে বেদিতে স্থাপনের আগে পাতা হয় লক্ষ্মীর আসন। খিদিরপুর হেমচন্দ্র স্ট্রিটের বীরেন্দ্রধামে প্রথম ‘রাজরাজেশ্বরী’ মা দুর্গার পুজো শুরু করেছিলেন  বীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। আজও একই নিষ্ঠায় রাজরাজেশ্বরীর বন্দনায় ব্রতী হন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা। আরেকটি মিথ প্রচলিত রয়েছে এবাড়িতে। বীরেন্দ্রনাথ ছিলেন মোহনবাগানের অন্ধ ভক্ত। পুজোতেও তিনি রেখে গিয়েছেন মোহনবাগানি ছাপ। রীতি অনুযায়ী বিজয়া দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় প্রতিমার পিছনের অংশ ঢেকে দেওয়া হয় সবুজ-মেরুন কাপড়ে।

Advertisement

[এবার পুজোয় আপনিও দুর্গা কিংবা অসুর, জানেন কীভাবে?]

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে বন্দ্যোপাধ্যায়দের পুজো হয়।  জন্মাষ্টমীর দিন থেকেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে। ওই দিন হয় কাঠামো পুজো। প্রতিমা নির্মাণের পর মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজোর উপাচার। মহাষষ্ঠী নয় এবাড়িতে দেবীর বোধন হয় মহাপঞ্চমীর দিন। মহাষষ্ঠীর দিন চলে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস।

Advertisement

এরপর মহাসপ্তমীর দিন সেই বিশেষ উপাচারের পালা। প্রথমে বাড়ির লক্ষ্মীকে দুর্গামায়ের বেদির পাশে স্থাপন করা হয়। এরপর নিষ্ঠাভরে বলির খাঁড়াগুলি রাখা হয় দুর্গামণ্ডপে। এরপর শোভাযাত্রা করে নবপত্রিকা স্নানে যান বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা। এই পরিবারের নবপত্রিকা স্নান দেখার মতো। ১৯৩৮-এ পুজো শুরুর সময় ছত্রধর সহযোগে নবপত্রিকা স্নানে যাওয়ার রীতি চালু করেন বীরেন্দ্রনাথ। সেই প্রথা আজও বজায় রয়েছে। এই রীতি পালনের সময় পরিবারের সকল সদস্যের  উপস্থিত বাধ্যতামূলক।

[এই বাড়িতে মা দুর্গা খেয়ে ফেলেন পুরোহিতের কিশোরী কন্যাকে, কেন জানেন?]

মহাষ্টমীর দিন এবাড়ির পুজোর আরেক আকর্ষণ হল কুমারী পুজো। কুমারী দেবী দুর্গার পার্থিব প্রতিনিধি। সব নারীর মধ্যেই আছে দেবী দুর্গার শক্তি। তাই নারী পূজনীয়-এই দৃষ্টিকোণ থেকে কোনও কুমারীকে দেবীর আসনে বসিয়ে কুমারী পুজো করা হয়। এ যেন কুমারীরূপে বিশ্বের নারীশক্তি, বিশ্বমাতৃশক্তির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন। আবার বলা যায়, কুমারী কথার সাধারণ অর্থ কন্যা। দেবীপুরাণ মতে, কুমারী দেবীরই প্রতীক। কুমারী পুজোর উৎস সন্ধান করতে গিয়ে বৃহদ্ধর্মপুরাণে উল্লেখ পাওয়া যায়, দেবতাদের স্তবে প্রসন্ন হয়ে দেবী চণ্ডিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে দেখা দিয়েছিলেন। দেবীপুরাণে বিস্তারিত এ বিষয়ে উল্লেখ আছে। তবে অনেকে মনে করেন যে,  দুর্গাপুজোয় কুমারীপুজো সংযুক্ত হয়েছে তান্ত্রিক সাধনামতে। মতবাদ যাইই হোক নারী বা বিশ্বমাতৃ শক্তিকে অর্ঘ্য নিবেদনের জন্যই কুমারীকে পুজো করা হয়।

মহানবমীর দিন বলি প্রথা আজও অক্ষত রয়েছে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে। এক সময় দেবীর অর্ঘ্য নিবেদনে ছাগ বলি দেওয়া হত। এখন আর ছাগ বলি দেওয়া হয় না।  চালকুমড়ো আর আখ বলি দিয়েই দেবীকে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয়। তারপর হয় ধুনুচি নাচ। বিজয়া দশমীর দিন শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। তারপর সিদ্ধি পান ও দধিকর্মা বিতরণ। এবাড়িতে পুজোর চারদিন প্রত্যহ নিমন্ত্রিত থাকেন প্রায় ২৫০ জন। প্রতিমা নিরঞ্জনের পর প্রথা অনুযায়ী বেল পাতায় লেখা হয় ‘শ্রী দুর্গা সহায়’।

[পঞ্চমীতে এই বাড়ির দেবীকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়, জানেন কেন?]

না, কোনও স্বপ্নাদেশের ফলে এই পুজো শুরু হয়নি। বরং পরিবারের সকলকে একত্রিত করতেই এই পুজো চালু করেন বীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নিয়ম আজও বজায় রয়েছে। এবাড়িতে রীতি একটাই, পুজোর সময় বাইরে থাকা চলবে না। পরিবারের যে যেখানে থাকুন না কেন পুজোর চারটে দিন ফিরতেই হবে বাড়িতে।

১৯৩৮ সালে পুজো শুরু করেছিলেন বীরেন্দ্রনাথ। এর পরের চার বছর একই নিষ্ঠায় পুজো চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৪২-এ তাঁর আকস্মিক মৃতু্যর পর কোনও কারণে পুজো বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পুজো বন্ধ থাকার পর ১৯৮৫ সাল থেকে আবার পুজো শুরু করে বীরেন্দ্রনাথের পরবর্তী প্রজন্ম। মূলত বীরেন্দ্রনাথের নাতি তিমিরবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই ফের পুজো চালু হয়। বিশিষ্ট আইনজীবী তিমিরবরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তিনবার তিনি স্কাউটস পুরস্কারও পেয়েছেন। বীরেন্দ্রনাথের মতো তিমিরবরণেরও এই উদ্দেশ্য ছিল, পুজো চালু করে পরিবারের সকলকে একত্রিত করা। সেই উদ্দেশে তিনি সফল হয়েছেন। জানাচ্ছিলেন পরিবারের এপ্রজন্মের সদস্যরা। ১৯৮৫-র পর থেকে আর পুজো বন্ধ হয়নি। যথাসম্ভব আভিজাত্য ও নিষ্ঠায় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে আজও পূজিতা হন ‘মা রাজরাজেশ্বরী’।

[রাত পোহালেই আদিবাসী রীতিতে শুরু কুলটির আশ্রমের দুর্গাপুজো]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ