Advertisement
Advertisement

বর্ধমান রাজবাড়িতে পটেশ্বরী রূপে পূজিতা হন দেবী দুর্গা

রাজত্ব না থাকলেও ধুমধামের সঙ্গেই দুর্গাপুজোয় মাতেন রাজবাড়ির বাসিন্দারা।

This Durga Puja in Burdwan is special in this way

ছবিতে বর্ধমান রাজবাড়ির পটেশ্বরী দুর্গা, ছবি : মুকুলেসুর রহমান।

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:October 12, 2018 6:07 pm
  • Updated:October 12, 2018 6:07 pm

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ রইল      বর্ধমান রাজবাড়ির পটেশ্বরী  দুর্গাপুজোর কথা।

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: শারদোৎসবের একমাস আগেই কিনে আনা হত এক বস্তা সুপারি। তার পর একমাস ধরে চলত সুপারি বলি দেওয়ার অনুশীলন। হাত পাকলে তবেই দেবীর কাছে সুপারি বলিদান দেওয়ার অনুমতি পাওয়া যেত। বর্ধমান রাজবাড়ির পটেশ্বরীর আরাধনায় এটাই ছিল রীতি। কিন্তু ইতিহাসের নিয়মে অনেক কিছুরই বদল হয়। রাজবাড়িতে দেবীর আরাধনা হলেও সুপারি বলির প্রথা এখন বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। ইতিহাসের নিয়মে যেমন রাজ আমলেরও বিলুপ্তি ঘটেছে। পুজোর কয়েকদিন জলসাও হত একসময়। এখনও তা অতীত। অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও কালের নিয়মে আরও কিছু সংযোজিতও হয়েছে এখানে। অবাঙালিদের হাত ধরে পটেশ্বরীর আরাধনায় ডান্ডিয়া নৃত্য এখন রাজবাড়ির পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। গুজরাটি সম্প্রদায়ের মানুষজন বর্তমানে পটেশ্বরী পুজোয় খুঁজে নিয়েছেন নবরাত্রি উৎসবকে। বিয়োজন-সংযোজন ঘটলেও আগের মতোই রাজ পরিবার এখনও এই উৎসবের পৃষ্ঠপোষক। পটেশ্বরীর আরাধনায় বর্ধমান রাজ পরিবারের বর্তমান ‘রাজকুমার’ প্রণয়চাঁদ মহতাব ও তাঁর সহধর্মিনী নন্দিনীদেবী নিয়ম করে  প্রতিবছর পুজোর সময় বর্ধমানে উপস্থিত থাকেন। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় এখনও বর্ধমান শহরে পটেশ্বরীর আরাধনা হয়।

Advertisement

বর্ধমান শহরের আনাচাকানাচে ইতিহাসে ছড়িয়ে রয়েছে। খ্রীষ্টপূর্বাব্দের পাঁচ হাজার বছর আগের ইতিহাস রয়েছে বর্ধমানের। শহরের নামের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে ২৪ তম জৈন তীর্থঙ্কর বর্ধমানের নাম। শেরশাহ, মোঘল সম্রাটদের ইতিহাসের নিদর্শনও রয়েছে শহরজুড়ে। সর্বশেষ রাজ আমলও দেখেছে শহর। শহরের যেদিকেই তাকানো হোক কোনও না কোনও রাজকাহিনী ভেসে উঠবে। চারদিক থেকে দৃশ্যমান অঞ্জুমান ক্লক,  বিজয়তোরণ,  রাজমহল, রাজাদের অবসরযাপন-বিনোদনের গোলাপবাগ, কেন্দ্র দারুলবাহার। স্থাপত্য-ভাস্কর্যের নিদর্শন। রাজবাড়িও ইতিহাসের অনেক সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে। নামে রাজবাড়ি হলেও এখন সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, উপাচার্যর আবাসন, সংগ্রহশালা, সরকারি দপ্তর হয়ে গিয়েছে। বর্ধমান রাজাদের দানে রাজাদের অনেকগুলি ভবন-বাগান শহরের বহু কলেজ, হাসপাতাল,  শিক্ষাকেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্র রূপে বর্তমান শহরবাসীর সেবায় থেকে গিয়েছে।

Advertisement

[এবার পুজোয় আপনিও দুর্গা কিংবা অসুর, জানেন কীভাবে?]

হিন্দু রাজা, তাও আবার বর্ধমানের মত প্রাচীন শহরের। শুধুমাত্র রাজ্য শাসনই নয়, বর্ধমানের রাজারা শহরের শিল্প-স্থাপত্যর বহু নিদর্শন গড়ে তোলেন। প্রচুর মন্দিরও গড়ে ওঠে বর্ধমান রাজাদের আমলে। শহরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলা মন্দিরও তাঁদেরই প্রতিষ্ঠা করা। একসময় এই মন্দিরে অষ্টমীতে কামান দাগা হত। সেই তোপধ্বনি শুনে শহর ও সংলগ্ন এলাকায় অষ্টমীর সন্ধিপুজো হত। এখন অবশ্য তোপ দাগা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দুর্ঘটনার কারণে। কিন্তু সর্বমঙ্গলা মন্দির রাজবাড়ির মধ্যে ছিল না। রাজ পরিবারের পুজো বলতে পটেশ্বরীর পুজোকেই বোঝায়। মহারানি বিষ্ণুকুমারী ১৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে রাজবাড়ির অন্দরে লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে শামিল হতে সেখানেই দুর্গার আরাধনা শুরু করা হয়।

তবে এখানে দেবীর কোনও মূর্তিতে পুজো হয় না। দুর্গা এখানে পটেশ্বরী রূপে পূজিতা হন। পটচিত্রে অসুর নিধনকারী দুর্গা প্রতিমা। সঙ্গে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক ও সরস্বতীও থাকেন। পটে আঁকা, তাই রাজবাড়ির দুর্গা পটেশ্বরী পুজো হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমান পুরোহিত অসিত ভট্টাচার্য, উত্তম মিশ্ররা জানান, এখন রাজ আমল না হলেও পটেশ্বরীর আরাধনায় জাঁকজমকে কোনও খামতি থাকে না। রাজবাড়ির পুরনো রীতিতেই এখানে পুজো হয়। অষ্টমীতে সুপারি বলির রীতি অবশ্য এখন আর হয় না। তবে নবমীতে কুমারী পুজোর রীতি প্রচলিত রয়েছে।

[৭১ ফুটের দুর্গা প্রতিমা! চমক দিতে প্রস্তুত এই পুজো কমিটি]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ