Advertisement
Advertisement

৬০৬ বছর ধরে মা দুর্গার আরাধনায় ব্রাত্য এই রাজবাড়ির মহিলারা

সশস্ত্র রাজপ্রহরীর তত্ত্বাবধানে পদ্মদিঘিতে ঘট-নিরঞ্জন।

Women prohibited from taking part in Durga Puja at Ghatal

ছবিতে অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তি, ছবি: সুকান্ত চক্রবর্তী

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:September 24, 2018 1:54 pm
  • Updated:September 26, 2018 7:26 pm

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির Sangbadpratidin.in৷ আজ রইল ঘাটালের নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর কথা।

শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল:  মায়ের পুজোয় মেয়েরাই ব্রাত্য! মায়ের প্রসাদ প্রাপ্তি তো দূরের কথা, বেলপাতা টুকুও ছোঁয়ার অধিকার নেই  নাড়াজোল রাজবাড়ির মহিলাদের৷ সম্পূর্ণ মহিলা বর্জিত এই রাজবাড়ির পুজো৷ বরাবর এই পুজোয় পুরুষদেরই আধিপত্য৷ ৬০৫ বছর ধরে এই রীতির কোনও হেরফের হয়নি৷ এবার ৬০৬ বছরে পড়ল ঘাটালের নাড়াজোল রাজবাড়ির পুজো৷ মনে ক্ষোভ বিস্তর৷ কিন্তু চিরাচরিত রীতি ভাঙার সাহস দেখাননি  রাজ পরিবারের মহিলারা৷ সত্যি কথা বলতে, এই রাজবাড়িতে দুর্গা প্রতিমা তৈরিই হয় না৷ স্থায়ী অষ্টধাতুর মূর্তিতেই পূজো হয়। তবে  আগেকার সেই জৌলুস আর নেই৷ কোনওমতে পুজোে চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্যরা।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে নাড়াজোল রাজবাড়ির পুজোর ইতিহাস বেশ আকর্ষণীয়৷ মায়ের আদেশেই নাকি পুজোর প্রচলন৷ স্বয়ং মা দুর্গা মা অষ্টধাতুর মূর্তি ধারণ করে রাজা উদয়নারায়ণ ঘোষকে দেখা দিয়েছিলেন৷ সেই মূর্তিতেই আজও মা পূজিত হন৷ সে কাহিনিও বেশ চমৎকার৷ রাজপরিবারের নথি ঘেঁটে জানা গিয়েছে,  বাংলার ৮২০ সালে বর্ধমান রাজার নায়েব  উদয়নারায়ণ ঘোষ দাসপুরে শিকারে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর পারিষদবর্গ। জঙ্গলঘেরা নাড়াজোল এলাকায় মন্ত্রীমশাই দেখেন,  একটি বক তাড়া করছে বাজপাখিকে৷ এমন অভিনব দৃশ্য দেখে থমকে গিয়েছিলেন নায়েবমশাই৷ বাড়ি ফিরে সেই রাতেই উদয়নারায়ণ স্বপ্নে দেখেন,  ওই জঙ্গলে একটি পিতলের হাঁড়িতে রয়েছে মা দুর্গার অষ্টধাতুর মূর্তি৷ ফের জঙ্গলে এসে হাঁড়িটি খুঁজে পেয়ে দেবীর অষ্টধাতুর মূর্তি উদ্ধার করেন তিনি। সেই মূর্তি নিয়ে আসেন উদয়নারায়ণ৷ আবার স্বপ্ন৷ এবার স্বয়ং দেবী দুর্গা পুজো পদ্ধতিরও জানিয়ে দেন। নাড়াজোল গ্রামেই বাড়ি তৈরি করে পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন উদয়নারায়ণ৷ এরপর উদয়নারায়ণকে খাঁন উপাধি দিয়ে রাজার সম্মান দিলেন বর্ধমানের তৎকালীন মহারাজ৷ উদয়নারায়ণই নাড়াজোল রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা৷ মায়ের পুজোর উদ্যোগে রাজবাড়িতে নির্মিত হয় জয়দুর্গা মন্দির ও দুর্গাদালান। সেখানেই প্রতি বছর ঘটা করে দুর্গাপুজো শুরু হয়। আজও সেই রীতির কোনও পরিবর্তন ঘটেনি।

Advertisement

[কার্তিক সাজতে ব্যস্ত শিলিগুড়ির বিশ্বকর্মা, কী চলছে কুমোরটুলিতে?]

বৃহৎ নন্দীকিশোর মতে নাড়াজোল রাজবাড়িতে পুজোর আয়োজন হয়। ১৫ দিন আগে থেকে শুরু হয় মায়ের কল্পারম্ভ৷ রাজবাড়ির মা একা৷ সঙ্গে নেই লক্ষ্মী, সরস্বতী কার্তিক, গণেশ৷ মা নিরামিষাশী৷ রাজপরিবারের সেই পুরনো কাঁসার থালায় সাজিয়ে দেওয়া হয় পঁচিশ কেজি চালের নৈবেদ্য৷ সঙ্গে রাজবাড়িতেই বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি মুড়ি, মুড়কি,  চাঁদসাই, মিষ্টি ও  লুচি৷ রাজা নেই৷ রাজপ্রথা তো আছে৷ কিন্তু  রাজপ্রথা মেনে পদ্মদিঘিতে মায়ের ঘট ডোবানো হয়৷ দুই রাজপ্রহরী সঙ্গে যান তলোয়ার হাতে৷ সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত জ্বলে হোমাগ্নি৷ মায়ের পুষ্পাঞ্জলিও দিতে পারেন না রাজবাড়ির মহিলারা৷ মায়ের নিরঞ্জন হয়,  বিসর্জন হয় না বলে জানিয়েছেন রাজ পরিবারের সদস্য সন্দীপ খাঁন৷ বলা বাহুল্য, প্রথা মেনে পুজোর রাশ ধরতে রাজ মুখিয়ে থাকেন পুরোহিত অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷

[এই বাড়ির পুজোয় পাঁচদিন পাত পেড়ে অন্নভোগ গ্রহণ করে গোটা গ্রাম]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ