বৈদেহী বসু: কলকাতার চাইনিজ খেতে ভালবাসেন যেসব বাঙালি, বিদেশ বিভুঁইয়ে এলে সফিস্টিকেটেড ন্যুডলসে তাদের মন ভরে না! কলকাতার রাস্তায় প্যান্ডেলে ঘোরার ফাঁকে ওই যে চাউমিন বা ফ্রায়েড রাইসের সঙ্গে ট্যাংরার স্পেশ্যাল চাইনিজ ফ্লেভারের চিলি চিকেন – ওর স্বাদই আলাদা। আমরা যারা টেক্সাসের এই ডালাসের তথাকথিত ঘরছাড়া বঙ্গসন্তান-সন্ততি, তাদের প্যান্ডেলে বসে পুজো দেখার সুযোগ হয় ঠিকই কিন্তু, প্যান্ডেল ঘুরে কলকাতার ফ্লেভারের চাইনিজ খাওয়া দাওয়া নস্টালজিয়া হয়েই থেকে যায়।
তবে সেই অভাব এবার পূরণ হল। কারণ ডালাসে এবারের পুজোয় ভোজন রসিক প্রবাসী বাঙালির জন্য ছিল একটুকরো কলকাতার রাস্তা। যেখানে কলকাতা স্টাইলের চাইনিজ খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে ছিল দেদার ঝালমুড়ি, জিলিপি খাওয়ার সুযোগ। ভাবছেন সুদুর টেক্সাসে এসব এলো কোথা থেকে! দাদা, গ্লোবালাইজেশনের যুগে সবই সম্ভব।
যেখানে মাত্র দু’দিনের পুজোর আয়োজনে কুমারী পুজো, সন্ধি পুজো মায় ঢাকের তালে ধুনুচি নাচের মতো খুঁটিনাটি কিছুই বাদ দেয় না আয়োজক সংগঠন, সেখানে এটুকু ইচ্ছেপূরণ তো তাঁদের বাঁয়ে হাত কা খেল। অবশ্য প্রস্তুতি শুরু করতে হয় একটু আগে থেকেই। বিদেশে এতকিছুর আয়োজন রীতিমতো মহাযজ্ঞের মতোই। তাই ফেব্রুয়ারি থেকেই ডালাসের আন্তরিক বাঙালি সংগঠনের পুজোয় ওঠে সাজসাজ রব। সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন দায়িত্ব। সেই মতোই চলতে থাকে আয়োজন। জানাচ্ছিলেন আন্তরিকের সভাপতি পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উত্তর টেক্সাসের মেট্রোপলিটান শহর ডালাস। অজস্র প্রবাসী বাঙালি থাকেন শহরটায়। পুজোও হয় বেশ কয়েকটা। তবে তারই মধ্যে এই আন্তরিক সংগঠনের পুজো একটু আলাদা। এখানে এবার দুর্গা পুজোয় গোটা কলকাতার মেজাজকেই তুলে আনার চেষ্টা করছেন আয়োজকরা। থাকছে থিমের ঠাকুর, খাওয়া দাওয়ার স্টল, এমনকী গানবাজনার আসরও। বলতে গেলে এই গানবাজনা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই এবার আন্তরিক-এর তুরুপের টেক্কা। কারণ, কলকাতা থেকে ডালাসে এবার গান শোনাতে এসেছেন রূপঙ্কর বাগচী এবং শ্রীকান্ত আচার্য। তাদের গানে আসর মেতে ওঠার পাশাপাশি থাকছেন স্থানীয় প্রতিভারাও। আর এই এতকিছুর মধ্যেও পুজোর এ টু জেড সমস্ত নিয়মকানুন মানার ব্যাপারে কোনও ছাড় নেই। অষ্টমীর অঞ্জলি, সন্ধিপুজোর আরতি, পুজোর ভোগ, কুমারী পুজো, দশমীর দধিকর্মা এমনকী ঢাকের তালে ধুনুচি নাচ পর্যন্ত। সব হাজির। বিদেশেও থিম পুজোর কথা শুনে যাঁরা চোখ কপালে তুলছেন, তাঁরা এর পরেরটুকু জানলে আরও অবাক হবেন। কারণ এবার পুজোয় অন্তরীকের থিম ঠিক করা হয়েছে রীতিমতো পাঁজি পুঁথি বিচার করে। মা দুর্গার এবার ঘোটকে আগমন। তাই টেক্সাসের ডালাসের এই পুজোতেও দুগ্গাঠাকুর আসবেন ঘোড়ায় টানা রথে। রথেই বসবে কুমোরটুলি থেকে আনা দুর্গাপ্রতিমা। আর তাঁর সন্তানরাও। এবার আন্তরিকের পুজো পড়ল ২১ বছরে। ষষ্ঠীর সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে ৫ অক্টোবর সপ্তমীর দিন সারাদিন ধরে চলল পুজো। ৪ তারিখ ষষ্ঠী আর সপ্তমীর এবং ৫ তারিখ অষ্টমী আর নবমীর পুজো করবেন চারজন পুরোহিত। দশমী পালন করা হবে আগামী সপ্তাহের সপ্তাহান্তে।
আসলে বিদেশে দেবীপক্ষের যে কোনও সপ্তাহান্তেই হয় পুজো। কলকাতায় তাই যখন বাঙালিরা পুজোর ছুটি সপ্তাহান্তে পড়ার জন্য ছুটি হাতছাড়া হল বলে মনমরা, সেখানে এখানকার বাঙালিদের মন ভালো। পুজোর সময়েই পুজোয় মাতা যাবে বলে। আগামী সপ্তাহে সিঁদুরখেলা। আন্তিরকের সদস্যদের পাশাপাশি পুজোয় অন্যান্য দিনের মতোই সেদিনও যোগ দেবেন ডালাসের বহু বাঙালি। প্রতিবছর নয় নয় করে প্রায় ১২০০ বাঙালি জড়ো হন এই পুজোয়। পারমিতা জানালেন, এই পুজোয় চেনা অচেনার গণ্ডি ভেঙে খুঁটিনাটি আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন প্রতি উপস্থিত বাঙালি। পুজোর ক’দিন এখানে সকলেই এক বড় পরিবারের অংশ। আর এভাবেই আন্তরিক বহন করে চলেছে তার নামের যথার্থতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.