Advertisement
Advertisement
পুজো

৪০০ বছরের রীতি ভাঙল সিমলাপাল রাজবাড়ি, বন্ধ পশুবলি

আগে পুজোর চারদিনই পশুবলি দেওয়া হত।

Know amazing history of simlapal rajbari of bankura
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:September 17, 2019 4:40 pm
  • Updated:September 22, 2019 1:01 pm

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন সিমলাপাল রাজবাড়ির পুজো।

দেবব্রত দাস: চারশো বছরের পুরনো পুজোর রীতি ভাঙলেন বাঁকুড়ার সিমলাপাল রাজবাড়ির সদস্যরা। এই পারিবারিক পুজোয় আগে শতাধিক ছাগবলি হত। বন্ধ করে দেওয়া হল সেই বলিপ্রথা। পরিবর্তে প্রতীকী বলি দেওয়া হবে ছাঁচি কুমড়ো, আখ, কলা, চালকুমড়ো। এমনটাই জানালেন রাজ পরিবারের বর্তমান বংশধর দেবপ্রসাদ সিংহ বড়ঠাকুর।

Advertisement

[আরও পড়ুন: হেঁশেলের ‘অধিকার’ নিয়ে দীর্ঘ দ্বন্দ্ব, ঝালদার ৪ স্কুলে বন্ধ মিড-ডে মিল]

দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির নিয়মেই বদলে গিয়েছে পুরনো প্রথা। পূর্বপুরুষরা দেবীমূর্তির সামনে শতাধিক ছাগশিশু বলি দিতেন। সেই বলি আজ বন্ধ করে দিয়ে এই পরিবার নজির তৈরির পাশাপাশি অন্যদের কাছেও একই আবেদন জানাচ্ছেন। সিমলাপাল রাজবাড়ির বর্তমান বংশধর দেবপ্রসাদ সিংহ বড়ঠাকুর এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘শাস্ত্রে যে বলির কথা বলা হয়েছে তার মর্মার্থ হল নিজের রিপুকে বলি দেওয়া। পশুবলি তো প্রতীকী। সুতরাং নিজের ষড়রিপু অর্থাৎ কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্যকে বলি দিন।” দক্ষিণ বাঁকুড়ার ৪০০ বছরের প্রাচীন দুর্গাপুজোর অন্যতম সিমলাপাল রাজবাড়ির পুজো। পারিবারিক রীতি-নীতি ও পঞ্জিকার নিয়ম মেনে এখন পুজোর যাবতীয় আচার অনুষ্ঠিত হয়। রাজ পরিবারের বর্তমান বংশধররা পশুবলির বিরোধিতা করে পূর্বপুরুষদের চলে আসা বলিপ্রথা এখন বদলে দিয়েছেন। এই পুজো তাই আক্ষরিক অর্থে শান্তির পুজো, অহিংসার পুজো।

Advertisement

রাজ পরিবারের বর্তমান বংশধর দেবপ্রসাদ সিংহ বড়ঠাকুর গর্বিত কণ্ঠে বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষদের চালু করা এই পুজোর প্রতিটি রীতি ও প্রথা মেনেই এখনও করা হয়। কিন্তু পশুবলির প্রথা আমরা আর মানতে পারিনি। তাই পশুবলি বন্ধ করে কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে সবাইকেই পশুবলি বন্ধ করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।” সিমলাপাল রাজ পরিবারের এই পুজোর সূচনার ইতিবৃত্ত বর্তমান বংশধরদের কাছে অজ্ঞাত। তবে পারিবারিক নথিপত্র থেকে জানা যায় আনুমানিক, এই পুজো সাড়ে তিনশো থেকে চারশো বছরের পুরানো।

[আরও পড়ুন: প্রথমপক্ষের মেয়েকে মানতে নারাজ দ্বিতীয় স্বামী, সন্তান খুনে অভিযুক্ত মা]

কথিত আছে, বাঁকুড়ার সিমলাপাল থেকে পুরুলিয়ার কুইলাপাল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ মৌজা ছিল এই রাজ পরিবারের অধীনে। সিমলাপাল রাজ পরিবারের শেষ রাজা ছিলেন শ্যামসুন্দর সিংহ চৌধুরি। তাঁর তিন ছেলে। বড় ছেলে কল্যাণীপ্রসাদ সিংহ চৌধুরি ১৯৮৪ সালে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। মেজো ছেলে অমিয়প্রসাদ সিংহ বিদেশে থাকতেন। আর ছোট ছেলে দেবপ্রসাদ সিংহ বড়ঠাকুর এখন সিমলাপালেই থাকেন।

কেমন ছিল সেদিনের পুজো? দেবপ্রসাদবাবু জানান, সপ্তমীর দিন তিনটি ছাগল, তিনটি কুমড়ো, অষ্টমীর সন্ধিপুজোয় ১১ টি ছাগল, ছাঁচি কুমড়ো ও আখ এবং নবমীর দিন পাঁচটি করে ছাগল, ছাঁচি কুমড়ো ও আখ বলি দেওয়া হত। এছাড়াও এলাকার বহু মানুষের মানত করা শতাধিক ছাগল বলি দেওয়া হত। অষ্টমীর সন্ধিপুজোয় বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের তোপধ্বনির পরে এখানেও তোপ দাগার রেওয়াজ ছিল। এখন অবশ্য ছাগল বলির বদলে আখ ও ছাঁচি কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। কেন এই বলির প্রথা বন্ধ করা হল? দেবপ্রসাদবাবু বলেন, “বাবা কখনও পশুবলি প্রথাকে সমর্থন করতেন না। বাবা চাইতেন পশুবলি বন্ধ হোক। মৃত্যুর আগে বাবা বলে যান, পশুবলি প্রথা তুলে দিতে। বাবার মৃত্যুর পর আমরা তাই এই প্রথা বন্ধ করে দিয়েছি।” প্রয়াত শ্যামসুন্দরবাবুর নাতি চিরঞ্জীব সিংহ চৌধুরি বলেন, “পশুবলি কুসংস্কার। তাই অজ্ঞানতা দূর করতে এই প্রথা তুলে দিয়েছি। সবার কাছে পশুবলি প্রথা বন্ধ করার আবেদন করছি।” পশুবলি রোধ করে কুসংস্কারমুক্ত পুজোর নতুন পথের দিশারি সিমলাপাল রাজবাড়ি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ