Advertisement
Advertisement

Breaking News

জমিদার বাড়ির পুজো

ইছামতীর পাড়ে ভগ্নপ্রায় জমিদার বাড়িতেই ৫৭৭ বছর ধরে আলো ছড়িয়ে আসেন উমা

প্রতিপদ থেকেই জমিদার বাড়িতে শুরু হয়ে যায় দুর্গা আরাধনা।

This 500-year-old Durga Puja in Hasnabad draws devotees
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 24, 2019 6:32 pm
  • Updated:September 24, 2019 6:32 pm

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন হাসনাবাদের রামেশ্বরপুর জমিদার বাড়ির পুজো।

নবেন্দু ঘোষ, বসিরহাট: ভাঙা, গড়া, আবার ভেঙে পড়া, পুনর্নির্মাণ। এই চক্র অপরিবর্তিত। তাই তো পাঁচশ পেরিয়ে ছ’শো ছুঁইছুঁই জমিদার বাড়িতে দুর্গাদালানটি বারবার ভেঙেও আবার নতুন করে তৈরি হয়। সেখানে বছর বছর এসে বসেন সপরিবার দেবী দুর্গা। হাসনাবাদে রামেশ্বরপুর গ্রামে ঘোষবাবুদের জমিদার বাড়ির পুজো এবার পা দিল ৫৭৭ বছরে। বংশ পরম্পরায় বাড়ির সদস্যরা বাড়ির বাইরে থেকেই প্রস্তুতি নেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে ঠিক তাঁরা হাজির হয়ে যান আদি বাড়িতে। সারা বছরের স্তব্ধতা ভেঙে উমা আগমনে বাড়ি হয়ে ওঠে জমজমাট। প্রতিপদ থেকেই শুরু হয়ে যায় দুর্গা আরাধনা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দেবে বেলেঘাটার এই পুজো]

ঘোষবাবুদের জমিদার বাড়ির ইতিহাস যে কত প্রাচীন, তা পুজোর বর্ষ সংখ্যাতেই টের পাওয়া যায়। ইছামতী নদীর তীরঘেঁষা বাড়িটি একেবারে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া। এমনকী বাড়ির ছাদ থেকে দেখা যায় ইছামতীর ওপারের বাংলার বিস্তীর্ণ অংশ। এতগুলো বছর আগে রামেশ্বরপুর গ্রামে এটিই ছিল একমাত্র পুজো। কে, কবে পুজো চালু করেছিলেন তা এখন আর মনেই করতে পারেন না বর্তমান প্রজন্ম। তবু স্মৃতি কিছুটা হাতড়ে বাড়ির প্রবীণ সদস্য নির্মল ঘোষ, বর্তমানে পুজোর দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্মল ঘোষ জানালেন, আগে এই দুর্গাদালান ছিল গোলপাতার ছাউনি আর বাঁশ দিয়ে ঘেরা। তারপর মাটির হয়। জমিদার আমলে কংক্রিট দিয়ে তৈরি হয়। কালক্রমে তা ভেঙেও যায়। আবার এখন তৈরি হয়েছে নতুন করে। ঠাকুরদালানের ঠিক পিছনেই হরিমন্দির।

Advertisement
hasnabad-577-puja3
গত বছরের দুর্গাপ্রতিমা

প্রতিটি বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর নির্দিষ্ট কিছু রীতিনীতি থাকে। প্রাচীনকাল থেকে সেই নিয়ম উত্তরাধিকার সূত্রে জেনেছেন প্রতিটি প্রজন্মের অন্তত এক, দু’জন। তাঁদের অভিভাবকত্বেই পুজোর আয়োজন করে থাকেন নবীন প্রজন্ম। ঘোষ জমিদার বাড়ির এই প্রজন্মের তরুণ তুহিন ঘোষ। বিদেশে থেকেও তিনি বাড়ির পুজো নিয়ে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। আপাতত তুহিনের তৎপরতায় এ বাড়িতে পুজো হচ্ছে। তাঁকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছেন বাবা তপন ঘোষ।

hasnabad-577-puja2
অন্যান্য জমিদার বাড়ির মতোই এখানেও দুর্গাদালানে একচালার ঠাকুর তৈরি হয়। শ্রাবণ এবং ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষে বৃষ্টির জল পিতলের গামলায় ধরে রেখে পুজোর কাজ চলে। মূলত দেবীকে স্নান করানো হয় এই জলে। প্রতিপদে এখানে এসে ব্রাহ্মণ প্রথমে দালানে লক্ষ্মীর আড়ি পাতেন, তারপর ঘট বসান। ষষ্ঠীতে দেবীমূর্তি সাজানো হয় শাড়ি, সোনার হার, দুল, নথ, টিপ দিয়ে। প্রতিদিন স্নান হলেও, শাড়ি বদলানো হয় না। মন্ত্রপাঠ সকলের কানে পৌঁছে দিতে মাইক্রোফোনের ব্যবহার নেই এখানে। পুরোহিতের কণ্ঠস্বর যতদূর পৌঁছয়, ততদূর পর্যন্ত মানুষই শুনতে পাবেন।

hasnabad-577-puja1

ঘোষবাড়ির দেবীপ্রতিমাকে ঘিরে অনেক রকম প্রচলিত ধারণা আছে। বহু বছর আগে নাকি অসুস্থ মানুষ গরুর গাড়ি চড়ে জমিদার বাড়িতে আসতেন দেবীদর্শনে। তাঁকে ভক্তিভরে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেওয়ার পর শরীরে আর অসুখের লেশমাত্র থাকত না। তিনি দিব্যি হেঁটে বাড়ি ফিরতে পারতেন। তাই আজও গ্রামের মানুষজন বিশ্বাস করেন, এই দেবী জাগ্রত, দুর্গতি নাশ করবেনই। তাই আজও মনোষ্কামনা পূরণ হলে দণ্ডি কেটে, সাধ্যমত গয়না দেন দেবীকে। পুজোয় প্রতিদিন ফল বলি হয়।

[আরও পড়ুন: ‘নবরস’-এর নবধারায় সেজে উঠছে হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীন]

এ বাড়ির দেবী বিসর্জনেও বিশেষ রীতি আছে। প্রাচীন নিয়ম অনুযায়ী, উমা বাপেরবাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময়ে নেয়েখেয়ে যাবেন না। হয় স্নান করে নয়ত খেয়ে যাবেন। তাই দশমীতে দেবী আর স্নান করেন না। পরিবারের সদস্যরা কাঁধে চড়িয়ে ইছামতীতে নিয়ে গিয়ে তাঁকে বিসর্জন দেন। আর দেবীর এই নিয়ম মেনে এবাড়ির মেয়েরাও শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় স্নান করেন না। আজও সেই নিয়মের কোনও ব্যতিক্রম নেই। কিন্তু চিন্তা একটাই। এরপর আর কে বা কারা দায়িত্ব নিয়ে, নিয়ম মেনে পুজো করবে? নবপ্রজন্মের প্রতি তেমন ভরসা নেই প্রবীণদের। তাহলে কি ইছামতীর পাড়ের অর্ধসহস্র বর্ষের পুজো কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ