Advertisement
Advertisement

Breaking News

মহিলা পরিচালিত দুর্গাপুজো

জেদের বশেই জয়, জামবনিতে বন্ধ হওয়া পুজো চালু শবর-সাঁওতাল রমণীদের হাত ধরে

১৯৮০ সাল থেকেই মহিলারাই এই পুজো করে আসছেন।

This all women Durga Puja in Jhargram treads a different path
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:October 1, 2019 6:05 pm
  • Updated:October 1, 2019 6:06 pm

সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: চাঁদা সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রতিমা তৈরি আয়োজন – সমস্ত প্রস্তুতি ছিল। প্রশাসনের অনুমতিও নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যায় দুর্গাপুজো। মাথায় হাত পড়ে উদ্যোক্তাদের। এভাবে পুজো বন্ধ হওয়ার পিছনে ছিল রাজনৈতিক কারণ। তবে সেসব বাধা কাটিয়ে ঝাড়গ্রামের জামবনি ব্লকে দুবড়া অগ্রগামী ক্লাবের পুজো এবার ৩৯ বছরে পা দিল। পুজোর দায়িত্ব এখন জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মহিলাদের।

[আরও পড়ুন : এই পুজোয় হাতজোড় করে প্রণাম করলেই ছবি তুলবেন স্বয়ং মা দুর্গা! কোথায় জানেন?]

সালটা ১৯৭৩। পিছিয়ে পড়া ঝাড়গ্রামের জামবনি ব্লকের দুবড়া গ্রামের কয়েকজন মিলে দুর্গাপুজোর আয়োজনের কথা ভাবেন। মহিলারাও এগিয়ে আসেন। সেসময় ছিল কংগ্রেস সরকারের শাসনকাল। রাজনৈতিক কারণেই পুজো আচমকা বন্ধ হয়ে যায়। অগ্রগামী ক্লাবের সম্পাদক, পুজো কমিটির সদস্যা মানিক শতপথী, হেনা শতপথীরা বলেন – “তখন কংগ্রেস সরকার। আমাদের পুজোর সমস্ত আয়োজন সারা হয়ে গিয়েছিল। প্রতিমাও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। পুলিশের অনুমতিও ছিল। কিন্তু হঠাৎ আমাদের পুজো বন্ধ করে দেওয়া হয়। গ্রামবাসী এবং মহিলাদের মধ্যে জেদ চেপে যায়। তাঁরা ঠিক করেন, পুজো হবেই গ্রামে। তারপর বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে। রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসে। ১৯৮০ সাল থেকে আমরা সকলে মিলে গ্রামেই দুর্গাপুজো শুরু করি।” তখন থেকেই গ্রামের একমাত্র পুজোর মূল দায়িত্বভার তুলে নেয় গ্রামের মহিলারা। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষ সাঁওতাল,শবর থেকে শুরু করে যে কোনও সম্প্রদায়ের মহিলারা পুজোর পরিচালনা থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান – সবই করেন।

Advertisement
jgm-closed-puja1
পুজো কমিটির আয়োজকরা

দুবড়া গ্রামের এই পুজো কেবল উৎসবের ক’টা দিন নয়। এ যেন মহামানব মিলনের বার্তা নিয়ে আসে। এই বছর ৩৯তম বর্ষে দুবড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব পুজো কমিটির যাবতীয় দায়িত্ব মহিলাদের। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা সংগ্রহ থেকে শুরু করে সব আয়োজনেই মূল ভূমিকায় নারীবাহিনী। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৯৭৩ সালে পুজা ভন্ডুল হলেও সেবার চাঁদায় সংগৃহীত টাকা দিয়ে পুজোর কটা দিন গ্রামবাসীদের খিচুড়ি খাওয়ানো হয়েছিল। এবছর দুবড়ার এই পুজো ৩৯তম বর্ষে পড়েছে। এবার পুজো কমিটির সম্পাদক করা হয়েছে এক মহিলাকে।
গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন বিকেল চারটের পর গ্রামের মহিলারা একজোট হয়ে শুরু করেন চাঁদা তোলা। জোরজবরদস্তি নেই। যে যা দিচ্ছেন, তাইই সাদরে গ্রহণ করা হচ্ছে। গ্রামের স্থায়ী মণ্ডপে পুজো হয়। এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হতে চলেছে ১০৮ জন মহিলা ষষ্ঠীর দিন স্থানীয় আউসা বাঁধ থেকে ঘটে করে জল নিয়ে আসবেন। এক্ষেত্রেও জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে মহিলারা যোগ দেবেন বলে জানান উদ্যোক্তরা। এছাড়া সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অর্কেস্ট্রা, যাত্রাপালা, রাবণ দহন নিয়ে মেতে থাকবেন গ্রামবাসীরা। পুজো কমিটির সম্পাদিকা শেফালি বিশোই বলেন, “আমরা মহিলারাই পুরো পুজোটি পরিচালনা করি। আমাদের এখানে ধর্ম, জাতপাতের কোনও ভেদাভেদ নেই।দশমীর দিন রাবন পোড়ানো খুব বড় আকর্ষণ।”

Advertisement

[আরও পড়ুন : কবিগুরুকে অবলম্বন করে দুর্গাবন্দনা দিল্লির মাতৃমন্দিরে

ঝাড়ি মান্ডি নামে গ্রামের এই বৃদ্ধা মহিলা ১৯৭৩ সাল থেকে পুজার সঙ্গে জড়িত। আজও তিনি রয়েছেন স্বমহিমায়। গ্রামের সুকুরমনি মুর্মু, কল্পনা সিং, সুলেখা দন্ডপাট, পার্বতী জাল, নীলিমা সিং, চম্পা মল্লিকদের সঙ্গে ঝাড়ি মান্ডি আজও রীতিমত উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা নিয়ে পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত। এভাবেই নারীশক্তির আরাধনায় মেতে ওঠে দুবড়ার নারীকুল।

ছবি: প্রতীম মৈত্র।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ