গৌতম ব্রহ্ম: এ এক বিচিত্র অনুভূতির জায়গা। যেখানে পুরাণ, ইতিহাস, বাস্তব, সব মিলেমিশে একাকার। একদিকে পরী-রাজ্য মন্দার পর্বত। যেখানে নাকি এখনও স্বর্গের পরীরা নেমে আসেন বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। অন্যদিকে পুণ্যতীর্থ চারধাম গঙ্গোত্রী, যমুনেত্রী, কেদার, বদ্রী। আর তারই মাঝে মাথা তুলেছে ব্যাস পর্বত।
কত পৌরাণিক আখ্যান যে জড়িয়ে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর এই পর্বতচূড়ায়! কথিত আছে, এখানে বসেই ব্যাসদেব রচনা করেছিলেন আঠারোটি পুরাণ! যুগে যুগে প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝাপটা সামলে এখনও সেই ব্যাসগুফার কিছু অংশ বেঁচে আছে। গুফা থেকে নিচের দিকে ঝুঁকলে চোখে পড়বে মহাভারতের সেই দগ্ধ জতুগৃহের অংশ। যেখানে নাকি পাণ্ডবদের মারতে গিয়ে পুড়ে মরেছিল কৌরবদের ভৃত্য পুরন্দর। কৌরবদের চোখে ধুলো দিয়ে বিদুরের তৈরি যে সুড়ঙ্গপথে পাণ্ডবরা পালিয়ে গিয়েছিলেন, তার শ’আটেক মিটার এখনও বর্তমান এখানে। অন্তত বিশ্বাসীরা তাই বলে থাকেন।
[আরও পড়ুন: ওড়িশার পর অন্ধ্রপ্রদেশ, মাটি খুঁড়ে মিলল ২০০ বছরের পুরনো শিব মন্দির!]
মহাভারতের মণিমুক্তো ছড়িয়ে থাকা হিমালয়ের এই অংশ বহুদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে। ধীরে ধীরে বহু স্মৃতির অন্তর্জলিযাত্রা শুরু হয়েছিল। এবার তা সংস্কার করে সংরক্ষণের উদ্যোগ শুরু হল এক বঙ্গসন্তানের হাত ধরে। উত্তরকাশী শহরের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট উঁচুতে শিখরধাম। সমুদ্রপৃষ্ঠের হিসাব ধরলে উচ্চতা দাঁড়ায় সাড়ে আট হাজার ফুট। এখানেই প্রায় কুড়ি বছর নিভৃতবাসে রয়েছেন স্বামী শংকরচৈতন্য মহারাজ। গাড়োয়ালের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে তিনিই সংস্কার করলেন ব্যাসপর্বতের সেই কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন ব্যাসগুফা।
শিখরধামের ৯০০ মিটার দূরে ব্যাস পর্বত। এখানেই গুরুদেবের আশ্রয়ে মহারাজের সন্ন্যাস জীবনের সূচনা। এই গুরুকুলে সাধনা করেই অনেক সন্ন্যাসী সিদ্ধিলাভ করেছেন। কিন্তু কেদারের মেঘ বিপর্যয়ের পর ছবিটা বদলে যায়। ব্রহ্মচারীদের আনাগোনা কমে। দেখভালের অভাবে ব্যাসপর্বত ভগ্নপ্রায় হয়ে পড়ে। হাল ফিরিয়েছেন শংকর মহারাজ। কলকাতা থেকে ব্যাসদেবের মূর্তি গড়িয়ে তা প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্যাসমন্দিরে। গুরুপূর্ণিমার পূণ্যলগ্নে ব্যাসদেবের পুজোপাঠও শুরু হয়ে গিয়েছে। ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস।
[আরও পড়ুন: অম্বুবাচী চলাকালীন এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না, হতে পারে মহাবিপদ]
ইতিহাসই বটে। এই শিখরধামেই হনুমান মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কুষাণ যুগের স্বর্ণমুদ্রা পেয়েছিলেন গাড়োয়ালিরা। পুরাণ মতে, এখানেই পাণ্ডবমাতা কুন্তী শইভের দেখা পেয়েছিলেন। সেই শিবমন্দিরে নিয়মিত পুজোপাঠ করেন শংকর মহারাজ। মহাভারতের বারণাবত পর্ব তো বটেই, অনেক পুরাণেই উল্লেখ রয়েছে এই শিবমন্দির, ব্যাসপর্বতের। ব্যাসপর্বতের কাছে মন্দার পর্বত। পুরাণ মানলে, সমুদ্রমন্থনের সময় এই পর্বতকেই ‘ডালের কাটা’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে ফোনে এমনটাই জানালেন শংকর মহারাজ। বললেন, “দিল্লি ও কলকাতার কিছু সহৃদয় মানুষের সহযোগিতায় ব্যাসগুহা সংস্কার করে মন্দির স্থাপন করা হল। সাধকদের হিমালয়বাসের ঠিকানা হয়ে উঠুক এই ব্যাসপর্বত।”