Advertisement
Advertisement
Bankura

আমাজনের জঙ্গলের অদ্ভুতদর্শন উদ্ভিদ বাঁকুড়ায়, সোনামুখীর জঙ্গলে মাংসভুক গাছ!

সূর্যশিশির মাংসাশী উদ্ভিদ। বড়, বড় উইপোকা, পিঁপড়েদের কব্জা করে তাদের গলিয়ে নির্যাস থেকে নিয়ে খাদ্য সংশ্লেষ করে।

Rare drosera, flesh eating plant in Amazon found in Sonamukhi, Bankura

আমাজনের মাংসভুক উদ্ভিদ ড্রসেরা সোনামুখীর জঙ্গলে। নিজস্ব ছবি।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:December 17, 2024 5:33 pm
  • Updated:December 17, 2024 5:33 pm  

দেবব্রত দাস, খাতড়া: সবুজ নয়, লাল ও গোলাপি রঙের ছোট্ট গাছ। অনেকটা সিকি পয়সার মতো আদল। বড়জোর ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা। আমাজনের গভীর জঙ্গলের এই প্রজাতির উদ্ভিদ মাংসাশী। পোকামাকড়ই মূলত এদের খাদ্য। আর সেই বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের দেখা মিলল এবার বাঁকুড়ার সোনামুখীর জঙ্গলে। আমাজনের জঙ্গলে থাকা সূর্যশিশির গাছ কীভাবে সোনামুখীর জঙ্গলে, তা দেখে রীতিমতো তাজ্জব বনকর্তারাও। সূর্যশিশিরের বৈজ্ঞানিক নাম ড্রসেরা বা দশেরা বার্মানি।

বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনামুখী রেঞ্জের বড়নারায়ণপুর মৌজায় একটি মুরগির খামার থেকে কিছু দূরে জলাশয়ের পাশে গভীর জঙ্গলে এই উদ্ভিদের দেখা মিলেছে। জঙ্গলে পাতা কুড়োতে গিয়ে স্থানীয়দের নজরে পড়ে এই অদ্ভুত দর্শন উদ্ভিদ। স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে খবর পেয়ে সোনামুখী রেঞ্জের আধিকারিক নিলয় রায় সরেজমিনে গিয়ে সেগুলি পরীক্ষা করে দেখেন। ড্রসেরা বার্মানির ছবি ক্যামেরাবন্দি করেন তিনি। পরে এই উদ্ভিদের পরিচয় জানা যায়। এটি মাংসাশী উদ্ভিদ। বনদপ্তরের সোনামুখী রেঞ্জের আধিকারিক নিলয় রায় বলেন, “সোনামুখী রেঞ্জের জঙ্গলে এই মরশুমে বেশ কয়েকটি মাংসাশী উদ্ভিদের দেখা মিলেছে। সোনামুখী রেঞ্জের বড়নারায়ণ এলাকায় একটি মুরগি ফার্মের কাছে একটি জলাশয়ের পাশে জঙ্গলের মধ্যে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এই উদ্ভিদগুলি দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এটিকে বাংলায় সূর্যশিশির বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ড্রসেরা বা দশেরা বার্মানি। সূর্যের আলো যেখানে ভালো করে ঢোকে না, সেই জঙ্গলে এই মাংসাশী উদ্ভিদের দেখা মেলে।”

Advertisement
সোনামুখীর জঙ্গলে বিরল সূর্যশিশির। নিজস্ব ছবি।

তাঁর আরও সংযোজন, “এরা ঠিক উদ্ভিদ নয়। গাছের মতো হলেও এরা ছোট, ছোট প্রাণীদের ট্যাপ করে তাদের থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে। এই উদ্ভিদগুলি প্রধানত দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের জঙ্গলে দেখতে পাওয়া যায়। তবে প্রায় বিরল প্রজাতির এই উদ্ভিদ আমাদের দেশে খুব কমই দেখা যায়। এখানে এগুলি কীভাবে হল তা বোঝা যাচ্ছে না। এই উদ্ভিদগুলি যাতে কেউ ছিঁড়ে বা তুলে নিয়ে যেতে না পারে তার জন্য বনকর্মীদের নজর রাখতে বলা হয়েছে।”

এই ব্যাপারে লালগড় গভর্নমেন্ট কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. দেবব্রত দাস বলেন, “এই মাংসাশী উদ্ভিদ প্রধানত ল্যাটেরাইট মাটিতেই হয়। আমাদের দেশে এগুলিকে সূর্যশিশির বা সান ডিউ বলা হয়। এগুলি অক্টোবর, নভেম্বর মাসে দেখা যায়। তবে লালমাটির জঙ্গলে ডিসেম্বর মাসে আচমকা এগুলির দেখা পাওয়া বেশ বিরল। তার মানে, এখানকার আবহাওয়া ওই উদ্ভিদের পক্ষে অনুকূল, তা বোঝা যাচ্ছে।”

এই সূর্যশিশির মাংসাশী উদ্ভিদ বলে বড়, বড় উইপোকা, পিঁপড়েরা এদের সংস্পর্শে এলে তাদের কব্জা করে নেয়। এরপর তাদের কার্যত গলিয়ে নির্যাস বের করে নিয়ে খাদ্য সংশ্লেষ করে। এই কারণে এদের মাংসাশী উদ্ভিদ বলে। মূলত স্যাঁতসেঁতে ঢেউখেলানো জমিতে এগুলি দেখা যায়। এই উদ্ভিদ আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির কাজে লাগে। এদের পুড়িয়ে দিলে যে ছাই উৎপন্ন হয় তাকে স্বর্ণভস্মও বলা হয়। আমাজনের জঙ্গলে এই উদ্ভিদ প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়। রাঢ়বঙ্গের এই জঙ্গলে ডিসেম্বর মাসে দেখতে পাওয়াটা বিরলই ঘটনাই বলা চলে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement