স্টাফ রিপোর্টার: মরশুমের প্রথম ম্যাচে পাঠচক্রর বিরুদ্ধে নামার আগে মোহনবাগান কোচ শংকরলাল চক্রবর্তীর অবস্থা অনেকটা সুকান্ত ভট্টাচার্যর লেখা ‘রানার’ কবিতার মতো। রানারের পিঠে টাকার বোঝা থাকা সত্ত্বেও সে টাকা ছুঁতে পারত না। তেমনই শংকরলালের ড্রেসিংরুমে ডিপান্ডা ডিকা, সুখদেব সিংয়ের মতো ফুটবলার থাকলেও, তাঁদের তিনি খেলাতে পারছেন না। সুখদেবের বিষয়টি জানাই ছিল। ফেডারেশনের প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটি প্রাক্তন মিনার্ভা স্টপারের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় তাঁকে খেলানো যাবে না। কিন্তু হঠাৎ করে ডিকার কী হল? দু’দিন আগেও তো সল্টলেকে প্র্যাকটিসের সময় নিশ্চিন্ত ছিলেন শঙ্করলাল। জানতেন আই লিগ খেলা ক্লাব হওয়ায় ম্যাচের ২৪ ঘণ্টা আগেই তিনি সই করাতে পারবেন যে কোনও ফুটবলারকে। কিন্তু এদিন জানা গেল যেহেতু ডিকা গতবার মহামেডান স্পোর্টিং থেকে লোনে এসেছেন, তাই ম্যাচের আগেরদিন সই করলেও প্রথম ম্যাচে খেলতে পারবেন না। কিন্তু কেন এতদিনে জানা গেল বিষয়টি? প্র্যাকটিসে উপস্থিত সমর্থকদের ফিসফাস, এখন দৈনন্দিন প্র্যাকটিসে যে কর্তা থাকেন, নিয়মকানুনের কিছুই তিনি জানেন না। এর মাঝেই অবশ্য পাঠচক্রের বিরুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শংকরলাল। গোলে অধিনায়ক শিল্টন পালের খেলা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।
তবে সুখদেব না থাকায় কিংসলে ও কিমকিমা ছাড়া কোচের হাতে কোনও তৃতীয় স্টপার নেই। গুরজিন্দর, অরিজিৎদের দিয়ে ঠেকা কাজ দেওয়ার কাজ চালাচ্ছেন। সমস্যা আছে লেফট ব্যাক নিয়েও। অভিষেক আম্বেকর এখনও সেভাবে নজর কাড়তে পারেননি। তাই লেফট ব্যাকে অরিজিৎ বাগুইয়ের শুরু করার সম্ভাবনা প্রবল। রাইট ব্যাকে আমে রাণাওয়াডে। মাঝমাঠে শিল্টন ডি’সিলভা ও সৌরভ দাসের দু’দিকে পিন্টু মাহাতো ও বসন্ত সিং। স্ট্রাইকারে হেনরি কিসেকার সঙ্গে আজহারউদ্দিন। তবে খুব সমস্যাতেও সম্পূর্ণ ফিট নন এমন ফুটবলারকে খেলানোর পক্ষপাতি তিনি নন। তাই আপাতত সবুজ-মেরুন জার্সিতে মেহতাবের দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
[অতিবৃষ্টিতে খেলতে নারাজ ইস্টবেঙ্গল, মাঝপথেই পরিত্যক্ত টালিগঞ্জ ম্যাচ]
চলতি মরশুমে তথাকথিত ছোট দলগুলির মধ্যে পাঠচক্র, রেনবো বেশ ভাল দল করেছে। প্রথম ম্যাচেই সামনে কঠিন প্রতিপক্ষ। তার আগে তাদের বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন শঙ্করলাল। বলছিলেন, “দল তৈরি। তবে কতটা তা বোঝা যাবে ম্যাচের পর। প্র্যাকটিস ম্যাচ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ তো আর এক নয়, ওদের দলটাও বেশ শক্তিশালী। জাপানি স্ট্রাইকার, ক্রোয়েশিয়ান উইথড্রন স্ট্রাইকার, মাঝমাঠে লালকমলের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলার। আর পাঠচক্র তো বরাবরই ভাল পারফর্ম করে। ওদের আলাদা গুরুত্ব দিতেই হবে।” তবে তার মানে এই নয় অতিরিক্ত সতর্ক বা গুটিয়ে থাকবে মোহনবাগান। শঙ্করলালের কথাতেই তা স্পষ্ট। “ওরা প্রেস করার আগে ওদের চাপ দিতে হবে। সুযোগ পেলেও ওরা শেষ করে দেবে।” বলছিলেন মোহনবাগান কোচ। গত দু’বছর তাঁর কোচিংয়েই লিগ খেলেছে মোহনবাগান। তবে তখন ছিলেন স্টপ গ্যাপ কোচ। আর এবার তিনিই চিফ কোচ। দুই ক্ষেত্রের পার্থক্য বলতে শঙ্করলাল বলেন, নতুন ফুটবলার ও কোচ সঞ্জয় সেন, ফিজিক্যাল ট্রেনার অভিনন্দন চট্টোপাধ্যায়দের অনুপস্থিতির কথা। আর মানসিকতা? এতদিন যে মোহনবাগান সিএফএল-কে সেভাবে গুরুত্ব দিত না, এবার এটাই তাদের কাছে এক ও একমাত্র লক্ষ্য।
ছবি: অচিন্ত্য রায়