সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠেছেন সালাহ। চোখে জল। বুঝে গিয়েছেন হাই ভোল্টেজ ম্যাচে আর তাঁর খেলা হবে না। ঠিক সে সময় পাশে এসে দাঁড়িলেন বিপক্ষ দলের তারকা। মহম্মদ সালাহর পাশে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সান্ত্বনার সেই ছবিই গোটা বিশ্বকে চিনিয়ে দিচ্ছে ফুটবলের গেম স্পিরিটকে।
[ ইতিহাসে রিয়াল, লিভারপুলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের হ্যাটট্রিক রোনাল্ডোদের ]
রিয়াল মাদ্রিদ বনাম লিভারপুল। শনিবার রাতে বিশ্ববাসীর চোখ ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের দিকে। সেখানেই এই দুর্ঘটনা। এবং তারপরই এই নজির গড়া ছবি। যে ছবি নিয়ে আজ চর্চা সোশ্যাল মিডিয়ায়। লিভারপুলের ভরকেন্দ্র বলা যায় সালাহকে। এক দলের তারকা ফুটবলার বেরিয়ে যাওয়া মানে বিপক্ষের অ্যাডভান্টেজ। কাঁধের চোটে সালাহ যখন কাতরে উঠলেন লক্ষ লক্ষ লিভারপুল অনুগামীর তখন হদয়ভঙ্গ। সের্জিও ব়্যামোস হয়তো শাপ কুড়োচ্ছেন অসংখ্য ফুটবল অনুগামীর। কারণ সালহা না থাকা মানে সেয়ানে সেয়ানে টক্করেরর মজাটাই মাটি। ঠিক তখনই ফুটবলপ্রেমীদের মন ছুঁয়ে ফেললেন রোনাল্ডো। আসলে যন্ত্রণার এই লিপি তো তাঁর অজানা নয়। বড় ম্যাচে যখন উত্তেজনায় ভিতরটা ফুটছে তখন চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ার কষ্ট তাঁর থেকে ভাল আর কে জানে। ফুটবলপ্রেমীদের মনে পড়ে যাবে ২০১৬-এর ইউরো কাপের কথা। পর্তুগালের অধিনায়ক ছিলেন রোনাল্ডো। দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন। কিন্তু খেলা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাধ সাধল চোট। মাঠেই বসে পড়েছিলেন রোনাল্ডো। সালাহর মতো সেদিন তাঁর চোখেও জল। একটু পরেই খুলে ফেললনে অধিনায়কের আর্ম ব্যান্ড। চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলেন মাঠের বাইরে। তবে রোনাল্ডো জাদু ক্ষুণ্ণ হয়নি। সেদিন মাঠের বাইরে থেকে দ্বাদশ ব্যক্তি হয়েই খেলেছিলেন পর্তুগাল তারকা। দল জেতার নেপথ্যে অনুঘটক হয়ে থেকে গিয়েছিলেন।
এদিন সালাহ অবশ্য তা করতে পারলেন না। বেঞ্জেমার একটি আর গ্যারেথ বেলের জোড়া গোল মাটি ধরাল লিভরপুলকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অধরাই থেকে গেল। তবে গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে নজির হয়ে থাকল একটি ছবি। আহত সালাহর পাশে এসে দাঁড়ালেন রোনাল্ডো। চোখের জল মুছিয়ে দিলেন। সান্ত্বনা দিলেন। সালাহ যখন মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখন পাশে পাশে অনেকটা হাঁটলেন রিয়াল তারকা। আসলে নক্ষত্রের ভিতরের যে দহন তা শুধু জানেন নক্ষত্ররাই। সাধারণের পক্ষে তা বোধগম্য নয়। প্রতিপক্ষ দুর্বল হল বলে সুবিধা নেওয়ার কথা রোনাল্ডোর মতো তারকারা বোধহয় ভাবতেও পারেন না। তাঁরা তো চান টক্কর হোক স্কিলের সঙ্গে স্কিলের। মৃত্যুর আগেও প্রতিপক্ষ হিসেবে নকুল কিংবা সহদেবকে গদাযুদ্ধে বেছে নেননি দুর্যোধন। অথচ যে কোনও একজনকে হারালেই রাজ্যপাট ফিরে পেতে পারতেন। দুর্যোধন তবু গদাযুদ্ধে আহ্বান জানিয়েছিলেন ভীমকে। রোনাল্ডো হয়তো মহাভারতের এ কাহিনি জানেন না। কিন্তু জানেন, বীরের সঙ্গেই একমাত্র যুদ্ধ হয় বীরের। নইলে ইতিহাসে কাপুরুষের অধ্যায় লেখা হয়।
খেলায় হারজিত থাকে। প্রতিপক্ষকে কাবু করার কৌশল থাকে। তবু সেটাই শেষ কথা নয়। শেষ কথা বলেন রোনাল্ডোর মতো তারকারাই। যাঁরা হারজিতের ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিষ্ঠা করেন স্পোর্টসম্যানশিপ স্পিরিটকে। লক্ষ লক্ষ অনুগামীর মনে গাঁথা থাকে সে ছবি। যা বলে, ফুটবল মানে শুধু গোলের হিসেব নয়। তারকা মানে স্রেফ বাইসাইকেল ক্লিক নয়। তারকা সেই-ই যে ফুটবলপ্রেমীর নাড়ি ছুঁতে পারে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে আরও একবার সেভাবেই বিশ্বজোড়া অনুগামীদের হৃদস্পন্দন ছুঁয়ে ফেললেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.