Advertisement
Advertisement

রনজি সেমিফাইনালে বিপর্যয় শেষে কাঠগড়ায় বাংলা কোচ অরুণ লালের সঙ্গে অধিনায়কও

বিদায় ঘণ্টা কি শুনতে পাচ্ছেন বাংলার কোচ?

Arun lal's strategy under scanner after Bengal's defeat in Ranji Trophy semi final | Sangbad Pratidin

ফাইল ছবি

Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:June 19, 2022 10:05 am
  • Updated:June 20, 2022 10:56 am

আলাপন সাহা: দুপুর গড়িয়ে বিকেল এখন, সেমিফাইনাল শেষ হয়েছে ঘণ্টা তিনেক হল। ১৭৪ রানে যুদ্ধ জিতে তল্পিতল্পা গুটিয়ে মধ্যপ্রদেশ হোটেলে। কিন্তু বাংলা ড্রেসিংরুমে বন্দি। তিন ঘণ্টা ধরে ক্রিকেটাররা বেরোচ্ছেনই না।

কী ব্যাপার? না, বৈঠক চলছে, বৈঠক! বাংলা (Bengal) প্রবাদে আছে, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। কিন্তু এটা টিম বাংলা তো, টিমের ‘বিজ্ঞ জন’-রা উল্টো পথে হাঁটতে ভালবাসেন, উল্টো ভাবে ভাবতে ভালবাসেন। এখানে ম্যাচের আগে তিন ঘণ্টার টিম মিটিং না হলেও ম্যাচের হারের পর অবশ্যই হয়! আর তাই রেজাল্টও যা হওয়ার, তাই হয়। দিন বদলায়। সময় বদলায়। শুধু বাংলা টিম আর বদলায় না। বদলায় না টিমের রনজি ভাগ্য। সেই কবে তেত্রিশ বছর আগে রনজি ট্রফি (Ramji Trophy) জয়, স্বাধীনতাত্তোর ভারতে প্রথম ও শেষ বারের মতো। এবং তার পর থেকে ব্যর্থতার ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে’। 

Advertisement

[আরও পড়ুন: জাতীয় রেকর্ডের পর এবার ফিনল্যান্ডে সোনা জয়, নীরজ চোপড়ার সোনালি সফর অব্যাহত]

শনিবার খেলা শুরুর সময় রনজি সেমিফাইনালে কমেন্ট্রি করতে আসা প্রাক্তন বাংলা কোচ ডব্লিউ ভি রামনকে বেশ আশাবাদী দেখাচ্ছিল। বলছিলেন, “গোটা দিন খেলতে পারলে বাংলার জেতার সম্ভাবনা আছে।” আর গোটা দিন! ভাগ্যিস সকালে বৃষ্টির চোটে সওয়া এক ঘণ্টা পর খেলা শুরু হল। নইলে দুপুর পর্যন্তও খেলা গড়াত কি না সন্দেহ। পঁচিশ ওভারও তো টিকতে পারল না বাংলা! সাড়ে তিনশো তাড়া করতে নেমে ১৭৫ রানে সম্পন্ন হয়ে গেল দ্বিতীয় ইনিংসের অন্তর্জলিযাত্রা।

Advertisement

যার পর বাংলা কোচ অরুণ লালের (Arun lal) স্ট্র্যাটেজি কাঠগড়ায় উঠছে। অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণের ভূমিকা কাঠগড়ায় উঠছে। তিন-তিনটে জ্বলন্ত প্রশ্ন এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিচ্ছে বাংলাকে। এক, সেমিফাইনালে দুম করে ঈশান পোড়েলকে বাদ দেওয়া হল কেন? দুই, দু’জন বাঁ হাতি স্পিনারকে নামানোর যুক্তি কোথায়? কেন ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় বসে থাকবেন, যিনি অফস্পিন করতে পারেন? তিন, অভিষেক রামন কোন যুক্তিতে টিমে?
বঙ্গ ক্রিকেটমহলে বলাবলি চলছে, ঈশান ভারত ‘এ’ খেলেন প্রায় নিয়মিত। তাঁকে বসিয়ে কী বার্তা দিল বাংলা? যে ঈশান রাজ্য দলেই প্রথম একাদশের ক্রিকেটার নন? অথচ এক বছর আগেও ঈশান টিমের সেরা বোলার ছিলেন। প্রদীপ্ত প্রামাণিক কী এমন ‘জহরত’ যে তাঁর জন্য ঈশানকে বসতে হবে? মধ্যপ্রদেশের হিমাংশু মন্ত্রী প্রথম ইনিংসে ১৬৫ করে বাংলাকে ‘অর্ধমৃত’ করে ছেড়ে দিলেন। প্রদীপ্তর জায়গায় ঋত্বিক থাকলে অফস্পিন করতেন, বলটা বাঁ হাতি ব্যাটারের থেকে বাইরে বেরোত। অভিষেক রামন নিয়ে টিমেরই একজন বলছিলেন, তিনি ‘কোটার’ প্লেয়ার। ও দিকে, আগামী পাঁচ বছর যাঁকে ওপেনার ভাবা হচ্ছে, সেই সুদীপর ঘরামি যাচ্ছেন তিনে! আর এক সুদীপ, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়– তিনি তো আবার পাকাপাকি ব্রাত্য তালিকায়। অভিমন্যু ঈশ্বরণকে অধিনায়ক রাখা যেতে পারে গত বার বাংলাকে রনজি ফাইনালে তুলেছিলেন বলে। অথচ একই ফাইনালে ৮৬ করা সুদীপকে ভাবা যায় না।

আরও লজ্জাজনক সেমিফাইনাল হারের পর বাংলা কোচ অরুণ লালের মন্তব্য। এ দিন খেলা শেষে অরুণ বললেন, ক্লাব ক্রিকেটে সাদা বলে খেলে এসে রনজি নকআউটের লাল বলের ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি ক্রিকেটাররা। সাবাশ, এই না হলে অজুহাত! মজার হল, ঝাড়খণ্ডের মতো ‘বামন’ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হাফসেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড করার সময় একবারও তা মনে হয়নি। কুড়ি দিন আগে বেঙ্গালুরুতে প্র্যাকটিস করার সময় একবারও মনে হয়নি। কত দিন লাগে আর লাল বলের সঙ্গে সহজাত হতে? গোটা জীবন? অরুণ আরও বললেন, রামনের সেমিফাইনালের চাপ নেওয়ার মানসিকতা নেই। তা, মহাশয় যদি সেটা জানতেনই, তা হলে খেলালেন কেন? নিজের দায়ও কি এড়াতে পারেন অরুণ?

শোনা গেল, সেমিফাইনালের আগে নাকি নামমাত্র পরিকল্পনা হয়েছিল। রজত পাতিদার, হিমাংশু মন্ত্রীদের ব্যাটিং ভিডিও দেখা হয়েছিল, কিন্তু তাঁদের আটকানোর স্ট্র্যাটেজি নাকি হয়নি! কোচ নাকি সে সব অ্যানালিসিসে বিশ্বাসী নন। অপূর্ব! দেখেশুনে অনেকেরই ধারণা, অরুণের আর কিছু দেওয়ার নেই। তাঁকে এবার সসম্মানে বিদায় জানানো প্রয়োজন। শুধু তিনি নন, পুরো সেট আপই বদলানো উচিত। স্পিন বোলিং কোচ উৎপল চট্টপোধ্যায় কেন বাড়ি বসে থাকবেন বাংলা রনজি সেমিফাইনাল খেলার সময়? কেন পেস বোলিং কোচ শিবশঙ্কর পালকে নিয়ে যাওয়া হবে না? বদলের হাওয়া ওঠা উচিত, উঠছেও। সিএবির অনেকেরই মনে হচ্ছে, লক্ষ্মীরতন শুক্লার হাতে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। লক্ষ্মী ফাইটার। সঙ্গে বাংলার সর্বকালের অন্যতম সেরা ম্যাচ উইনার। এই টিমের একমাত্র দাওয়াই।

কিন্তু তাতেও হবে কি না কে জানে? উল্টে ম্যাচ রিপোর্ট লিখতে গিয়ে, বেশ কিছু দিন আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। যা চর্মচক্ষে দেখা। স্থানীয় ক্রিকেটে বড়িশা বনাম ইস্টবেঙ্গল নকআউট খেলা। বড়িশা হেরে গিয়েছে। ক্লাবহাউস লিফটে সৌরভের সঙ্গে সে দিন দেখা হতেই বড়িশা টিমের দেখভালের দায়িত্বে থাকা তাঁর বন্ধু সঞ্জয় দাস বলে ফেলেন, “হেরে গেলাম ম্যাচটা।” তা, সৌরভ সে দিন শুনেটুনে বলেছিলেন, দু’টো ‘বি’ কোয়ার্টার ফাইনাল খেললে তাঁর খুব চাপ লাগে। সঞ্জয় পাল্টা জিজ্ঞাসা করেন, ‘‌‘দু’টো বি মানে?’’ সৌরভ বলেন, বড়িশা আর বাংলা! কী বলতে চেয়েছিলেন সে দিন সৌরভ? বাংলা টিমে যথেষ্ট মশলা নেই? হায় রে বাংলা! 

[আরও পড়ুন: দলে সুযোগের টোপ দিয়ে পাক মহিলা ক্রিকেটারকে যৌন হেনস্তা! অভিযুক্ত কোচ সাসপেন্ড]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ