Advertisement
Advertisement

Breaking News

Sachin Tendulkar

‘২৬-১১ হামলার ধাক্কা ভুলিয়ে দিয়েছিল’, শচীনের বেড়ে ওঠার গল্প রাজদীপ সরদেশাইয়ের কলমে

'ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে করা শচীনের সেঞ্চুরিটাই সবচেয়ে অর্থবহ ছিল', লিখলেন রাজদীপ।

Rajdeep Sardeshai writes about Sachin Tendulkar | Sangbad Pratidin
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:April 22, 2023 10:34 pm
  • Updated:April 23, 2023 3:45 pm

রাজদীপ সরদেশাই: শচীন তেণ্ডুলকরকে প্রথম দেখি ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে। যখন ওর দাদা অজিত মুম্বই ময়দানে চলা একটা ক্লাব ম্যাচে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। ছোট্ট শচীনের তখন মাথায় কোঁকড়া, কোঁকড়া চুল। লাল চিবুক। দেখে মনে হচ্ছিল, নার্সারির একটা বাচ্চা। হাতে বেঢপ সাইজের একটা ব্যাটে আর বল নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিল টিম টেন্টের চারদিকে। চা বিরতির সময় কেউ একজন ওকে বল ছুড়ে ছুড়ে দিচ্ছিল। প্রায় সব থ্রো ডাউনই ও মাঝ ব্যাট দিয়ে খেলছিল। আর একটা শট তো এত জোরে মেরেছিল যে, আমরা কয়েক জন লাফিয়ে উঠে সরে গিয়েছিলাম। ওইটুকু একটা বাচ্চা ছেলে কিনা জুনিয়র ক্রিকেটারদের চেয়েও ভাল বলকে হিট করছে! আগামী দিনে উত্তরটা পেয়ে গিয়েছিলাম আমরা। শচীন রমেশ তেণ্ডুলকর, যাকে কি না ওর সতীর্থরা ‘তেণ্ডলা’ বলে ডাকে, তার জন্মই হয়েছিল ক্রিকেট খেলার জন্যে।

শচীনের উল্কা গতির উত্থান মুম্বই আর ভারতের ক্রিকেট রোম্যান্টিকদের কাছে অত্যন্ত শ্লাঘার বিষয়। মনে হত, শচীনের অসামান্য ক্রিকেট সফরের অংশ যেন আমরা সবাই। ১৯৮৮ সালের এক ডিসেম্বরের কথা মনে আছে, যে দিন কি না শচীন আমার পেশাদারি দুনিয়ায় আচমকা ঢুকে পড়েছিল। তার কয়েক সপ্তাহ আগেই ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’য় যোগ দিয়েছিলাম। যখন জানতে পারলাম যে, পনেরো বছরের শচীন রনজি অভিষেক করতে চলেছে মুম্বইয়ের হয়ে, ম্যাচটা ঘিরে উত্তেজনা আর আলোচনার শরিক হয়ে গিয়েছিলাম আমি। আমি আমার এডিটর ড্যারিল ডি’মন্টেকে গিয়ে অনুরোধ করি যে, দুপুরে ছুটি নিয়ে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যাব। ড্যারিলের তেমন আগ্রহ ছিল না ক্রিকেটে। আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘স্থানীয় ম্যাচে এত স্পেশ্যাল কী আছে?’’ উত্তরে আমি বলেছিলাম, ‘‘বিশ্বাস করুন স্যর, ম্যাচটা স্পেশ্যাল। কারণ শচীন তেণ্ডুলকর স্পেশ্যাাল।’’ যা শুনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাকে ওয়াংখেড়েতে কিছুক্ষণের জন্য যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন উনি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘আমাদের আকাঙ্ক্ষা-সীমা’, ৫০তম জন্মদিনের আগে শচীনকে শুভেচ্ছা ঊষা ঊত্থুপের]

ভাগ্য ছিল বটে আমার। আমি যখন স্টেডিয়ামে ঢুকছি, সবেমাত্র একটা উইকেট পড়েছে আর শচীন নামার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। শচীনের বয়স তখন এতটাই কম যে, দেখে মনে হবে বাইশ গজে না নেমে এর এখন ক্লাসে বসে অঙ্ক করা উচিত। কয়েক ওভারের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গেল যে, এক টুকরো ক্রিকেট ইতিহাস আমাদের সামনে রচিত হতে চলেছে। আহামরি বোলিং আক্রমণ ছিল না গুজরাতের। ওদের বোলারদের সাধ্য ছিল না শচীন তেণ্ডুলকর নামক এক বিস্ময় বালককে থামানোর। শচীন রনজি অভিষেকে সেঞ্চুরি করতে চলেছে, এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়া মাত্র গ্যালারিতে দর্শকসংখ্যা বাড়তে শুরু করে দিল। মারাঠিতে সেঞ্চুরিকে ‘সম্ভর’ বলে। যে শব্দটার সঙ্গে বেড়ে উঠেছে শচীন।

Advertisement

সে দিন বিকেলে উচ্ছ্বাসে ভাসতে ভাসতে অফিস ফিরেছিলাম আমি। ফিরে সোজা ড‌্যারিলের ঘরে ঢুকে পড়েছিলাম। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘‘স্যর, আগামীকালের জন্য কি আমি শচীন নিয়ে একটা ফিচার রিপোর্ট লিখতে পারি?’’ ড্যারিল প্রথম দিকে খুব একটা নিশ্চিত ছিল না ব্যাপারটা নিয়ে। শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছিল ড্যারিল। আমাকে আটশো শব্দের একটা লেখা লিখতে দিয়েছিল। পরের দিন কাগজের প্রথম পাতায় আমার নাম-সহ একটা প্রতিবেদন ছাপা হয় শচীন নিয়ে। যার শিরোনাম ছিল, একটি তারার জন্ম। সেটাই আমার জীবনের প্রথম পাতায় প্রথম বাইলাইন লেখা। এবং সেটা একমাত্র শচীন তেণ্ডুলকরের জন্যে। জীবনে তার পর আমার নানা ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে। কিন্তু আনন্দের স্থায়ী সূচক হিসাবে একটা ব্যাপার চিরন্তন থেকে গিয়েছে– সেটা হল শচীনকে ব্যাট করতে দেখা। মুম্বই থেকে ম্যাঞ্চেস্টার। চেন্নাই থেকে পারথ। শচীনের প্রতিটা ‘সম্ভর’-এ যেন সেই কিশোরকে খুঁজে পেতাম, যার কখনও বয়স বাড়বে না।

[আরও পড়ুন: শচীনের ব্যাট নিয়েও খেলেছি: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ]

২৬-১১’র পর মুম্বইয়ের জীবনযাত্রা কী রকম নড়ে গিয়েছিল, মনে আছে আমার। ওই ঘৃণ্য সন্ত্রাসের কারণে, আমি আমার এক স্কুলের বন্ধুকে হারিয়েছিলাম, কলেজের এক বন্ধুকে হারিয়েছিলাম, হারিয়েছিলাম আরও অনেক চেনা-জানা লোকজনকে। তার কয়েক সপ্তাহ পর শচীন টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরি করে ভারতকে ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছিল ইংল‌্যান্ডের বিরুদ্ধে। সে দিন যখন সেঞ্চুরির পর আকাশের দিকে ব্যাট তুলেছিল শচীন, সন্ত্রাসে রক্তাক্ত মুম্বইকে কিছুক্ষণের জন‌্য যেন ভুলতে পেরেছিলাম আমরা, যন্ত্রণাকে কিছুক্ষণের জন্য হারাতে পেরেছিলাম খেলার আনন্দ দিয়ে, প্রলেপ লাগাতে পেরেছিলাম নিজেদের আত্মায়। মনে আছে, সে দিন শচীনকে ছোট্ট একটা মেসেজ করেছিলাম। লিখেছিলাম, থ্যাঙ্ক ইউ শচীন। পুরোটাই ছিল কিছুক্ষণের জন্য শোক ভোলানো ওর প্রয়াসের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। শচীন একটা স্মাইলি পাঠিয়েছিল উত্তরে, প্রায়ই পাঠাত যেমন। আসলে শচীন যত উপরে উঠেছে, যত অনতিক্রম্য সব শৃঙ্গ ছুঁয়েছে, তত যেন মাটিকে আঁকড়ে ধরেছে ওর পা। পরে শচীন বলেছিল যে, ওর একশোটা সেঞ্চুরির মধ্যে সে দিনের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে করা সেঞ্চুরিটাই সবচেয়ে অর্থবহ ছিল!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ