দীপ দাশগুপ্ত: সোজা কথাটা সোজাসুজি ভাবে গোড়াতেই বলে নিই। অঘটন না ঘটলে শনিবার ওয়ান্ডারার্সেই ভারত ওয়ান ডে সিরিজ জিতছে।
আজ পর্যন্ত আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কোনও সিরিজ জিতে ফিরতে পারিনি। না টেস্ট, না ওয়ান ডে। পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের সিরিজ জয়ের সেই খরা এবার খুব সম্ভবত কাটতে চলেছে। এটা ঠিক যে, ক্রিকেটে কিছুই বলা যায় না। দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ তিনটে ওয়ান ডে জিতে ভারতের সিরিজ জয়ের সুযোগ আটকে দেবে, খাতায়-কলমে এরকম সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। কিন্তু সেটা পুরোটাই ঘোরতর কঠিন আর অবাস্তব ভাবনাও বটে।
কেউ বলতে পারেন, ওয়ান্ডারার্সে এবি ডে’ভিলিয়ার্স ফিরছে। ভারতের সিরিজ জয় সম্পর্কে এত নিশ্চিত তাহলে হচ্ছি কী করে? আমরা মতে, দক্ষিণ আফ্রিকা টিমটার যা অবস্থা তাতে একটা এবিডি ওদের বাঁচাতে পারবে না। ও বিরাট ক্রিকেটার। আমাদের টিমে বিরাট কোহলি যেমন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ডে’ভিলিয়ার্স তাই। কিন্তু ও বড়জোর কী করতে পারে? একটা দিক ধরে রেখে বড় রান করতে পারে। কিন্তু উল্টো দিকের উইকেট পড়া তো আর বন্ধ করতে পারবে না!
আসলে দক্ষিণ আফ্রিকা না পারছে বিরাটকে আটকাতে, না ওদের ব্যাটসম্যানরা পারছে আমাদের দুই রিস্ট স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল আর কুলদীপ যাদবকে খেলতে। স্পিনারকে খেলার আগে তাকে পিক করতে হয়। তারপর খেলতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটসম্যানরা কুলদীপদের পিক-ই করতে পারছে না, তো খেলবে কী? কোহলির সামনে ওদের বোলারদের আবার একই অবস্থা হচ্ছে। কাগিসো রাবাদা, মর্নি মর্কেল ঠিক আছে। ওরা ভাল বোলার। কিন্তু বাকিরা? ফেলুকায়ো কিংবা ক্রিস মরিস খুব, খুব সাধারণ। ইমরান তাহির র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর রিস্ট স্পিনার হতে পারে। কিন্তু কোহলি, ধাওয়ানকে বল করে ও এক নম্বর হয়নি। এমনিতেই রিস্ট স্পিনার হিসেবে কুলদীপ-চাহালরা তাহিরের চেয়ে অনেক ভাল। তার উপর যেখানে কুলদীপদের শুরুর দিকেই কোহলি আনছে, সেখানে তাহিরকে ওদের ক্যাপ্টেন এডেন মারক্রাম আনছে পরের দিকে। যখন কোহলি ৪০ ব্যাটিং বা শিখর ৫০ ব্যাটিং। কী করবে তখন তাহির?
আর তাই দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ান ডে সিরিজ বাঁচানোর কোনও সম্ভাবনা আমি দেখতে পাচ্ছি না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারত যদি ওয়ান ডে সিরিজ ৬-০ জেতে, ব্যাপারটা একইরকম বড় মাপের হবে। আর ভারত যদি সিরিজটা ৬-০ বা ৫-১’ও জিততে পারে, আশেপাশে যে কথাটা চলছে, সেটাও থেমে যাবে। অনেকেই বলাবলি করছেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকার একটা ডে’ভিলিয়ার্স খেলছে না। একটা ফাফ দু’প্লেসি খেলছে না। কুইন্টন ডি’কক খেলছে না। এরকম ভাঙাচোরা একটা টিমের বিরুদ্ধে জয় আর কতটা মর্যাদার? ভারত সিরিজ ৬-০ জিতলে যা পুরো চাপা পড়ে যাবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ান ডে ম্যাচের পিচগুলোও ভারতের এত ভাল খেলার একটা কারণ। কেপটাউনের ব্যাপারটা বুঝতে পারি যে, ওখানে জল নেই। লোকে খাওয়ার জল পাচ্ছে না। পিচেও ভাল করে জল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু বাকি পিচগুলো? সেগুলো কেন এত স্লো? দক্ষিণ আফ্রিকা এমন পিচ বানিয়েছে যেখানে ভারতীয় ব্যাটসম্যান-বোলারদেরই সুবিধে হয়ে যাচ্ছে। আর ওরা নিজেরা পড়ছে মুশকিলে। আরও একটা ব্যাপার আছে। কয়েক বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় একটা অদ্ভুত ব্যাপার চালু হয়েছে। যে, প্লেয়িং ইলেভেনে পাঁচজন অ-শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটার রাখতেই হবে। এতে ওদের টিমটার ক্ষতি আরও হচ্ছে। স্পোর্ট এমন একটা সাবজেক্ট, যেখানে সব কিছু মেধায় হয়। প্রতিভায় হয়। সেখানে যদি কোনও ক্রিকেটার দেখে যে তার পাশে ড্রেসিংরুমে যে বসে আছে, সে রিজার্ভেশনে টিমে ঢুকেছে-সেই ড্রেসিংরুমের আবহাওয়া ভাল হওয়া সম্ভব? দক্ষিণ আফ্রিকা পেসার কাইল অ্যাবটকে নিশ্চয়ই মনে আছে সবার।
শুনলাম, ওদের সরকারের এহেন অদ্ভুত নীতির জন্য অ্যাবট বলে দিয়েছে যে, টিম যখন ওর খেলা নিয়ে কোনও নিরাপত্তা দিতে পারবে না, তাহলে ও-ও আর দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলবে না। যত দূর জানি, অ্যাবট এখন ইংল্যান্ডে খেলছে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ফেলুকায়োদের চেয়ে যে কিনা দক্ষিণ আফ্রিকার হাজার গুণ ভাল অপশন হতে পারত। একে তো শুনছি ওদের পরবর্তী প্রজন্মে দারুণ কোনও ক্রিকেটার নেই। তার উপর এরকম নীতি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার পড়ে থাকলে, আরও সমস্যা।
আসলে কী জানেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সব ফর্ম্যাটে বিশ্বের সেরা টিম। বাকিরা যেখানে শুধু নিজেদের দেশে জেতে, ওরা সেখানে নিজেদের দেশে তো বটেই, বাইরেও বাকিদের চেয়ে বেশি জেতে। আর তাই ভয়টা হচ্ছে। বারো-পনেরো বছর আগে যে জিম্বাবোয়ে ছিল, তার ছিটোফোঁটাও আজ আর নেই। শ্রীলঙ্কা এখন আর দরের কোনও টিমই নয়। যত দিন যাচ্ছে, ক্রিকেটবিশ্বে তত ভাল টিমের সংখ্যা কমছে। এবার যদি দক্ষিণ আফ্রিকারও একই অবস্থা হয়, ক্রিকেটের জন্য তার চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না।
আর তাই, ভারতের দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম সিরিজ জয়ের প্রবল সম্ভাবনা আমাকে সেই আনন্দ দিতে পারছে না, যা আমার হওয়া উচিত।
ভিডিওতে দেখুন কীভাবে আজকের ম্যাচের জন্য তৈরি হচ্ছে কোহলি-ব্রিগেড:
[ভারত বনাম দ: আফ্রিকা, চতুর্থ ওয়ান ডে দেখুন বিকেল ৪.৩০ মিনিট থেকে সরাসরি সোনি টেন ১ ও ৩-তে।]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.