দুলাল দে ও সোম রায়: এক অদ্ভুত বাতাবরণ। মহানায়কের প্রস্থানের দিনে ডার্বির আবহ যেন গ্রাস করে ফেলেছিল সবুজ-মেরুনকে। প্রচারের দৌলতে সকলেই প্র্যাকটিসের শুরুতে জেনে গিয়েছিলেন সোনি আর এবার তাঁদের মধ্যে থাকছেন না। ডার্বিতে খেলার তো প্রশ্নই নেই। ক্রোমা আগেই বিদায় নিয়েছেন। তাই যাবতীয় স্বপ্নের জাল যেন সকাল থেকেই সমর্থকরা মনের অজান্তে বুনে চলেছিলেন আক্রম, ডিকাদের ঘিরেই। সমর্থকদের মতে আক্রম, ডিকা ঠিক কালকে গোল করে দলকে সঠিক নিশানায় পৌঁছে দেবেন। গত ডার্বির মতোই এবারের চালচিত্র মোটামুটি এক। সেবারে ফুটবল বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে কতিপয় সংবাদমাধ্যমও এগিয়ে রেখেছিল ইস্টবেঙ্গলকে। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটছে না। গতবার থেকে এবারের পার্থক্য শুধু একটা জায়গাতেই, সেবার মোহনবাগানে ইউটা বাদে সকলেই ছিলেন ফিট। এমনকী দলের সুপারস্টার সোনির খেলা নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। এবারে যা কোনওটাই ঘটছে না। অর্থাৎ সোনি তো খেলবেন না। পাশাপাশি ইউটারও খেলার কোনও সম্ভাবনা নেই। তার মানে ভাঙাচোরা দলকে নিয়েই কাল নামতে হবে শঙ্করলালকে। যদি ম্যাচ ড্রও করতে পারেন তাহলেও নৈতিক জয় হবে মোহনবাগানের। পাশাপাশি, মিনার্ভার কাছে হারার যন্ত্রণাও কিছুটা লাঘব ঘটবে। অন্তত সভ্য সমর্থকরা বলতে পারবেন, এ মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের থেকে তারা এগিয়ে। যেহেতু গত দু’টো ম্যাচের মধ্যে একটা ড্র হয়েছে। অপরটি জিতেছে মোহনবাগান।
এদিন সকাল থেকেই স্টেডিয়ামে সবুজ মেরুন সমর্থকদের আনাগোনা ছিল দেখার মতো। কর্তারাও ভিড় জমিয়েছেন। দলের যা পরিস্থিতি তাতে ধরে নেওয়া যায় গোলে শিল্টন। ডিফেন্সে অরিজিৎ, কিংশুক, কিংসলে, রিকি। মাঝমাঠে নিখিল, রেনিয়ার, ওয়াটসন ও শেখ ফৈয়াজ। সামনে থাকবেন আক্রম ও ডিকা। সম্প্রতি খুব একটা ফর্মে নেই ডিকা। গোলও তেমন পাচ্ছেন না। তবু অনেকে মনে করছেন ডার্বির মঞ্চেই নিজেকে মেলে ধরবেন ডিকা। আসলে আক্রমের দিকে সকলের নজর থাকবে বেশি। লাল-হলুদ শিবির চাইবে আক্রম যাতে বল না ধরে। কারণ লেবানিজ স্ট্রাইকার এখনও দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন। তাই ডিকার দিকে তেমন নজর থাকার কথা নয়। সেই সুযোগটাই নিতে পারেন ডিকা। এমনই ধারণা মোহনবাগান শিবিরের।
অন্যদিকে, শত্রু শিবিরে ‘শনির’ দশার মধ্যে উজ্জীবিত ইস্টবেঙ্গল। ২৪ ঘণ্টা বাদে বড় ম্যাচ। তার আগে রীতিমতো ফুটছে ইস্টবেঙ্গল। সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। সবার ধারণা, এবারের ডার্বি ইস্টবেঙ্গলই জিতবে। তাই শনিবার প্র্যাকটিসে এসেছিলেন বহু ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। সঙ্গে ড্রাম, ঢাক। বলতে দ্বিধা নেই, ডার্বি ঘিরে প্রবল আত্মবিশ্বাসী ইস্টবেঙ্গল। বড় ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষ এবং চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান সমস্যায় জর্জরিত। তাদের সেরা ভরসা সোনি নর্ডি খেলবেন না। ইউটা নেই। তার উপর একের পর এক ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট। তবু ইস্টবেঙ্গল কিন্তু মোহনবাগানকে হাল্কাভাবে নিচ্ছে না।
এদিন সকালে ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিল ড্রেসিংরুমে দীর্ঘক্ষণ ফুটবলারদের ক্লাস নিলেন। আলোচনা করলেন ডার্বি নিয়ে। যাতে কোনওভাবেই যেন ফুটবলারদের মধ্যে আত্মতুষ্টি চলে না আসে। বারবার তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, দলটার নাম মোহনবাগান। এটাই যথেষ্ট। কোনওরকম হালকা মনোভাব দেখানোর প্রশ্ন নেই। যেভাবে লিগের বাকি ম্যাচগুলি খেলেছেন, তাঁরা ঠিক সেভাবেই খেলবেন। খালিদ জামিল বলছিলেন, “সোনি নর্ডি না খেললেও মোহনবাগান ভীষণ শক্তিশালী দল। ওরা হয়তো পয়েন্ট করেছে। কিন্তু ওদের হাল্কাভাবে নেওয়ার কোনও জায়গা নেই।”
ইস্টবেঙ্গল কোচের পরিষ্কার বক্তব্য যে, সোনি ছাড়াও মোহনবাগানে এমন কয়েকজন ফুটবলার রয়েছেন, যাঁরা ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন। সেই কারণেই ফুটবলারদের পইপই করে বলে দিয়েছেন সতর্ক থাকতে। ইস্টবেঙ্গল যেমন ডার্বিতে নতুন বিদেশি ডুডুকে সামনে রেখে আক্রমণভাগ সাজাচ্ছে, সেখানে মোহনবাগানও তাদের নতুন বিদেশি আক্রমকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। খালিদ বলছিলেন, “আক্রম ভাল ফুটবলার। বছর কয়েক আগে দেখেছিলাম। গোলটা চেনে।” আক্রমকে নিয়ে কী আলাদা কোনও পরিকল্পনা করছেন, এই প্রশ্নের জবাবে ইস্টবেঙ্গল কোচ জানালেন, “আমরা প্রতিটি ফুটবলারের জন্য যেমন পরিকল্পনা করছি, তেমনই আক্রমের জন্যও পরিকল্পনা রয়েছে।” ডুডুকে রেখেই দল সাজাচ্ছেন? জবাবে খালিদ বললেন, “ডুডু প্র্যাকটিস করছে। ভাল ফুটবলার। এখনও পর্যন্ত টিম কম্বিনেশন ঠিক করিনি। দেখা যাক কী হয়। তবে মোদ্দা কথা হল, জিততে হবে। এছাড়া আর কোনও পথ নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.