Advertisement
Advertisement

মহাডার্বিতে খালিদের তুকতাক শেষপর্যন্ত পৌঁছল হাতাহাতিতে

বাগানের দাবি ড্রেসিংরুমের সামনের দেওয়ালে আঁকিবুকিও কাটেন খালিদ।

Eb coach Khalid Jamil is in controversy on derby match
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 4, 2017 4:59 am
  • Updated:December 4, 2017 8:46 am

সোম রায়: বড় ম্যাচ মানেই নাটক। দিনভর একের পর এক রোমাঞ্চকর চিত্রনাট্য। ক্লাইম্যাক্স-অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘সেলুলয়েড’ হয় আয়তাকার সবুজ মাঠ। কিন্তু রবিবার ম্যাচ শুরুর অনেক আগে থেকেই ডার্বিকে ঘিরে চলল ঘটনার ঘনঘটা। যার বেশিরভাগের নেপথ্যে খালিদ জামিল। ম্যাচে হার, তুকতাক হোক বা তাকে কেন্দ্র করে ঝামেলায় জড়িয়ে ম্যাচের পর দর্শক থেকে কর্তা, সবার কাছে ভিলেন হয়ে যাওয়া। গোটাটা জুড়েই রইলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক লাল-হলুদ কোচের সারাদিনের কাজ ও তাতে তৈরি হওয়া বিভিন্ন বিতর্কের দিকে।

[জানেন, কেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইনিংস ডিক্লেয়ার করলেন বিরাট?]

দৃশ্য ১ : রবিবার সকাল সাড়ে আটটা। তখন যুবভারতীতে ম্যাচ আয়োজনের লাস্ট মিনিট টাচ আপ দিতে ব্যস্ত মোহনবাগানের কর্মীরা। হঠাৎ মাঠে উপস্থিত খালিদ। তাঁকে দেখে অবাক সবাই। যা আরও বাড়ল খালিদের কথা শুনে। মোহনবাগান মিডিয়া ম্যানেজার ইমরান খানের দাবি অনুযায়ী সকাল সকাল মাঠে এসেই ড্রেসিংরুমে যাওয়ার দাবি জানান খালিদ। বলেন, ব্যাগ রাখবেন। সবথেকে বড় কথা দু’টো ড্রেসিংরুমের তালাই খুলতে বলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। তাঁকে সরাসরি বারণ করা হয়। রাগে গজগজ করতে করতে বাগান মিডিয়া ম্যানেজারকে নাকি শাপশাপান্ত করতে করতে মাঠ ছাড়েন খালিদ।
দৃশ্য ২ : বিকেলে ডার্বির পর সাংবাদিক সম্মেলনের জন্য খালিদকে ডাকতে ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমের সামনে যান মোহনবাগান মিডিয়া ম্যানেজার। একেই ম্যাচ হেরে মেজাজ সপ্তমে। তার উপর সামনে তাঁকে দেখে আরও চটে যান ইস্টবেঙ্গল কোচ। গালিগালাজ করে বসেন। কড়া ভাষায় আপত্তি জানান বাগান মিডিয়া ম্যানেজার। এতেই যেন খালিদের উত্তপ্ত মেজাজে ঘি পড়ে। শুরু হয়ে যায় বচসা। ইমরানকে ধাক্কা মেরে বসেন খালিদ। কোচকে থামাতে সেখানে ছুটে আসেন লাল-হলুদের সহকারী কোচ রঞ্জন চৌধুরি। শুরুতে ইস্টবেঙ্গল কোচের নামে এফআইআর করার কথা ভাবলেও পরে ম্যাচ কমিশনারকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েই থামে মোহনবাগান।

Advertisement

Khalid_web

Advertisement

এই দুই ঘটনা ছাড়াও সারাদিন ধরে নির্দিষ্ট নিয়মেই চলল খালিদের বিভিন্ন সংস্কার। টিমবাসে আসার কথা থাকলেও না আসা। ম্যাচ শুরু হয়ে যাওয়ার পর রিজার্ভ বেঞ্চে এসে বসা। দলে নতুন কিট স্পনসর এলেও কলকাতা লিগে ব্যবহার করা পুরনো কিট স্পনসরের জার্সি গায়ে চাপিয়েই মাঠে যাওয়া। সবই চলল টিপিক্যাল খালিদ-স্টাইলে। মোহনবাগানের দাবি অনুযায়ী, তাদের ড্রেসিংরুমের সামনের দেওয়ালে কিছু আঁকিবুকিও কেটে যান খালিদ! এদিকে, মরশুমের শুরু থেকেই খালিদের মধ্যে নইমের ছায়া দেখেছিলেন অনেক কর্তা। কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সবকিছু চলছিল ভালভাবেই। কিন্তু সেই মধুচন্দ্রিমা কাটছে ক্রমশ। এতদিন খালিদ সম্পর্কে গোপনে বিরক্তি প্রকাশ করতেন অনেক শীর্ষকর্তা। তবে একটা হারেই যেন পাল্টে গেল অনেক কিছু। অনেককেই বলতে শোনা গেল, এভাবে চলতে থাকলে ক্লাবে আর বেশিদিন ‘আয়ু’ নেই এই কোচের। এখনই প্রকাশ্যে খালিদকে হলুদ কার্ড না দেখালেও বডি ল্যাঙ্গোয়েজে সতর্কবার্তা দিয়ে রাখলেন কেউ কেউ। মোহনবাগান সদস্য, কর্তা, কর্মীরা যখন খালিদের ব্যবহার নিয়ে অগ্নিশর্মা, তখন বিষয়টা হালকা করতে এগিয়ে এলেন ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার। মোহনবাগান অর্থসচিব দেবাশিস দত্তকে তিনি বলেন, “তোমরা তো চিঠি দিয়েছ। বেকার কেন বিষয়টা বাড়াচ্ছ?” পাশে থাকা ফুটবল সচিবকে প্রশ্ন করা হয়, দলে বাঙালি না থাকাটা কি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াল? হতাশ হয়ে রজত গুহ বললেন, “অবশ্যই হল। তবে কোচ যদি ওদের না খেলায় তাহলে কী আর করার আছে?”

[OMG! ধোনির কন্যা জিবার এই প্রতিভাও রয়েছে!]

ফুটবল সচিবের আফসোসের সুরই টানলেন সদ্য ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। বলছিলেন, “এই ম্যাচে বাঙালি ছেলেদের তাগিদ একটা আলাদা কাজ দেয়। সেটাই তো ছিল না। এসব দিনে বড় কষ্ট লাগে। বলতে বাধ্য হচ্ছি আজ ওরা টিমগেম খেলেছে। আমরা পারিনি।” একটু থেমে জুড়লেন, “সুপারস্টিশন সবার থাকে। কিন্তু সেটা ফুটবলের থেকে বেশি হয়ে গেলেই সর্বনাশ। তাহলে প্র‌্যাকটিসের কী দরকার? তুকতাক করে গেলেই তো হয়। থাক, বেশি বলে লাভ নেই। আমরা পুরনো দিনের তো! ফুটবলটা কম বুঝি।” চূড়ান্ত খারাপ দিনেও সাধারণত ফুটবলারদের দোষারোপ করেন না খালিদ। এদিন সেখানেও একটু তাল কাটল। এমনিতে প্লাজা, চার্লস-সহ অন্যদের আড়াল করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু এর মাঝেই একবার মুখ ফসকে বেরিয়ে এল মনের কথা। হাজার চেষ্টা করেও যাতে ধামাচাপা দিতে পারলেন না। বললেন, “ছেলেদের থেকে একশো শতাংশ আশা করেছিলাম।” তাহলে কি তা পাননি? অনেক ইনিয়েবিনিয়ে বলার চেষ্টা করলেন যে তিনি এই কথা বলতে চাননি। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ড্রেসিংরুমে অবশ্য ভেঙে না পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন ফুটবলারদের। বলেছেন, সবে দ্বিতীয় ম্যাচ। এত হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সোমবারই সবাইকে ক্লাবে ডেকেছেন। চেয়েছেন প্রথম দুই ম্যাচের ভিডিও। শিলং লাজং ম্যাচের আগে হাতে এখনও দিনছয়েক। তার আগে উঠে দাঁড়াতে ফুটবলারদের কোন মন্ত্র দেন খালিদ সেটাই দেখার। তবে এটা স্পষ্ট ইস্টবেঙ্গল কোচের হটসিটের তাপ এবার বাড়ছে গতবারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন কোচের কাছে!

[কিংসলের নায়ক হয়ে ওঠার দিনে পুরনো ভালবাসা ফিরে পেলেন শিল্টন]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ