সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তাঁদের জন্য ‘মওকা মওকা’ ভিডিও বানাননি কেউ। তাঁদের কথা, তাঁদের খেলার গতিপ্রকৃতি কখনও জানতেও চাওয়া হয়নি দেশের তাবড় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের কাছে। এমনকী ভারতীয় ক্রিকেট টিম বলতে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে বিশেষ পেজটি রয়েছে, সেখানেও তাঁদের নাম নিশানা নেই। সহাস্য বিরাট কোহলিরা সে জায়গা দখল করেছেন। ক্রিকেট যদি এ দেশে ধর্ম হয়, তবে একতাদের পারফরম্যান্স যেন ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত। তবু পিচের ঘূর্ণিই বলেছে শেষ কথা। পাকিস্তানের এক একজন মহিলা ব্যাটসম্যান যখন তাঁর স্পিনে বেসামাল হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরছিলেন, তখন এই দেশব্যাপী অবমাননার একটা একটা করে উত্তর যেন দিচ্ছিলেন একতা বিস্ত। আর সেই সাফল্যেই এখন ভিড় উপচে পড়ছে তাঁর বাবার চায়ের দোকানে।
[ জানেন, কেন এমন চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন বুমরাহর দাদু? ]
একতার বাবা চা দোকানের উপার্জনে সংসার গুজরান করেন? এ তথ্য হয়তো সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতবাসী এই প্রথম জানলেন। তাই-ই হওয়ার কথা। কেননা তাঁদের নিয়ে কোথাও তো কোনও উচ্ছ্বাস নেই। কোনওদিন তাই তাঁদের জীবনের কাহিনি আট কলমে প্রকাশের কথা ভেবে ওঠেননি হয়তো কেউ। কিন্তু ওই একটা স্পেলই যেন অনেককিছু বদলে দিয়েছে। শুধু ভারতকে বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচই জেতায়নি, ভিতরের পাতা থেকে একতাদের নিয়ে এসেছে প্রথম পাতায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিংয়ের লিস্টেও তাঁরাই এগিয়ে। নড়বড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে যখন মহা দাপুটে কোহলিরা পরাজয় মেনে নিচ্ছেন, তখন দেশ জুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু একতা বিস্ত আর তাঁর দুরন্ত পারফরম্যান্স। সে আলোচনার ঢেউ গিয়ে পৌঁছেছে তাঁর বাবার চায়ের দোকানেও। হ্যাঁ, আলমোড়ায় এক চায়ের দোকানের মালিক একতার বাবা কুন্দন সিং বিস্ত। ছিলেন ভারতীয় সেনায়। আটের দশকের শেষদিকে যখন অবসর নেন তখন পেনশন মোটে ১৫০০ টাকা। তাতে ভাইবোন একতাকে বড় করে তোলা সম্ভব নয়। তখন এই চায়ের দোকানই ভরসা হয়ে ওঠে কুন্দনের। এদিকে মেয়ের ক্রিকেট খেলার বেজায় শখ। এতটাই ইচ্ছে যে ছেলেদের সঙ্গেই মাঠে নেমে পড়ত। সব ছেলের সঙ্গে একটা মেয়ে খেলছে দেখে হাঁ হয়ে যেতেন সক্কলে। মেয়ের এই স্বপ্নকে নষ্ট হতে দেননি কুন্দন। যত কষ্টই হোক না কেন, খরচ জুগিয়েছেন। কালে কালে মেয়ে নাম করেছে। এখন তো আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ও চর্চিত নাম একতা বিস্ত।
[ ‘মুখ বন্ধ রাখলেই কোহলিদের কোচ হওয়ার সুযোগ পাবেন শেহবাগ’ ]
একদিন স্পনসর ছিল না। ভবিষ্যতেরও কোনও ঠিক ছিল না। ধোঁয়াশার ভিতরও স্বপ্ন দেখতে ভোলেননি কুন্দন। আর মেয়ের মধ্যেও চারিয়ে দিয়েছেন সেই স্বপ্ন ও জেদ। আজ সাফল্যের রোশনাই যেন মানুষের শুভেচ্ছা হয়ে এসে দাঁড়াচ্ছে চায়ের দোকানে। আর প্রতি শুভেচ্ছা বলে যাচ্ছে, যত বঞ্চনাই থাক, ফাইট একতা ফাইট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.