সুলয়া সিংহ: ঘড়ির কাঁটায় তখন ১১টা ১৫। সাংবাদিক সম্মেলনের মাঝে হঠাৎই ইংল্যান্ড কোচ স্টিভ কুপার বলে উঠলেন “ওহ, আমার স্ত্রী বোধহয় ফোন করছেন। এই সময়ই ফোন করে থাকেন সাধারণত।” তারপরই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ঠাট্টা করে বললেন, “আমি এত গম্ভীর কেন?” চোখ মুখে যেমন দীর্ঘ পরিশ্রমের ছাপ রয়েছে, ঠিক তেমনই ট্রফি জয়ের উচ্ছ্বাসটাও স্পষ্ট। হাসি মুখে বলেই দিলেন, “আজ ড্রেসিং রুমে নিশ্চয়ই দারুণ কিছু হবে। ছেলেদের তার প্রাপ্যও। যেভাবে গোটা টুর্নামেন্টে পারফর্ম করল।” উয়েফা অনূর্ধ্ব ১৭ ইউরোপ সেরার বদলা যে এত মধুর হবে, তা হয়তো ভাবেননি কুপারও।
ম্যাচ শেষে যখন উচ্ছ্বাস আর উল্লাসে ফেটে পড়ছিল ব্রিউস্টাররা, তখন স্পেনের মাতেও জাউমের কান্না থামানোই যাচ্ছিল না। মাঠে শুয়ে পড়ে অঝোরে কেঁদে চলেছে সে। সতীর্থরা এসেও তাকে সামলাতে পারছিল না। হতাশ হওয়ারই তো কথা। এই নিয়ে চতুর্থবার তীরে এসে তরি ডুবল যে। অনেকটা ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো। অদৃশ্য এক ‘চোকার্স’ তকমা গায়ে চাপিয়েই এবারও যুব বিশ্বকাপ শেষ করল অ্যাবেল রুইজরা। এগিয়ে থেকেও যে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে, যেন আশা করেনি যুবভারতীর গ্যালারিতে লাল-হলুদ পতাকাধারী সমর্থকও।
দুই গোল হজম করে পাঁচ-পাঁচটা গোল করা তো আর মুখের কথা নয়। এমন অবস্থায় অনেক দলেরই শিরদাঁড়া নড়বড়ে হয়ে যায়। কিন্তু যুবভারতী সত্যিই ব্রিটিশদের কাছে ‘লাকি’ হয়ে রইল। ব্রাজিল, স্পেন, মালিদের পিছনে ফেলে তিলোত্তমার বুকেই ব্রিটিশ দম্ভ প্রতিষ্ঠা পেল শেষমেশ। এ মাঠের আনাচ-কানাচ তাদের চেনা। তাই যুবভারতীও মন খারাপ হতে দেয়নি ব্রিউস্টার, ফডেনদের। যে শহরকে লন্ডন বানানোর পরিকল্পনায় একটু একটু করে এগিয়ে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়, সেই ইংল্যান্ডকে তৃপ্তি দিল যুবভারতীও। তার বুকেই দাপিয়ে খেলে সোনার বল জিতে নিল এদিনের ম্যাচের জোড়া গোলের মালিক ফডেন। ব্রিউস্টারের সঙ্গে নিশ্চিত হল আরও এক ভবিষ্যৎ তারকা।
ফাইনালের স্টেডিয়াম দেখে আপ্লুত ক্রীড়ামন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠৌরও। ভারত টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলেও ভারতীয়রা জিতিয়ে দিল ফুটবলকে। এই বিশাল মহাযজ্ঞের সফল আয়োজনে জয় হল এ দেশের ফুটবল প্রেমের। তাই নিজের দেশে ফেরার আগে কুপার বলে গেলেন, “চ্যাম্পিয়ন না হতে পারলেও দুঃখ হত না। ভারত থেকে এতটাই ভালবাসা পেয়েছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.