পর্তুগাল- ৩ (রোনাল্ডো হ্যাটট্রিক)
স্পেন- ৩ (কোস্টা ২, নাচো)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল: পর্তুগাল বনাম স্পেন নাকি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বনাম স্পেন! রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যতম হাইভোল্টেজ ম্যাচকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায় সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ফুটবল বিশ্ব। ধারে-ভারে পর্তুগালের থেকে স্পেন অনেক পোড়খাওয়া দল। আর পর্তুগিজ জাহাজের ক্যাপ্টেন রোনাল্ডো একাই একশো। কিন্তু শুক্রবারের রাত দেখল ঐশ্বরিক প্রতিভাকে। রোনাল্ডো। আর তিনি ৭ নম্বর জার্সিতে যা খেলা দেখালেন তা বহুদিন মনে রাখবে ফুটবল বিশ্ব। সোচির স্টেডিয়ামে পর্তুগিজ সমর্থকদের রোনাল্ডো রোনাল্ডো শব্দব্রহ্মে কেঁপে উঠল আকাশ বাতাস। রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক করে সপ্তম আকাশে বিরাজমান হয়ে গেলেন সিআর সেভেন। স্পেনও তাদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিক হজম করল। তাও আবার রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের ছেলের কাছে। রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকে ভর করেই স্প্যানিশ আর্মাডাকে রুখে দিয়ে যুদ্ধজয়ের আনন্দে মাতল পর্তুগাল। প্রায় হারা ম্যাচকে একার কাঁধে বের করলেন রোনাল্ডো। জলে গেল স্পেনের ডিয়েগো কোস্টার জোড়া গোল এবং নাচোর দুরন্ত শটে গোল। ম্যাচের স্কোর পর্তুগাল ৩-৩ স্পেন। রূদ্ধশ্বাস ম্যাচ ড্র করে এক পয়েন্ট নিয়েই খুশি থাকতে হচ্ছে দুই দলকে। জেতা ম্যাচ ড্র করে হাত কামড়াচ্ছেন ব়্যামোস, ইনিয়েস্তারা। অন্যদিকে, ড্রয়েই জয়ের স্বাদ পাচ্ছেন পর্তুগিজরা।
এদিনের ম্যাচে ধারে-ভারে ফুটবল বিশ্বে পোড়খাওয়া দেশ স্পেনের বিরুদ্ধে সদ্য ইউরো কাপ জয়ী পর্তুগাল। স্পেন আবার ২০১০ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও। রোনাল্ডো থাকলেও স্পেনকেই অধিকাংশ ফুটবল বিশেষজ্ঞ ফেভরিট ধরেছিলেন এই ম্যাচে। অনেকেই এই ম্যাচকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বনাম স্পেনের মহারণ আখ্যা দিয়েছিলেন। কারণ একটাই, সিআর সেভেন। নামটাই যথেষ্ট। তা দেখাও গেল মাঠে। পর্তুগালের দুটো প্ল্যান ছিল। প্রথমত, রোনাল্ডোকে বল বাড়াও। দ্বিতীয়ত, রোনাল্ডোকে বল বাড়াও। এছাড়া আর কোনও পরিকল্পনা চোখে পড়ল না পর্তুগিজ কোচ স্যান্টোসের রণকৌশলে। অন্যদিকে, নিখুঁত পাসিং ফুটবল খেলল স্পেন। বিশ্বকাপ শুরু ২৪ ঘণ্টা আগেই আগের কোচ লেপেতগুই ছাঁটাই হয়েছেন। দায়িত্ব পেয়েছেন স্পেনের বহু যুদ্ধের যোদ্ধা ফার্নান্দো হিয়েরো। তাই ম্যাচ শুরুর আগে একটু চাপেই ছিলেন পিকেরা। কিন্তু খেলায় সেই ছাপ ফেলতে দেয়নি স্পেন। অপরদিকে, পর্তুগালের বাকিরা সেই রোনাল্ডোর ছায়ায় ঢাকা পড়ল। এদিন ম্যাচের শুরুতেই ক্লাব সতীর্থ নাচো বক্সের মধ্যে ফাউল করলেন রোনাল্ডোকে। ৪ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল রোনাল্ডোর। তারপর ২৪ মিনিটে গোল শোধ ডিয়েগো কোস্টার।
কিন্তু সবার নজর সিআর সেভেনের দিকেই। বিরতির আগে ৪৪ মিনিটে ফের গোল রোনাল্ডোর। স্পেনের গোলকিপার দাভিদ দে হেয়ার ভুলে বল জড়িয়ে গেল জালে। পাড়া ফুটবলেও কেউ এমন গড়ানে শট ছাড়ে না। সেই শট গ্লাভসের ফাঁক গলে ঢুকে গেল জালে। সেই উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে লিভারপুলের গোলকিপার কারিয়াসের কথা মনে করিয়ে দিল। গ্যারেথ বেলের শট এইভাবেই তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন কারিয়াস। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল এদিন।
বিরতির পর যেন চাগিয়ে উঠল স্প্যানিশ আর্মাডা। ডিফেন্সের ভুলভ্রান্তি শুধরে নতুন উদ্যমে পর্তুগিজ বক্সে লাগাতার আক্রমণ। ৫৪ মিনিটের মাথায় ফ্রি-কিক থেকে বল পেয়ে ফের গোল কোস্টার। রোনাল্ডো এবং কোস্টার মধ্যে তখন গোলের লড়াই চলছে। তার কিছুক্ষণের মধ্যে স্পেনের নাচোর দূরপাল্লার শটে আবার গোল। ফাউল করে পেনাল্টি উপহার দেওয়ার জন্য পাপস্খলন করলেন যেন রিয়ালের ফুটবলার।
কিন্তু ওস্তাদের মার তখনও বাকি ছিল। ম্যাচের শেষলগ্নে বক্সের একটু বাইরে ফ্রি-কিক পায় পর্তুগাল। আর সেখান থেকেই স্বপ্নের গোল রোনাল্ডোর। এক শটেই ছবির মতো দাঁড়িয়ে রইলেন স্পেনের গোলকিপার দাভিদ দে হেয়া। ঐশ্বরিক প্রতিভার ঝলক ফের একবার চাক্ষুষ করল ফুটবল বিশ্ব। সেইসঙ্গে দেশের জার্সিতে ৮৪টি গোল হয়ে গেল সিআর সেভেনের। আরও একবার তিনি প্রমাণ করলেন, কেন তাঁকে সেরা বলা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.