Advertisement
Advertisement

Breaking News

FIFA World Cup 2022 Qatar World Cup 2022 Lionel Messi Eddy Carvalho

‘আর্জেন্টিনাকে কখনওই সমর্থন নয়, আমার বাজি ফ্রান্স’, বলছেন কলকাতার মেসি-ভক্ত ব্রাজিলিয়ান

মেসির জন্যই রাত জেগে বার্সেলোনার খেলা দেখতেন কলকাতার ব্রাজিলীয় সমর্থক।

Brazilian Supporter of Kolkata will shout for France । Sangbad Pratidin
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:December 16, 2022 8:36 pm
  • Updated:December 16, 2022 11:08 pm

কৃশানু মজুমদার: রবিবার ফুটবল-বিশ্ব দু’ ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার দিন। কেউ আর্জেন্টিনা তো কেউ ফ্রান্স। পেলের দেশের মানুষ এডি কার্ভালহো কার হয়ে গলা ফাটাবেন? কলকাতার জল-হাওয়ার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন তিনি। শিখেছেন বাংলা ভাষা। রবিবাসরীয় ফাইনালের প্রসঙ্গ উঠতেই কলকাতার উপকণ্ঠে নরেন্দ্রপুর নিবাসী এডি বলছেন, ”ব্রাজিলের মানুষ কখনওই আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করে না। আমি লিওনেল মেসির ভক্ত ঠিকই, ওর খেলা খুবই ভাল লাগে। কিন্তু দল হিসেবে আমি মোটেও আর্জেন্টিনাকে (Argentina) সমর্থন করবো না। আমার বাজি ফ্রান্সই (France)।” 

ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার (Brazil vs Argentina) ফুটবল-বৈরিতা বহু পুরনো। তার সূত্রপাতও বহু আগের। উপনিবেশ গড়ার জন্য ইউরোপ থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিল পর্তুগিজ ও স্প্যানিশরা। সেই সময়ে জমির দখলদারি নিয়ে সংঘাত গড়িয়েছিল রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে। স্পেনীয়দের দখলে যায় আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল  পর্তুগিজদের। এর থেকেই শুরু বৈরিতা।   

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘মেসি দারুণ কিন্তু জিতবে ফ্রান্সই’, বলছেন কলকাতার ‘বাঙালি’ ফরাসিরা]

খেলার মাঠেও ছিল প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যার শুরুটা হয়েছিল ১৯২৫ সালে। সেবার কোপা আমেরিকার ম্যাচে কেবল ড্র করলেই জিতত আর্জেন্টিনা। কিন্তু আর্জেন্টিনার মাঠে ব্রাজিল ২-০ গোলে এগিয়েছিল। আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার রামন মাত্তিস মারাত্মক ফাউল করে ব্রাজিলের আক্রমণ অঙ্কুরে বিনষ্ট করেন। মাঠের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতে। পরিস্থিতি শান্ত হলে ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র হয়। ফাইনাল রাউন্ডে ছিল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে। পয়েন্টের নিরিখে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়। ব্রাজিলের দাবি, গন্ডগোল না হলে তারাই জিতত।

Advertisement

তার পর জল অনেকদূর গড়িয়েছে। পেলে ব্রাজিলের গর্ব। মারাদোনার উত্থানের পর আর্জেন্টিনাও বলতে শুরু করে, মারাদোনাই শ্রেষ্ঠ। সেই পরম্পরা এখনও চলছে। পুরনো প্রসঙ্গ টেনে এডি বলছেন, ”আর্জেন্টিনার মানুষ কখনওই ব্রাজিলকে সমর্থন করে না। ওদের জিজ্ঞাসা করুন কে শ্রেষ্ঠ-পেলে না মারাদোনা? আর্জেন্টিনার লোক একবাক্যে বলবেন মারাদোনা। আবার উল্টোটা বলবে ব্রাজিলীয়রা। অনেক আর্জেন্টিনীয় আমার বন্ধু। ওরা ফাইনাল জিতলে আমাকে কটাক্ষ করবে, আমার সঙ্গে মজা করবে জানি। আমি কিন্তু চাই ফাইনালটা জিতুক ফ্রান্সই।” 

লিও মেসির (Lionel Messi) দেশের মানুষ নিকোলাস পাচেকো এখন কলকাতায়। তাঁর সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব এডির। দু’ জনে একসঙ্গে ফুটবল খেলেন। নিকোলাস বাংলা পড়েন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এডি কার্ভালহোও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত শিখছেন। বাংলা, হিন্দিও জানেন তিনি। ২০০৬ সালে ফুটবল-স্কুল খোলার স্বপ্ন নিয়ে ব্রাজিল থেকে কলকাতায় চলে আসেন এডি ও তাঁর স্ত্রী ডেইজি। এই শহরকে ভালবেসে ফেলেছেন তাঁরা। এডি ও ডেইজির এক ছেলে ও দুই মেয়ে।

রবিবারের ফাইনাল নিয়ে এডি আরও বলছেন, ”ফ্রান্সকে যে টুর্নামেন্ট জুড়ে সাপোর্ট করে আসছি তা একেবারেই নয়। কিন্তু আর্জেন্টিনার সঙ্গে যেহেতু ফাইনাল সেই কারণেই ফ্রান্সকে সমর্থন করব। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে যারা খেলবে, সমর্থন তাদের দিকেই। যদি আর্জেন্টিনা বনাম আর্জেন্টিনা হয়, তাহলে আমি রেফারির দিকে।” এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে হাসছিলেন এডি।

ব্রাজিলের আগেভাগে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় কাঁদাচ্ছে এডিকেও। তিনি বলছিলেন, ”যেদিন ছিটকে গেল ব্রাজিল, সেদিন মনে হচ্ছিল পরিবারের কোনও সদস্যকে হারিয়েছি। সেই আঘাত কাটাতে সময় লেগেছে আমার। রাস্তায় এখনও ব্রাজিলের পতাকা টাঙানো আছে। সেগুলোর দিকে তাকাই আর অস্ফুটে বলি, এত তাড়াতাড়ি কেন বিদায় নিলে? টিকে থাকলে তো আর্জেন্টিনার সঙ্গে সেমিফাইনাল হত।”

ফুটবল-প্রেমী এডি। কোচ হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। সেই কারণে ফাইনাল নিয়ে তাঁর চুলচেরা বিশ্লেষণ, ”আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ার পরে যেভাবে উন্নতি ঘটিয়েছে, তাতে আর্জেন্টিনাই এগিয়ে।” বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচে উন্নতি করছেন মেসি। ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর অ্যাসিস্ট নিয়ে জোর চর্চা হচ্ছে। ব্রাজিলীয় এডি মেসির প্রশংসা করে বলছেন, ”মেসিই সেরা। ওর জন্যই লা লিগায় বার্সেলোনার খেলা দেখতাম। এখন অবশ্য ভিনিসিয়াস জুনিয়রের জন্য লা লিগা দেখি।” 

মেসিকে দেখার জন্য এক ব্রাজিলীয় বার্সেলোনার খেলা দেখতেন, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কোনও প্রশ্নই নেই তাঁর মনে। এখানেই জিতে গিয়েছেন  ‘এলএম ১০’। শত্রুপক্ষের ফুটবলার হয়েও ব্রাজিলের হৃদয় জিতে নিয়েছেন রাজপুত্র। একজন ক্রীড়াব্যক্তিত্বের কাছে এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে!  

[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে না খেলেও অংশ নিয়েছে ভারত! প্রিয়রঞ্জনদের অসামান্য কৃতিত্ব ভুলবার নয়]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ