দুলাল দে: শুক্রবার সন্ধ্যায় এমন একটা সময় ফাতোরদার নেহরু স্টেডিয়ামে এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohun Bagan) বিরুদ্ধে খেলতে নামছে এসসি ইস্টবেঙ্গল, যখন এই মরশুমে শেষ চারে যাওয়ার বিন্দুমাত্র আশা নেই লাল-হলুদের। ডার্বি জিতলে লিগ টেবিলের অবস্থানগত ভাবে কিছু পরিবর্তন এলেও আসতে পারে। আইএসএলের প্রেক্ষিতে এই মুহূর্তে যা খুব একটা বড় ঘটনা নয়। উলটোদিকে এই একটা জয়ই এটিকে মোহনবাগানের এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার রাস্তাটা আরও প্রশস্ত হয়ে যাবে। আর হারলে, ঘাড়ের কাছে মুম্বই সিটি এফসির ভ্রুকুটি।
সম্পূর্ণ ভিন্ন লক্ষ্য আর মানসিকতা নিয়ে শেষ কবে কলকাতার দু’টি বড় দল এভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হয়েছে, বলা মুশকিল। শুধু এই একটা জয়ই লিগ টেবিলের নবম স্থানে থাকার গ্লানি এক নিমেষে ভুলিয়ে দিতে পারে লাল-হলুদ জনতাকে। শুক্রবার এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে শুধু একটি জয় ভুলিয়ে দিতে পারে, কী অব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এবারের আইএসএল (ISL) অভিযান শুরু করেছেন ফাউলাররা।
আপাতদৃষ্টিতে দেখলে আইএসএল নামক ক্লাসে, প্রথম ছাত্রর বিরুদ্ধে নবম স্থানে থাকা ছাত্রর অসম লড়াই। কিন্তু লড়াইটার নাম যখন হয়ে যায় ডার্বি, তখন লড়াইটা অসম থাকে ড্রেসিংরুমের কোচেদের ট্যাকটিক্স দেখানো বোর্ড পর্যন্ত। নেহরু স্টেডিয়ামের টানেল দিয়ে দুটো দল যখন মাঠে ঢুকবে, এক নিমেষে উধাও হয়ে যাবে লিগ টেবিলে এগিয়ে পিছিয়ে থাকার অঙ্কটা। শুরু হবে এক অন্য লড়াই। যে কারণে, সবুজ-মেরুন কোচ হাবাসও (Habas) বারবার বলছেন, “আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সরাসরি খেলা। ডার্বি আমার কাছে অন্য আরেকটা ম্যাচ।” সবুজ-মেরুন সমর্থকরাও জানেন, এসবই হাবাসের কেতাবি কথা। ফাতোরদার ফাঁকা স্টেডিয়ামে এই একটি ম্যাচ ঘিরে আসমু্দ্র হিমাচল সবুজ-মেরুন সমর্থকরা যেভাবে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে রয়েছেন, তার সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কিংবা এএফসি কাপ, কোনও কিছুরই তুলনা চলে না।
হাবাসের কৃষ্ণ সহায়। সর্বোপরি এটিকে মোহনবাগানের রিজার্ভ বেঞ্চে থাকবেন, আইএসএলের সফলতম মস্তিষ্ক হাবাস। সেখানে এসসি ইস্টবেঙ্গলে সর্বোচ্চ গোলদাতার নাম স্টেইনম্যান। যিনি সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার! কৃষ্ণর ১৩ গোলের পাশে যাঁর চার গোল দেখতে ভীষণই ম্যাড়মেড়ে। তার উপর কোচ রবি ফাউলার থাকবেন গ্যালারিতে। সর্বস্তরের শুধুই পিছিয়ে থাকার গল্প। তবু শুক্রবারের ডার্বিতে কিছুতেই বলা যাচ্ছে না, আন্ডারডগ হিসাবে শুরু করবে এসসি ইস্টবেঙ্গল। একটাই কারণ, প্রথম ডার্বির থেকে দ্বিতীয় ডার্বিতে অনেকটা বদলে যাওয়া লাল-হলুদ। তার উপর দলে এখন আছেন ব্রাইট। যাঁর নামের পাশে মাত্র তিন গোল লেখা হলেও, চার নম্বর গোলটা ডার্বিতেই আসবে না, কে বলতে পারে। যদি একের বিরুদ্ধে এক বিদেশির প্রোফাইল মিলিয়ে দেখা হয়, এটিকে মোহনবাগানের কোনও বিদেশির থেকে খারাপ অবস্থায় নেই এসসি ইস্টবেঙ্গলের (SC East Bengal) বিদেশিরা। কিন্তু সন্দেশ, শুভাশিস, প্রীতম, প্রবীরের সঙ্গে এখন আবার লেনির তুলনা লাল-হলুদে কোথায়? ভরসার জায়গা, সুব্রত পাল। বহু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকা সুব্রত যখন পিছন থেকে পুরো দলটাকে চিৎকার করে খেলবেন, তখন দুর্বল ডিফেন্সেও বদল আসতে পারে।
শুক্রবারের ম্যাচে এসসি ইস্টবেঙ্গল হারলেই, কাউকেই ফাঁসিকাঠে চড়ানো হবে না। এটিকে মোহনবাগানের জয় পাওয়াটা যেন অনেকটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু ফলাফলের যদি কোনও ক্রমে উলটো হয়ে যায়? পুরো চাপটাই তো হাবাসের দলের উপর। আর এই জায়গাতেই ভাল অবস্থানে রয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। লক্ষ্য শুধুই সম্মান উদ্ধারের। সেখানে হাবাসের চাপ অনেক বেশি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.