Advertisement
Advertisement

Breaking News

Diego Maradona Napoli Italy

মারাদোনা এখনও বেঁচে, ৩৩ বছর পর ইটালিসেরা হয়ে প্রমাণ করল নাপোলি

আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ও দেখে যেতে পারেননি মারাদোনা। নাপোলির ইটালিসেরা হওয়াও দেখা হল না তাঁর।

Napoli's victory a tribute to Diego Maradona, revisting the past । Sangbad Pratidin
Published by: Krishanu Mazumder
  • Posted:May 5, 2023 3:18 pm
  • Updated:May 5, 2023 6:51 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৯৯০-এর পর ২০২৩। ৩৩ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। নাপোলি (Napoli) আবার ইটালিসেরা।
১৯৮৬-র পর ২০২২। ৩৬ বছরের খরা কাটিয়ে কাতারে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা (Argentina)।

ইটালির শহর নেপলস থেকে বুয়েনোস আইরেসের দূরত্ব অনেক। কিন্তু পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির এক জাদুকর নেপলস ও বুয়েনোস আইরেস শহরকে এক বিন্দুতে এনে দিয়েছিলেন। ঈশ্বরদত্ত বাঁ পা নাপোলি ও আর্জেন্টিনাকে পৌঁছে দিয়েছিল সাফল্যের এভারেস্টে।

Advertisement

নেপলস এখন ফুটছে। দীর্ঘ তিন দশকের খরা কাটিয়ে ইটালির শহর আজ আনন্দে উদ্বেল। কিন্তু দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা (Diego Maradona) নামের সেই  জাদুকর আর দেখে যেতে পারলেন কোথায়? আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ও দেখে যেতে পারেননি। নাপোলির ইটালিসেরা হওয়াও দেখা হল না তাঁর। আগেই যে অনন্তলোকে পাড়ি জমিয়েছেন বিখ্যাত দশ নম্বর। দিয়েগো, তোমাকে কেউ ভোলেনি। ভুলতে পারে না। না ভুলেছে তোমার দেশ আর্জেন্টিনা। না নাপোলি।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ৩৩ বছর পর ইটালির সেরা মারাদোনার ক্লাব, নাপোলিতে শুরু বাঁধভাঙা সেলিব্রেশন]

 

নেপলসের রাস্তা ঘাটে মারাদোনা এখনও জেগে আছেন। উদিনেসের ঘরের মাঠে মারাদোনার ছবি। দিয়েগো সিমিওনের ছেলে জিওভানি ইটালি চ্যাম্পিয়ন নাপোলি দলের সদস্য। সেই জিওভানি জানিয়েছেন, নাপোলির মানুষজনের মাঝে বেঁচে রয়েছেন দিয়েগো। তিনি তা অনুভব করেছেন। ঠিক যেমন আর্জেন্টাইনদের মনে রয়ে গিয়েছেন কিংবদন্তি।

সমর্থকরা উন্মত্ত। যেন গণ হিস্টিরিয়া হয়েছে। এক দর্শককে দেখা গেল উদিনেসের মাঠের ঘাস সংগ্রহ করেছেন। রেখে দেবেন স্মারক হিসেবে। প্রায় তিন যুগ পরে সাফল্য বলেই সমর্থকদের উচ্ছ্বাস  মাত্রা ছাড়িয়েছে। নাপোলির সাফল্যের দিন নবজন্ম যেন ঘটল বিশ্বফুটবলের রাজপুত্রের। 

৩৩ বছর কম সময় নয়! পৃথিবীও অনেক বদলে গিয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটেছে। বার্লিন প্রাচীর ভেঙে দিয়ে দুই জার্মানিকে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। জোসেফ ব্রোজো টিটোর স্বপ্নের যুগোস্লাভিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। আল কায়দার উত্থান দেখেছে পৃথিবী। আমেরিকার গরিমা ধসিয়ে দিয়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারকে মাটিতে মিশিয়েছেন বিন লাদেন। করোনার রুদ্র রূপ দেখেছে এই বিশ্ব। কিন্তু নাপোলি কথা রাখেনি। বৃহস্পতিবারের আগে পর্যন্ত ইটালিসেরা হয়নি। বাড়ছিল অনন্ত অপেক্ষা। সমর্থকদের গল্পে ঘুরে ফিরে আসছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র। 

নেপলস এখন অন্য এক শহর। মারোদানার নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে জনতার স্রোত। আজ যে তাঁদের আনন্দের দিন। সমর্থকদের চোখে জল। এ যে আনন্দাশ্রু। 

এরকম আনন্দাশ্রু তো আগেও দেখেছেন নেপলসবাসী। এরকম জনউচ্ছ্বাসের সাক্ষী আগেও ছিল ইটালির এই শহর। ৩৩ বছর পরে ইটালিসেরা হওয়ার দিনে নাপোলি সমর্থকরা স্মৃতিতে ভাসলেন। নস্ট্যালজিক হলেন অনেকে। ১৯৮৪ সালের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ হয়তো মনে পড়ছিল অনেকের।

বার্সেলোনা থেকে দিয়েগো এলেন নাপোলিতে। বিমানবন্দরে সেদিন প্রচণ্ড ভিড় ছিল। বার্সেলোনা ছেড়ে কেন তিনি এলেন নাপোলিতে? এই প্রশ্নের জবাবে স্বভাবজাত ভঙ্গিতে মারাদোনাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ”বার্সেলোনা আমায় শান্তি দিতে পারেনি। তাই চলে এলাম।”

নেপলসে পা রাখার বহু আগে থেকেই মারাদোনাকে নিয়ে চলছিল জল্পনা। ছড়াচ্ছিল অতিরঞ্জিত গালগল্প।  পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছিল, ইটালিয়ান কুখ্যাত মাফিয়ার সঙ্গে ওঠাবসা রয়েছে ফুটবল রাজপুত্রের। সাংবাদিক বৈঠকে এক সাংবাদিক সেই প্রশ্ন করেও ফেলেছিলেন। তার জন্য সেই সাংবাদিককে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

নেপলস শান্ত শহর ছিল না। গুণ্ডামি, অভাব, মারামারি, রক্তারক্তি হাত ধরাধরি করে চলত। এরকম এক শহরের খুব দরকার ছিল একজন রক্তমাংসের ঈশ্বরের। যাঁকে নিয়ে মাতোয়ারা হবে গোটা শহর। তিনি ভুলিয়ে দেবেন শহরের মানুষের যাবতীয় অভিমান, দুঃখ, কষ্ট।

১৯৮৭ সালে ওই ঈশ্বরিক বাঁ পা নাপোলিকে এনে দিল লিগ। ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা’ ঘটাল নাপোলি! ফুটবলমাঠে এসি মিলান, ইন্টার মিলান, জুভেন্তাসের ঢক্কানিনাদ শুনে এসেছে ইটালির মানুষ। সেখানে কোথায় নাপোলি? মারাদোনার দল সেখানে ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা’ ঘটাল। মারাদোনা নিজেও তো ছিলেন ‘প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা’রই প্রচারক।

কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত চর্চা, এত আলোচনা, সেই ‘এল দিয়েগো’কে কি কেউ নেপলসে শান্তির জল ছিটিয়ে দিয়েছিলেন? শান্তির খোঁজ কি পেয়েছিলেন তিনি? আর্জেন্টাইন মহানায়কের সেই বিখ্যাত মন্তব্য এখনও অমর হয়ে রয়েছে, ”আমি চাইলাম প্রাসাদোপম বাড়ি। পেলাম একটা ফ্ল্যাট। চাইলাম ফেরারি গাড়ি। পেলাম ফিয়াট।” সেই সময়ে তাঁর মন্তব্য নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়েছিল খুব।

১৯৮৯-৯০ মরশুমে ফের লিগ জেতে নাপোলি। ততদিনে মিডিয়ার গল্পে পরিণত হয়েছেন দিয়েগো। নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সির মালিক। বিতর্কে মুখ ঢেকেছে তাঁর। কোকেন-সেবন করেন, এই বদনাম ছড়িয়ে পড়েছে মাঠের বাইরেও। তাঁর নৈশজীবন নিয়ে শুরু হয়েছিল প্রবল কৌতূহল। এক মহিলা সাংবাদিকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মারাদোনা বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। নেশাগ্রস্ত মারাদোনাকে প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল ফ্ল্যাটে। এর  মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছিল মারাদোনার ক্লাব ছাড়ার কথা। ফ্রান্সের ক্লাব মার্সেইতে চলে যাবেন তিনি, এরকম খবরে নড়েচড়ে বসেছিল ফুটবলবিশ্ব।

 

১৯৯১ সালে বিশ্ব চমকে গেল। প্রকাশ্যে এল, মারাদোনা কোকেনাসক্ত। আর্জেন্টাইন মহানায়কের উপরে নেমে এল ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা। রাজপুত্রকে সেই সময়ে বলতে শোনা গিয়েছিল, ”আমি ফুটবলার, সাধুসন্ত তো নই।”

নেপলসের অলিগলিতে এখনও কান পাতলেই শোনা যায় মারাদোনাকে নিয়ে নানা কিংবদন্তি। নাপোলি ক্লাব প্রেসিডেন্টকে বলা রাজপুত্রের সেই বিখ্যাত মন্তব্য এখনও চর্চিত হয় নেপলসে, ”সবসময় আমরা জিতলেই তো আর হবে না। বাকিদেরও একটু জিততে দেওয়া উচিত। নয়তো ফুটবলের আর মজা কোথায়।” 

মারাদোনার স্মৃতিজড়িত নাপোলি আবার ইটালিসেরা। আনন্দের রাতে ফিরে এলেন মারাদোনা। ফিরে এল নেপলসের সঙ্গে তাঁর রোম্যান্সের কাহিনি। 

[আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ কতটা প্রভাব ফেলবে বাংলায়? কী জানাল হাওয়া অফিস?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ