স্টাফ রিপোর্টার: প্র্যাকটিসের শেষে সতীর্থরা একে একে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। কারও হাতে ফুল। কেউ নিয়ে ফুলের বোকে। দু’সারি সতীর্থদের মাঝে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে এগিয়ে চলেছেন মেহতাব হোসেন। জীবনের ‘শ্রেষ্ঠ ইনিংসের’ পরিসমাপ্তির মুহূর্ত। আর কোনওদিন তাঁকে এভাবে প্র্যাকটিস সেরে বেরোতে দেখা যাবে না। কারও কোনওদিন চোখে পড়বে না, কঠিন মূহূর্তের মধ্যে হাসি মুখে করমর্দনের জন্য হাত বাড়াচ্ছেন। আজ যুবভারতীতে ইন্ডিয়ান অ্যারোজের সঙ্গে খেলা। সেই ম্যাচের পর ফুটবল জীবনকে যে তিনি ইতি ঘটাবেন।
সমর্থকরা এখন প্রিয় দলের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন। সকলের জানা হয়ে গিয়েছে, আই লিগে মোহনবাগানের ভবিষ্যৎ কী। ১৮ খেলে তাদের পয়েন্ট এখন ২৬। দাঁড়িয়ে ষষ্ঠ স্থানে। বাকি দু’টি ম্যাচ জিতলে পঞ্চম স্থানে বড়জোর যেতে পারে। নাহলে যেখানে আছে সেখানে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাহলে কিসের টানে সমর্থকরা আসবেন খেলা দেখতে? একটাই কারণ, মেহতাবের বিদায় মুহূর্তে সাক্ষী থাকা। ১২ বছর পর লাল-হলুদ ছেড়ে এসেছিলেন সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে চাপাতে। আশা ছিল, মোহনবাগানে খেলে দলকে শিখরে নিয়ে যাবেন। দুভার্গ্য, সেভাবে এবার খেলতেই পারলেন না। মনের মধ্যে হতাশা, দুঃখ আর কিছুটা অভিমান তাঁকে ময়দান থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য করল। নাহলে বলবেন কেন মেহতাব, “জীবনে ফুটবল ছাড়া অন্যকিছু ভাবিনি। আজ এখানে এসেছি ফুটবলের দৌলতে। মাঠের বাইরে বসে থাকাকে সবসময় ঘৃণা করতাম। তাই আজ অবসর ঘোষণা করা ছাড়া উপায় ছিল না।”
[ময়দানের বর্ণময় অধ্যায়ের অবসান, ফুটবলকে বিদায় জানাচ্ছেন মেহতাব]
ড্রয়িংরুমে ভারতীয় ফুটবলের বহু ট্রফি রয়েছে। বাকি শুধু আই লিগ। দুই প্রধানের হয়ে খেলেছেন। ফুটবলের ‘যৌবন’ কেটেছে ইস্টবেঙ্গলে। কোনওদিন আই লিগ জিততে পারেননি। আইএসএলও নয়। প্রথম তিন বছর খেলেছেন কেরল ব্লাস্টার্সের হয়ে। পরে জামশেদপুরে। তাই আফসোস থাকায় বলে ফেললেন মেহতাব, “আই লিগ না পাওয়ার জন্য আফসোস আছে ঠিকই। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে প্রচুর ম্যাচ খেলেছি।” ২০১৫-তে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে সরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। “যশ, খ্যাতি সব পেয়েছি। আসলে ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত লোকজন সবসময় পাশে দাঁড়িয়েছেন।” বলছিলেন মেহতাব। আজ কি দলকে নেতৃত্ব দেবেন? প্রথম একাদশে দেখা যাবে? প্রশ্নের উত্তরে কোচ খালিদ জামিল বলেন, “বিষয়টা ২৪ ঘন্টার জন্য তোলা থাক। বৃহস্পতিবার দেখবেন।” লিগ টেবিলে মোহনবাগানের ঠিক পরেই রয়েছে ইন্ডিয়ান অ্যারোজ। তাদের অবস্থানও বলতে গেলে যেন নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছে।
ছবি: অচিন্ত্য রায়