ফাইল ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দাদা। এই সম্বোধনটুকুই যথেষ্ট। গোটা বিশ্বকে আলাদা করে তাঁর পরিচয় দেওয়ার আর প্রয়োজন হয় না। তাঁর দাদাগিরির সাক্ষী থেকেছে ক্রিকেট দুনিয়া। তাঁর আগ্রাসন, নেতৃত্ব, ধৈর্য, জেদ, আত্মবিশ্বাসের প্রতিটি মুহূর্ত বাইশ গজের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। তাঁর সাফল্যের কাহিনির পরতে পরতে রয়েছে লক্ষ লক্ষ ক্রিকেটপ্রেমীর স্বপ্নপূরণের ছবি। ২০০৮ সালে ক্রিকেটের সব ধরনের ফরম্যাটকে বিদায় জানালেও আজও তাঁর দাদাগিরি বিরাজমান। যে দাদাগিরিকে ভয় নয়, সম্মান, মর্যাদা আর ভালবাসা দিয়ে বরণ করে নেয় ভারতবাসী। সেই সৌরভের আজ সেলিব্রেট করছেন তাঁর ৪৫তম জন্মদিন।
ভারতীয় ক্রিকেটের যুগসন্ধিক্ষণের মূল নায়ককে সকাল থেকেই শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তাঁর অগণিত ভক্ত। শুধু সমর্থকরাই নন, সতীর্থ ও প্রাক্তনরাও টুইটারে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। লর্ডসে ১৯৯৬ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের পর একের পর এক শৃঙ্গ অতিক্রম করেছেন তিনি। ২০০০ সালে ম্যাচ গড়াপেটার কলঙ্কজনক ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেটের উপর আছড়ে পড়েছিল। ঠিক তখনই দলের দায়িত্ব নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের মনোভাবই বদলে দিয়েছিলেন তিনি। তুলে এনেছিলেন হরভজন সিং, যুবরাজ সিং, বীরেন্দ্র শেহবাগ, জাহির খানের মতো তারকাদের। আর এই স্পেশ্যাল দিনে জেনে নেওয়া যাক, তাঁর সম্পর্কে কী ভাবেন বাইশ গজের কিংবদন্তিরা।
রাহুল দ্রাবিড়: অফসাইডে ব্যাট চালানোর ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছেন ঈশ্বর। আর দু’নম্বরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
শচীন তেণ্ডুলকর: সৌরভের সবচেয়ে বড় শক্তি হল মানসিকতা। নেটে-মাঠের বাইরে ও দারুণ পরিশ্রমী। মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার কারণেই প্রত্যাবর্তন করতে পেরেছিল।
বীরেন্দ্র শেহবাগ: আমার জন্য টেস্টে ওপেনিং স্লট ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমাকে টেস্ট ক্রিকেটার বানিয়েছিলেন সৌরভই।
যুবরাজ সিং: এমন ক্যাপ্টেনের জন্য জীবনও দিয়ে দিতে পারি।
হরভজন সিং: আমার খারাপ দিয়ে সৌরভই আমি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ওঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
মহেন্দ্র সিং ধোনি: টিভিতে একেবারে অন্যরকম দেখায় সৌরভকে। তবে মুখোমুখি সাক্ষাত হলে তিনি এক্কেবারে অন্যরকম এক ভদ্রলোক।
স্টিভ ওয়া: ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপে সৌরভ থাকা মানেই বুঝে নিতে হবে ম্যাচে ভাল পজিশনে দল। সৌরভকে পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার নয়। ওঁকে সম্মান করা উচিত।
ভিভিএস লক্ষ্মণ: বাউন্ডারি লাইনই নয়, স্টেডিয়ামের বাইরেও বল পাঠানোর দক্ষতা রয়েছে সৌরভের। একাই স্পিনারদের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়ে পারেন।
ব্রায়ান লারা: সৌরভ আমাদের ফেভরিট। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অজিদের বিরুদ্ধে ওঁর নেতৃত্ব ছিল অনবদ্য। ওঁকে দারুণ সম্মান করি।
ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেও ওতপ্রতোভাবেই ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রিন্স অফ ক্যালকাটা। অধিনায়কের পর প্রশাসক হিসেবেও ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য অনবরত কাজ করে চলেছেন। টিম ইন্ডিয়ার কোচ বাছাইয়ের গুরু দায়িত্বে শচীন-লক্ষ্মণের সঙ্গে রয়েছেন মহারাজও। আর বাইশ গজে মহারাজ হয়ে ওঠার কিছু মুহূর্তও আজও ফ্যানদের চোখে উজ্জ্বল। আপনি দাদা-ভক্ত হলে এসব তথ্য আপনারও জানার কথা।
টেস্টে সর্বোচ্চ ২৩৯ রান রয়েছে তাঁর নামের পাশে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৮৩ রান তাঁর ঝুলিতে।
২০০২ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে লর্ডসের ব্যালকনিতে শার্ট উড়িয়ে লর্ডসের লর্ড হয়ে উঠেছিলেন দাদা। ২০০২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া। তাঁর জমানাতেই ১৯৮৩ সালের পর ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছয় দল। সেবার হারলেও ক্রিকেটমহলের প্রশংসা কুড়িয়েছিল দল। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই জীবনের শেষ টেস্ট খেলেছিলেন সৌরভ। আবার কেকেআর-এর জার্সি গায়ে আইপিএল কেরিয়ার শুরু করে ২০০৯ সালে দলের নেতৃত্ব খুইয়েছিলেন।
মাঠের বাইরে ২০০১ সালে দক্ষিণী ছবির অভিনেত্রী নাগমার সঙ্গে সম্পর্ক জড়িয়ে পড়ার খবর শিরোনামে উঠে এসেছিল। মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, সৌরভের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের মন্দিরে পুজোও দিয়েছিলেন নাগমা। যে পুজো নাকি সাধারণত কোনও দম্পতিই দিয়ে থাকেন। তবে সেসব খবরকে গুজব বলেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন সৌরভ ও স্ত্রী ডোনা। সেসব গুজবে কখনওই তাঁর ব্যক্তিত্বে আঁচ লাগেনি। আর আজ ৪৫ বছর বয়সে স্বামী, বাবা, ছেলে, ক্রিকেট প্রশাসক এবং কিংবদন্তি হিসেবে স্বমহিমায় বিরাজ করছেন মহারাজ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.