প্রজ্ঞার পাশে তাঁর গর্বিত মা নাগালক্ষ্মী। ছবি: টুইটার
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অল্পের জন্য বিশ্বজয়ী হওয়ার স্বপ্ন অধরা রয়ে গিয়েছে। ক্ষণিকের ভুলে তাঁকে হারিয়ে বিশ্বকাপ (FIDE World Cup) হাতে তুলে নিয়েছেন ম্যাগনাস কার্লসেন (Magnus Carlsen)। কিন্তু তাতে কি! রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ (Rameshbabu Praggnanandhaa) বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও, অনায়াসে জিতে নিয়েছেন আসমুদ্র হিমাচলের হৃদয়। স্বভাবতই ১৮ বছরের প্রজ্ঞাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা দেশ। তবে এই সাফল্য, এই লড়াই শুধু প্রজ্ঞার নয়। ছেলে যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন সেখানে তাঁর মা নাগালক্ষ্মীর অক্লান্ত, ঐকান্তিক পরিশ্রম অনস্বীকার্য।
ছেলের সাফল্যে অবিভাবকদের গর্বিত হওয়ার অনেক উদাহরণ আছে। কয়েক দিন আগে তেমন এক ছবি দেখা গিয়েছিল । দাবা বিশ্বকাপের (Chess World Cup) কোয়ার্টার ফাইনালে স্বদেশীয় অর্জুন এরিগাইসির (Arjun Erigaisi) বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে নেন ১৮ বছরের তারকা। টাইব্রেকারে ৫-৪ ব্যবধানে হারিয়ে দেন অর্জুনকে হারিয়ে দেন প্রজ্ঞনন্দ। একইসঙ্গে বিশ্বনাথ আনন্দের (Viswanathan Anand) পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে দাবা বিশ্বকাপের (Chess) শেষ চারে পৌঁছানোর নজির গড়েছিলেন। বিশ্বমঞ্চে ছেলের সাফল্য দেখে চোখের জল আর ধরে রাখতে পারেননি প্রজ্ঞার মা নাগালক্ষ্মী। জনসমক্ষে কেঁদে ফেলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সেই ছবি ভাইরাল হতে সময় লাগেনি।
তাই তো বিশ্বকাপ ফাইনালে ছেলে হেরে গেলেও, গর্বিত বাবা রমেশবাবু। তাঁর কথায়, “প্রথমেই বলি, প্রজ্ঞানন্দের এই সাফল্যের পিছনে বড় অবদান রয়েছে ওর মায়ের। আমি কাজে আটকে থাকলেও, স্ত্রী নাগালক্ষ্মী ছেলেকে উৎসাহ জোগাতে সুদূর বাকুতে রয়েছে। আর হ্যাঁ, ছেলের জন্য তো গর্ব হচ্ছেই। প্রতিদিনই আমাদের ফোনে কথা হয়। আশা করেছিলাম প্রজ্ঞা বিশ্বকাপ জিতবে। তবে সেটা অধরা রয়ে গেল। যদিও আমরা এতে চিন্তিত নই। ছেলে এত দূরে এসেছে, এটাই আমাদের কাছে বড় প্রাপ্তি।”
রমেশবাবুর ফের প্রতিক্রিয়া, “আমি দাবা সেভাবে বুঝি না। মেয়ের টিভি দেখার নেশা ছাড়াতেই ভাই-বোনকে অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করেছিলাম। এটা দারুণ ব্যাপার যে, দু’জনেই এই খেলাকে ভালোবেসে ফেলেছে। প্রজ্ঞার প্রস্তুতির ব্যাপারটা কোচই দেখেন। ও দিনে ছয়-সাত ঘণ্টা অনুশীলন করে। আর ওর মা প্রতি মুহূর্তে উৎসাহ জুগিয়ে যায়।”
প্রজ্ঞানন্দের প্রথম কোচ এস থয়াগারাজানের কথায়, “প্রজ্ঞানন্দ প্রথম যখন আমার কাছে এসেছিল, ওর বয়স পাঁচ বছর। আর ওর দিদি বৈশালীর সাত। তখনই প্রজ্ঞানন্দের প্রতিভা আঁচ করতে পেরেছিলাম। বুঝেছিলাম, ছেলেটা অনেক দূর যাবে। আজ সত্যিই আমার গর্ব হচ্ছে ওর জন্য।”
প্রজ্ঞানন্দ যেখানেই খেলতে যান না কেন, তাঁর মা সঙ্গে সঙ্গে যাবেনই। দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে যখন ম্যাগনাস কার্লসেনের বিরুদ্ধে চৌষট্টি খোপের লড়াইয়ে ছেলে মগ্ন ছিলেন, তখনও দর্শকাসনের এক কোনায় বসে একটানা প্রার্থনা করে যাচ্ছিলেন নাগালক্ষ্মী। সেই প্রার্থনা এ বার কাজে লাগল না। কিন্তু আগামী দিনে তা সাফল্য এনে দিতেই পারে। নিজের যোগ্যতা অনুসারে পারফর্ম করতে পারলে ফের একবার জনসমক্ষে হয়তো এভাবেই আনন্দের সঙ্গে কেঁদে উঠবেন প্রজ্ঞার গর্বিত মা নাগালক্ষ্মী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.