কথায় কথায় সতেরো পার। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের এই লম্বা সময়ে পিছিয়ে যাওয়ার খবরে যেন অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল। আবার আশার ঝিলিকও রয়েছে। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল খুঁজল সাদা-কালো দুনিয়াকে।
চিকিৎসার রোগ গভীরে
চিকিৎসা। এই নিয়ে অসুখ কিছুতেই কাটল না। তলানিতে ঠেকল চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ক। বেসরকারি হাসপাতালের একাংশের ভূমিকাও আতঙ্কে রাখল রোগীর পরিজনকে। নিট ফল হাসপাতাল ভাঙচুর, ডাক্তারের গায়ে হাত, রোগীর পরিজনদের পালটা মার, রোগীকে ফেলে রেখে মৃত্যু, প্রাণ চলে যাওয়ার পরও পরীক্ষার নামে লাখ লাখ টাকা বিল। চাপানউতোর চলতেই থাকল। এমনকী সেই অসহিষ্ণু সম্পর্কের ছাপ পড়ল দুর্গাপুজোয়। মণ্ডপে দেখা গেল অসুররূপী ডাক্তারকে।
মানবিকতার অসুখ
রাজ্যের মতো স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল ছবি দেখা গেল দেশের নানা প্রান্তে। কোথাও অ্যাম্বুল্যান্সের বদলে কাঁধে করে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে। উত্তরপ্রদেশের এক সরকারি হাসপাতালের কর্মীরা আবার চিকিৎসার জন্য রোগীর পরিবারের থেকে টাকা চাইলেন। তদন্তে সাহায্যের নামে মধ্যপ্রদেশে ধর্ষিতা মহিলাকে কুপ্রস্তাব জানাল এক পুলিশকর্মী।
পাকিস্তানের ‘মানবিকতার’ মুখোশ
আন্তর্জাতিক আদালতের চাপ। নিতান্ত বাধ্য হয়ে কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে তাঁর পরিবারকে দেখা করার অনুমতি দিয়েছিল পাকিস্তান। মানবিকতার নামে মুখোশ পরে পাকিস্তান যে কাজ করল তা চূড়ান্ত অমানবিকতার নির্দশন। সাক্ষাত পর্বে দু’পক্ষের মাঝে থাকল কাচের দেওয়াল। একবার গায়ে হাত দেওয়া দূরের কথা, মাতৃভাষায় কথা বলতে দেওয়া হয়নি। প্রাক্তন ভারতীয় নৌসেনা আধিকারিকের স্ত্রীর মঙ্গলসূত্র, মায়ের সিঁদুর খুলিয়ে পাকিস্তান বুঝিয়ে দিল তাদের প্রকৃত রূপ।
ছিঃ!
রাস্তার ধারে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন বাসচালক। সাহায্য দূরের কথা মৃত্যুপথযাত্রীর মোবাইল পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়। এমনকী তাঁর পকেটে থাকা মাত্র ১২ টাকাও হাতিয়ে নেয় লোলুপ সমাজ। নয়াদিল্লির এই ঘটনা বুঝিয়ে দেয় মানবিকতার অবক্ষয় কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
দোহাই অভিভাবক
সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে আগ্রহ ছিল না। অথচ মৃত্যুর পর চলল স্বামী-স্ত্রীর লড়াই। তার জন্য একরত্তি অরুন্ধতী পৃথিবী ছাড়ার পরও রেহাই পেল না। মর্গে ফেলে রাখা হল মৃতদেহ। ২৪ ঘণ্টা ধরে চলল টানাহ্যাঁচড়া। শেষ পর্যন্ত যা গড়ায় আদালতে। যাদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব তারা এরাজ্যের এক চিকিৎসক দম্পতি।
সন্তান না কি কুলাঙ্গার
সন্তান-অভিভাবকের চিরন্তন সম্পর্কেও যেন দীর্ঘশ্বাস। ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন হলেও নাড়া দেয় সমাজকে। কেউ সম্পত্তির জন্য মাকে বেধড়ক মারলেন। কোনও ছেলে-পুত্রবধূ অসুস্থ বাবাকে ঘরে আটকে রেখে চলে গেল বেড়াতে। কেউ শিকল দিয়ে রাখলেন বুড়ো বাপকে। লজ্জা মিলিয়ে দিল নোয়াপাড়া, লেকটাউন বা দুর্গাপুরকে।
সত্য সেলুকাস…
জমি বেআইনি। অভিযোগ দৃষ্টিহীনদের হস্টেল গুঁড়িয়ে দেয় দিল্লি পুর প্রশাসন। কনকনে ঠান্ডায় আকাশের তলায় ঠিকানা হল প্রতিবন্ধীদের। অনেকেই হারিয়ে ফেলেন তাদের মার্কশিট, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। আদালতের ধমকের পরও প্রশাসন মচকায়নি।
মানবিকতার লজ্জা
দুনিয়ার সবথেকে নিপীড়িত জাতি। এবছর তাদের উপর নিষ্পেশনের স্টিম রোলার চলল আরও গতিতে। মায়ানমার সেনার অত্যাচারে রাখাইন রাজ্য থেকে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা পালালেন বাংলাদেশে। গোটা দুনিয়ার আবেদন, অনুরোধের পরও মায়ানমারের নেত্রী সু কি এবং প্রশাসন রোহিঙ্গাদের জন্য কার্যত কিছুই করেনি।
প্রদীপের নিচে অন্ধকার থাকলেও এটাই দুনিয়ার সব নয়। ২০১৭ দেখিয়ে দিল মূল্যবোধ এখনও হারায়নি। সবার উপরে যে মানুষ সত্য তা বুঝিয়ে দিল বেশ কিছু ঘটনা।
সবার উপরে মানুষ সত্য
অভাবী পরিবার। বিয়ে দেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা ছিল না। মালদহের চাঁচোলের খানপুরে হিন্দু মেয়ের বিয়ের জন্য এগিয়ে আসেন স্থানীয় মুসলিমরা। তাদের উদ্যোগে চার হাত এক হয়। হবিবপুরের শেফালি বিবিও দৃষ্টান্ত। ৩০ বছর ধরে তিনি মা দুর্গার পুজো করে চলেছেন। মানিকচকের শেখপুরা দেখিয়েছিল সম্প্রীতির ছবি। হিন্দু শবযাত্রীর দেহ কাঁধে করে নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় মুসলিমরা। তারাই অন্ত্যেষ্টির কাজ করেন।
সম্প্রীতির বাংলা
মহরম না কি দুর্গাপুজোর ভাসান। এই বিতর্ক নিয়ে যখন গোটা রাজ্য শোরগোল তখন নিঃশব্দে পথ দেখায় জলপাইগুড়ি। বেরুবাড়ি পুজো কমিটির উদ্যোগে মিলে সুর মেরা তুমহারা। দুর্গাপুজোর পর ওই এলাকায় মেলা হয়। সেই মেলার জন্য মহরমের লাঠিখেলা একদিনের জন্য পিছিয়ে নেওয়া হয়।
এটাই মানবধর্ম
থানা তৈরির জন্য আউশগ্রামের একটি মন্দির ভাঙা পড়েছে। কোনও উত্তেজনা ছাড়াই সেই মন্দির নতুনভাবে তৈরি হয়। লালন শেখ নামে এক ব্যবসায়ী মন্দির নির্মানের সমস্ত টাকা তুলে দেন। পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের রাজিপুর গ্রামেও সেই এগিয়ে আসার ছবি। খেলার মাঠের জন্য অন্নপূর্ণা মন্দির ভাঙা পড়েছিল। এলাকার মুসলিমরা চাঁদা তুলে সেই মন্দির নির্মাণের ব্যবস্থা করেন।
হারায়নি মূল্যবোধ
যা অন্যের তাকে ফিরিয়ে দিতে হয়। কাউকে ঠকিয়ে কখনও বড় হওয়া যায় না। এই মূল্যবোধ এখনও বেঁচে বাংলার বহু মানুষের হৃদয়ে। সেই অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দিয়ে ২ লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দেন রিষড়ার রিকশচালক। বর্ধমানের এক দোকানদার পেয়েছিলেন মোবাইল ও কয়েক হাজার টাকা। মালিককে ডেকে টাকা ফেরত দেন।
জীবে প্রেম
দু দেশের সম্পর্ক একেবারে সাপে-নেউলে। রাষ্ট্রনায়কদের সৌজন্যে সম্পর্ক বিষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে তা অনেক সময় হার মেনে যায় স্নেহ, ভালবাসার মতো মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিগুলির কাছে। প্যালেস্তিনীয় শিশুকে স্তন্যপান করান এক ইজরায়েলি নার্স। এই ছবি বুঝিয়ে দেয় মনুষ্যত্ব পৃথিবী থেকে মুছে যায়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.