Advertisement
Advertisement

চিনকে বাগে আনাই চ্যালেঞ্জ ভারতের

আজ থেকে গোয়ায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন৷

BRICS Summit 2016 in Goa: Moment of truth for Sino-India relationship
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 14, 2016 10:20 am
  • Updated:October 14, 2016 10:20 am

জ্যোতির্ময় কর্মকার: কূটনৈতিকভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে একঘরে করার পাশাপাশি এবার সম্পর্কের প্রতিকূলতা কাটিয়ে চিনকে বাগে আনাই ভারতের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ আর সেই লক্ষ্যে আর্থিক ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেই মূল হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে চলেছে নয়াদিল্লি৷ গোয়ার ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে সদস্য দেশগুলির বাণিজ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে এই ইঙ্গিতই স্পষ্ট করে দিল ভারত৷ সরাসরি কিছু না বললেও সাফ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, পিছন দরজা দিয়ে ইসলামাবাদকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে দিনে দিনে ক্রমশ হাতছাড়া হবে ভারতের বাজার৷

বৃহস্পতিবার ব্রিকস সদস্য দেশগুলির বাণিজ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলেন, “ব্রিকস-এর গঠনই স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মেরুকরণের বিরুদ্ধে গিয়ে এখন একটি শক্তিসাম্যের দিকে এগোচ্ছে পুরো বিশ্ব৷ এক্ষেত্রে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির প্রতি আরও জোরদারভাবে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত ব্রিকস সদস্য দেশগুলির৷ এর মাধ্যমেই উন্নয়নশীল দেশগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ন্যায় ও বিচার পাবে৷” উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক ও আর্থিক সম্পর্ক জোরদার করাই ব্রিকসের লক্ষ্য৷ কিন্তু উরি হামলা ও তার পরবর্তী সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গোয়ার ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে এবার সন্ত্রাসবাদের ইস্যুই সিংহভাগ দখল করবে বলে মত অভিজ্ঞ মহলের৷

Advertisement

এদিন নয়াদিল্লির বৈঠকে চিন সম্পর্কে আলাদাভাবে কোনও মন্তব্য না করলেও কূটনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এবারের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের মূল ‘টার্গেট’ বেজিংই৷ ব্রাজিল, রাশিয়া, চিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বাণিজ্যমন্ত্রী এবং শিল্প প্রতিনিধিদের বৈঠকে আগাগোড়া ব্রিকসের বাণিজ্যিক এবং আর্থিক সম্পর্ক নিয়েই আলোচনা করে গিয়েছেন নির্মলা সীতারমণ৷ কিন্তু অনেকেরই মত, তাঁর বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বেজিংকেও গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বার্তা দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, “ব্রিকস অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী একটি গোষ্ঠী৷ কারণ তারা প্রত্যেকেই আবার জি-২০-তে প্রতিনিধিত্ব করে৷ স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁদের মতামত ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে৷”

Advertisement

উরি হামলার পর যখন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রথম সারির দেশই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এককাট্টা অবস্থান নিয়েছে, সেইসময় একমাত্র কৌশলী অবস্থান নিয়েছে চিনই৷ বরাবরই নয়াদিল্লির বিপক্ষে গিয়েছে বেজিংয়ের বিদেশনীতি৷ সে ভারতের এনএসজি সদস্যপদই হোক বা মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গির তকমা দেওয়া, সবক্ষেত্রেই ভারতের বিরোধিতা করেছে চিন৷ স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতিতে গোয়ায় ব্রিকস সামিটে সবচেয়ে নজর কাড়তে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে চিনা প্রেসিডেণ্ট জি জিনপিংয়ের বৈঠক৷ সূত্রের খবর, পাকিস্তান প্রসঙ্গে চিনের অবস্থান বদল করতে দিল্লি-বেজিংয়ের দ্বিপাক্ষিক আর্থিক সম্পর্ক মনে করিয়ে দেওয়াই এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য৷ এদিন দিল্লিতে সেই ইঙ্গিতই কার্যত ঘুরিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন নির্মলা সীতারমণ৷ কূটনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, বরাবরই ভারত-চিন আর্থিক সম্পর্ক জোরদার হলে সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করে ইসলামাবাদ৷ আর এবার সেই হাতিয়ারকেই কার্যকরিভাবে ব্যবহার করতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি৷ সরকারি তথ্য বলছে, ভারতে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর চায়না-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল নামে একটি সংস্থা গঠন করেছে চিন৷ চিনের হুনান প্রদেশের চাংসায় সিআইবিসি-র একটি আলাদা অফিসও তৈরি করা হয়েছে৷ তার ঠিক তিনদিনের মাথায় কাশ্মীরের উরিতে হামলা চালিয়েছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা৷ অর্থমন্ত্রককের পরিসংখ্যান বলছে, কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে ভারতে চিনা বিনিয়োগ এবং ব্যবসার অঙ্ক৷ উরি হামলার পর দেশজুড়ে চিনা পণ্যসামগ্রী বয়কটের ডাক উঠেছে৷ স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভারতের বাজারে বড়সড় ধাক্কা খেতে চলেছে চিনা বিনিয়োগ৷ সূত্রের খবর, ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এই কঠিন বাস্তবতার কথাই সরাসরি জিনপিংকে শুনিয়ে দিতে চান মোদি৷ রাশিয়ার প্রেসিডেণ্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ব্রাজিলের প্রেসিডেণ্ট মিশেল টেমের এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেণ্ট জ্যাকব জুমার সঙ্গেও বৈঠকের পর সীমান্ত পারের সন্ত্রাস নিয়ে গোয়ার শীর্ষ সম্মেলন থেকে যৌথ বিবৃতি জারি করতে পারেন মোদি৷ ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগেই এদিন মস্কো থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া বিবৃতি দিয়েছেন পুতিন৷ জানিয়ে দেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সকলে একজোট হয়ে লড়াই করতে আমরা বদ্ধপরিকর৷ সূত্রের খবর, পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার কিছু সামরিক চুক্তি নিয়ে অস্বস্তিতে নয়াদিল্লি৷ এ নিয়েও পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন মোদি৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ