নন্দন দত্ত, সিউড়ি: স্ত্রীকে খুন করে এলাকা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। ভিনরাজ্যে গিয়ে সাধু সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছিল স্ত্রী হত্যাকারী বলরাম চট্টোপাধ্যায়। প্রায় তিনবছর পর স্ত্রীকে খুনের দায়ে ভূপাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করল সিআইডি। গত রবিবার ট্রানজিট রিমান্ডে ধৃতকে সিউড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। সিউড়ি আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতের সিআইডি হেফাজত দেন। ধৃতের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা।
জানা গিয়েছে, সাঁইথিয়ার রথতলা পাড়ার বিবেকানন্দ সরকারের মেয়ের সঙ্গে বলরাম চট্টোপাধ্যায়ের বিয়ে হয়েছিল। পেশায় নিজেকে এলআইসি এজেন্ট হিসেবেই পরিচয় দিত সে। বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়িতেই থাকত। ২০১৫-র আগস্টে শ্বশুরবাড়ির দোতলায় শোওয়ার ঘরে স্ত্রী মণি চট্টোপাধ্যায়কে খুন করে বলরাম। রীতিমতো পরিকল্পিত খুন। পাশের ঘরে ছেলেমেয়েদের আটকে দিয়ে নিজেদের শোওয়ার ঘরেই নারকীয় ঘটনাটি ঘটায়। কাটারি দিয়েই স্ত্রীকে খুন করে বলে অভিযোগ। কাজ শেষ করে সকলের নজর এড়িয়ে প্রথমে বাড়ি, পরে রাজ্য ছেড়ে উধাও হয়ে যায় বলরাম। এদিকে মেয়েকে খুনের অভিযোগ, সিউড়ি থানায় এফআইআর করেন বিবেকানন্দবাবু। খুনে জামাইয়ের শাস্তির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও দরবার করেছেন তিনি। এদিকে কোনওভাবেই সাঁইথিয়া থানার পুলিশ বলরাম চট্টোপাধ্যায়ের হদিশ পায়নি। এদিকে দিন গড়িয়ে গেলেও তদন্তে একচুল উন্নতি হয়নি। একটা সময় পরিস্থিতি বিবেচনা করে বীরভূম জেলা পুলিশ গোটা কেসের তদন্তভার সাঁইথিয়া থানার হাত থেকে নিয়ে সিআইডির হাতে তুলে দেয়। গত সাত এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে সাধুবেশে বলরামকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
সিআইডি সূত্রের খবর, বলরামের ছবি নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের থানায় দেওয়া হয়। শুরু হয় খোঁজখবর। এরমধ্যে খবর আসে ছবির লোকটি বিভিন্ন জায়গায় সাধুর বেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাঁইথিয়া থেকে পালিয়ে প্রথমে হরিদ্বার, তারপর গুজরাট ও অন্যান্য জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছে। খবর আসে, সে সেখন ভোপালে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পিছু নেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। অবশেষ সাত এপ্রিল বলরামকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে সিউড়ি আদালতে নিয়ে আসা হয়।
বুধবার সিআইডির আধিকারিকরা বলরামকে নিয়ে সাঁইথিয়ার রথতলায় তার শ্বশুরবাড়িতে যায়। সেই দোতলার শোওয়ার ঘরে তিন বছর আগের ঘটে যাওয়া ঘটনাটি পুনর্গঠন করে দেখায় অপরাধী বলরাম। সিআইডির নির্দেশেই গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। তবে খুনিকে হাতের কাছে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠে পাড়ার লোকজন। পুলিশের ঘেরাটোপ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে। মণিদেবীর পরিবারের তরফে জামাইয়ের ফাঁসির দাবি করা হয়েছে আদালতের কাছে। এই মুহূর্তে সিআইডি হেফাজতে রয়েছে খুনে বলরাম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.