Advertisement
Advertisement

২১শে-র মঞ্চ থেকে মমতার বিজয়বার্তা

শহিদ স্মরণ নিয়ে কংগ্রেসকে তির সুব্রত বক্সির

Countdown starts for 21 july shahid dibas
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 18, 2016 10:12 am
  • Updated:July 20, 2022 6:10 pm

কিংশুক প্রামাণিক: এবার বিজয় সমাবেশের প্রস্তুতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ প্রস্তুতি বিজয়বার্তারও৷ যারা প্রত্যাখ্যাত তাদের শাস্তি মানুষই দিয়েছেন৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে যত বড় জয় তত বেশি দায়িত্ব৷ তাই বিজয়ীদের আরও সংযত, সতর্ক ও বিনয়ী হয়েই এগোতে হবে৷ মানুষই আসল বুদ্ধিমান৷ ফলে মানুষের স্বার্থ ছাড়া দ্বিতীয় কোনও লক্ষ্য নেই৷ বৃহস্পতিবার বৃষ্টিভেজা ধর্মতলায় এই বার্তাই আবার তুলে ধরতে চলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী৷

২১১ আসন নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পর দল ও প্রশাসনে কার্যত বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাটিং করতে দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে৷ গুড গভর্ন্যান্স-এর স্বার্থে তিনি কাউকেই রেয়াত করছেন না৷ কোনও আপসও নয়৷ দলের মধ্যে বেনোজলদের ছেঁটে ফেলার কাজও শুরু হয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে আগামী বৃহস্পতিবার ২১ জুলাই ধর্মতলায় শহিদ দিবসের সভা থেকে তিনি আর কী বার্তা দেন তা শুনতে প্রবল আগ্রহ শুরু হয়েছে জনমানসে৷ ফলে এবার ২১শের সমাবেশ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে বলেই মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব৷

Advertisement

উল্টোদিকে এক অভিনব রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে তৃণমূলের মা-মাটি-মানুষ দিবস পালিত হতে চলেছে এবার৷ ১৯৯৩ সালে সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে তৎকালীন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন৷ সেদিন পুলিশকে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালাতে নির্দেশ দিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার৷ মহানগরীর পথ রক্তে রাঙা হয়েছিল৷ প্রাণ হারান ১৩ নিরীহ যুবক৷ মারাত্মক জখম হয়েছিলেন মমতাও৷ তারপর থেকেই এই দিনটিকে শহিদ দিবস হিসাবে পালন করে আসছেন তিনি৷ তৃণমূল গঠনের পর এটাই মমতার প্রধান বাৎসরিক কর্মসূচি৷ একমাত্র ২০১১ সালে বাংলার ক্ষমতার ঐতিহাসিক পরিবর্তন স্মরণে রাখতে ব্রিগেডে নিয়ে যাওয়া হয় সভা৷ না হলে বরাবরই ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনেই শহিদ তর্পণ হয়ে আসছে৷ এবারও হবে৷

Advertisement

মমতা নতুন দল গড়লেও প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে দিনটি পালন করা হয়৷ পাল্টা কোনও সভা করার ঝুঁকি না নিলেও কিছু না কিছু কর্মসূচি প্রতিবারই হয়৷ যথারীতি এবারও হবে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সিপিএমের সঙ্গে জোট করার পর ২১শের শহিদদের স্মরণের অধিকার তাদের আছে কি না৷ এ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি বলেন, “১৯৯৩ সালের ওই আন্দোলনের দিনই সিপিএম উপলব্ধি করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যের প্রতিবাদী মানুষ একজোট হচ্ছেন৷ সেই জন্যই গণহত্যা৷ এরপর থেকে ওই দিন ধর্মতলায় শহিদ দিবস পালন করে আসছেন তৃণমূল নেত্রী৷ কংগ্রেস এত দিন দায়সারা কিছু কর্মসূচি নিত৷ আমরা তা নিয়ে কখনও বলিনি৷ কিন্তু ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে ওরা কতগুলি আসন জেতার জন্য যাদের. সঙ্গে জোট করেছে, সেই সিপিএম সরকারের পুলিশই ১৩ জন যুবককে গুলি করে হত্যা করে৷ এরপর কংগ্রেসের আর কোনও নৈতিক অধিকারই নেই ২১শে জুলাইয়ের শহিদদের স্মরণ করার৷ এভাবে ওরা যেন শহিদদের আত্মার অপমান না করে৷”

তৃণমূলের এই অভিযোগের বিপক্ষে সঠিক যুক্তি খাড়া করতে পারেনি প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব৷ রাজ্যের সিপিএম নেতাদের সঙ্গে এখন তাদের খুবই সুসম্পর্ক৷ ফলে শহিদ দিবস নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি না করে দিনটি প্রদেশ দফতরেই নমো নমো করে পালন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যুব কংগ্রেসকে৷ প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরি ওই দিন সংসদের অধিবেশনের ব্যস্ততা দেখিয়ে দিল্লিতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ বড় নেতা কেউই থাকছেন না প্রায়৷ প্রবীণ সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য রবিবার সিপিএম প্রসঙ্গ নিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে যান৷ যদিও পাল্টা বলেন, “আমাদের কেন এ সব বলা হচ্ছে৷ ওই দিন সিপিএমের সঙ্গে ছিলেন অনেকেই তো এখন তৃণমূলে৷”

তবে এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই মমতার৷ বরাবর এই মঞ্চ তাঁর কাছে শপথের৷ শহিদ তর্পণের৷ জীবনের যাবতীয় বড় সিদ্ধান্ত নিতে তিনি এই মঞ্চকে আহ্বান করেছেন৷ এই মুহূর্তে তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করা৷ তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও দলে প্রবল সংস্কার শুরু করেছেন৷ মনে করা হচ্ছে, ২১শের মঞ্চ থেকে সেই রাজনৈতিক বার্তা তিনি তুলে ধরবেন৷ পাশাপাশি আবার মনে করিয়ে দেবেন, তৃণমূল করার আচরণবিধি৷ এর বাইরে এই সমাবেশ জাতীয় রাজনীতিতেও বার্তাবহ হতে চলেছে৷ কারণ মমতা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে বলেই দিয়েছেন, এবার টার্গেট দিল্লির ক্ষমতা৷ পঞ্চায়েত ও পরে লোকসভা ভোটে জয়৷ আগামী দিনেও জোট অথবা বিজেপির বিরুদ্ধে একাই চলতে হবে সেই বার্তা তিনি রাখবেন৷ সপ্তাহভর দার্জিলিং ও দিল্লিতে কর্মসূচিতে ব্যস্ততার পর শনিবার গভীর রাতে কলকাতায় ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বৃহস্পতিবার সমাবেশ৷ পরের সপ্তাহে আবার তিনি দিল্লি যেতে পারেন৷

এই প্রসঙ্গে যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রমজান মাস পড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে একটু কম সময় আমরা পেয়েছি৷ তবু জেলা ঘুরে আমরা যে উন্মাদনা দেখছি, তাতে রেকর্ড ভিড় হবে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শুনতে সব পথ এসে সেদিন মিশবে ধর্মতলায়৷” এদিকে নির্দিষ্ট জায়াগাতেই এবারও মঞ্চ৷ সময়ও নির্দিষ্ট৷ শহিদদের মঞ্চে তুলে স্মরণ কর্মসূচি৷ দূর জেলার লোকেরা আসবেন মঙ্গলবার থেকেই৷ তাঁদের থাকার ব্যবস্থা-সহ খুঁটিনাটি সব আয়োজন দেখছেন স্বয়ং নেত্রী৷ রাস্তার এক পাশ দিয়ে মিছিল করতে বলা হয়েছে৷ তাও মানুষের ভিড়ে পথ কিছুটা সময় রোধ হবেই সেদিন৷ তাই অন্য বারের মতো এবারও আগাম ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ