Advertisement
Advertisement

ডেঙ্গু বাড়ছে জেলাতেও, পাল্লা দিয়ে মৃত্যুও

ডেঙ্গু প্রতিরোধে মডেল হোক কলকাতা পুরসভাকে, চায় রাজ্য৷

Dengue claims 11 lives in West Bengal
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:August 7, 2016 3:02 pm
  • Updated:August 7, 2016 3:02 pm

সন্দীপ চক্রবর্তী ও অনির্বাণ বিশ্বাস: এবার সিউড়ির এক বাসিন্দার মৃত্যু হল ডেঙ্গুতে৷ সবমিলিয়ে সরকারিভাবে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১৷ রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ১৪২২৷ সিউড়ি-২ নম্বর ব্লকের দেশালপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ রাকিবুল হাওড়া থেকে জ্বর নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন৷ ডেঙ্গুতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর৷ রাজ্য সরকার সচেতনতা প্রচারে জোর দিলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে৷ তবে জরুরি ভিত্তিতে সব পুরসভাকে ডেঙ্গু মোকাবিলায় নামতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন৷ কলকাতা পুরসভা যেমনভাবে কাজ করছে, তাকে মডেল করে এগোতে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা৷ সিউড়ি পুরসভা যেমন আজ, রবিবার নিকাশি নালা সাফাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তেমনই সচেতনতায় খাতিরে র‍্যালি বের হচ্ছে৷

মালদহে মোথাবাড়িতে চেন্নাই ফেরত এক শ্রমিকের রক্তে ডেঙ্গুর জীবাণু মিলেছে৷ উত্তর ২৪ পরগনার তিন নম্বর রেল কলোনির পিঙ্কা বিশ্বাসও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত৷ তবে হাসপাতালগুলিতে আরও পরিচ্ছন্নতার উপর জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্তারা৷ আশপাশে ডেঙ্গু ছড়ানোয় কলকাতা পুরসভার উপর চাপ বাড়ছে৷ যদিও পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ও কর্তারা অভিযান, নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন৷ কলকাতা পুরসভা এলাকায় বরো চেয়ারম্যান অনিন্দ্য রাউতের নেতৃত্বে অভিযানের সময় উল্টোডাঙার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভা মিলেছে৷ উল্টোডাঙার সর্বোদয় স্কুলে লার্ভা মেলায় পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে নোটিসও পাঠানো হয়েছে৷ প্রতিটি স্কুল ও হাসপাতাল বা সরকারি অফিসেও নজরদারি চালানো হচ্ছে৷ লার্ভা দমনে জোর দেওয়া হচ্ছে৷

Advertisement

কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় একটি অনুষ্ঠানে কলকাতা পুরসভার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন৷ তিনি স্পষ্টই বলেছেন, “ডেঙ্গু মোকাবিলায় কলকাতা পুরসভা ছাড়া আর কোনও পুরসভা প্রায় প্রস্তুতই ছিল না৷” অবশ্য মশাবাহিত রোগ মোকাবিলায় প্রশিক্ষিত কর্মীদের নিয়ে টিম তৈরি করেছে বিধাননগর পুরসভা৷ সেখানে রক্ত পরীক্ষার তিনটি শিবির করা হয়েছে৷ সোমবার থেকে তিনটি খালেই স্পিড বোট চালানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে৷ কলকাতার দেখাদেখি অনেক পুরসভাই পেশাদার টিম নামাচ্ছে৷ কিন্তু সারাবছর মনিটরিং না থাকায় ও পরিকাঠামোর অভাব থাকলে যে সমস্যা মিটবে না, তা নিয়ে দ্বিমত নেই৷ পাশাপাশি দেখা দিয়েছে পতঙ্গবিদের অভাব৷ কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের বক্তব্য, “বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে প্রতিদিনের রিপোর্ট নিয়ে পরিকাঠামো তৈরি করে এগোনোর ফলেই সাফল্য এসেছে৷ দেশের পুরসভাগুলিও স্বীকৃতি দিয়েছে কলকাতার কাজকে৷” অন্য পুরসভার যত্রতত্র ফগিং মেশিন ব্যবহারেও সায় নেই কলকাতার৷

Advertisement

আসলে, চলতি বছরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়তে পারে৷ এমন ইঙ্গিত ছিলই৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে নজরদারিতে থাকার ফলে কলকাতা পুরসভার দক্ষ স্বাস্থ্য আধিকারিকরা আগেভাগেই ওয়াকিবহাল ছিলেন৷ তাই মাসতিনেক আগে থেকেই সমস্ত প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছিল৷ কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের চিকিত্সক ও আধিকারিকরা বরং চিন্তিত ছিলেন ডেঙ্গু রোগের চরিত্র বদলের পাশাপাশি মশার চরিত্র বদলেও৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এবিষয়ে স্পষ্ট রিপোর্ট দিয়েছে পুরসভা৷ সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে কীভাবে সারাবছর ধরে মশাবাহিত রোগের মোকাবিলা ও প্রতিরোধ করা হচ্ছে৷ নবান্নে্ সূত্রে খবর, কলকাতা পুরসভার গৃহীত ব্যবস্থাকেই অন্য পুরসভা মডেল করুক, চাইছে সরকার৷ কলকাতার থেকে ‘পরামর্শ’ও নিচ্ছে অন্য পুরসভাগুলি৷

কলকাতা পুরসভা এলাকার ১৪৪টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব খুব বেশিভাবে ছড়াবে না বলে আশাবাদী চিকিৎসক ও আধিকারিকরা৷ তবে লাগোয়া পুরসভাগুলির কিছু কিছু ‘গলদ’ না শোধরোলে যে কলকাতা পুরসভার চাপ বাড়বে, তা স্পষ্ট৷ মাসছয়েক আগে লাগোয়া পুরসভাগুলির প্রধান ও কর্তাদের নিয়ে একটি কর্মশালাও হয়েছিল কলকাতায়৷ তার ভিত্তিতে কিছু গাইডলাইন ঠিক হয়েছিল৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’-ও কলকাতা পুরসভার যেভাবে কাজ করে তার প্রশংসা করেছে৷ দিল্লির ভেক্টর বর্ন ডিজিজের সংস্থাও কলকাতাকে নিজস্বতা মেনে চলায় সায় দিয়েছে৷ সম্প্রতি জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় আরবান প্রাইমারি হেল্থ সেণ্টার গড়ার কাজও অনেকটা এগিয়েছে৷ পুরসভার লক্ষ্য, প্রতিটি ওয়ার্ডেই এমন স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ