Advertisement
Advertisement
পঞ্চকোট রাজপরিবারের পুজো

দালানে সুরের মূর্চ্ছনা, ১৬দিনের দুর্গাপুজোয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের আসর পঞ্চকোট রাজবাড়িতে

আগমনি সংগীতের চর্চায় এখনও অতীতের স্পর্শ পায় পঞ্চকোট রাজবাড়ি।

Panchokot Palace is surrounded by the classical music in Puja like before
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 26, 2019 6:57 pm
  • Updated:September 26, 2019 6:57 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রাজা নেই। রাজতন্ত্র নেই। কিন্তু রাজদরবারে সংগীত সৃজনের রীতি আজও রয়ে গিয়েছে। পুরুলিয়ার কাশীপুরের গড়পঞ্চকোটের রাজরাজেশ্বরী মূর্তির দুর্গা পুজোয় আগমনী গানে মা উমা আসেন এই ঠাকুরদালানে। ভাদু বিসর্জনের পরই পয়লা আশ্বিন থেকে দুর্গার আগমনী গান শুরু হত এই রাজদরবারে। এখন আশ্বিণের পয়লা তারিখ শুরু না হলেও, তিথি মেনে আদ্রা নক্ষত্রযুক্ত কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে গত সোমবার এই রাজপরিবারে যে ষোলকল্পের দুর্গাপুজো শুরু হয়, তা এই গানের মধ্য দিয়েই।

[আরও পড়ুন : থিম ভাবনায় বিদ্যাসাগর, বর্ণপরিচয়ের স্রষ্টাকে শ্রদ্ধাজ্ঞলি শহরের এই পুজোর]

“আজকে পেলাম তোমায় উমা/ মনের মাঝে রাখতে চাই/ আঁধার ভবন করলে আলো/ এবার না মা বলবে যাই।” তেওড়া তালে, বাগেশ্রী রাগে সেই পাখোয়াজের বোলে আজও গমগম করছে এই ঠাকুরদালান। পঞ্চকোটের উচ্চাঙ্গ মার্গ সংগীত আজ অনেকটাই ক্ষয়িষ্ণু হলেও, মূল ধারা থেকে এখনও সরে আসেনি। দরবারি সংগীত জৌলুস ফিকে হয়েছে বটে, কিন্তু এই ঠাকুরদালানের ষোল দিনের পুজোয় সকাল–সন্ধে দুর্গা সংগীতে সেই হারানো অতীতকেই যেন ফিরে পাচ্ছে পঞ্চকোট। এখনও যে সেই মার্গ সংগীত পরিবেশনের স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
এই রাজপরিবারের বর্তমান সদস্য সৌমেশ্বরলাল সিং দেও বলেন, “শেষ রাজা ভুবনেশ্বরী প্রসাদ সিং দেওর আমলেও কাশীপুর রাজপ্রাসাদে সারা বছরের সঙ্গে আশ্বিণ মাসের শুরু থেকেই আগমনির পূর্ণাঙ্গ আসর বসত। দরবারি সুরের মূর্চ্ছনায় সমগ্র প্রাসাদ যেন এক রঙিন রূপ নিত। এখন আগমনি গান শুনলে কানে যেন সেই সংগীতের সুরই বাজে।”
আসলে পঞ্চকোটের প্রজারা এখনও সেই ঘরানাকেই ধরে রেখেছেন। রাজপরিবার অর্থাভাবে জর্জরিত হলেও প্রজারাও আজও নিয়ম করে আগমনি গানে মেতে ওঠেন – “জয় দুর্গে দুরধিগম্য রূপিণী/ দুরন্ত দুর্গা শুর নিশুদিনী/ দীন দুর্বল তারিণী জননী দুরিত হারিণী।” এই রাজদরবারে পা রেখেছিলেন যদুভট্টের মত সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ। তাছাড়া ফি দুর্গাপুজোর আগমনি গানে সুর মেলাতে বেনারস থেকে আসতেন গহরজান, জানকীবাঈ, মালকার মত সঙ্গীতজ্ঞরা। ঝাড়খণ্ড থেকে আসতেন কমলা ঝরিয়াও। পঞ্চকোটের ইতিহাস গবেষক দিলীপ গোস্বামী বলেন, “বৈরাগ্য উৎপাদক মর্মস্পর্শী সুমধুর আগমনি সংগীতের সমাবেশে রাজপ্রাসাদে সেইসময় যেন আলোর বিচ্ছুরণ ঘটত। সেই গরিমাকে ধরে রাখতে রাজপরিবারের প্রজারা এখনও আগমনি গেয়ে অতীতের সংগীতের ঘরানার রেওয়াজ চালিয়ে যাচ্ছেন।” তাদেরই মধ্যে সঞ্জয় সূত্রধর, সুশীল কুমার শাহ, ভুবন বাউরি, মানিক বাউরির মত শিল্পীরা কিছুদিন আগে পর্যন্তও শেষ রাজা ভুবনেশ্বরী প্রসাদ সিং দেওর আমলের সংগীতজ্ঞ প্রয়াত জগদীশ কিশোর লাল সিং দেওর ঘরে গানের চর্চা করতেন।

Advertisement

[আরও পড়ুন : দশভুজা নয়, ১৮ হাতের দুর্গার অধিষ্ঠান বেহালার এই পুজোয়]

সঞ্জয় সূত্রধরের কথায়, “আমরা বাবা এই রাজপরিবারে বন্দুকের নল পরিষ্কার করতেন। সেই সূ্ত্রেই রাজ দরবারের সংগীত ঘরানায় আমরা আচ্ছন্ন ছিলাম। তাই সেই আগমনি গান এখনও গাইছি।” দরবারি রাগে ঝাঁপতালে তবলা, পাখোয়াজ, হারমোনিয়াম, মন্দিরা রাজরাজেশ্বরীর ঠাকুরদালান থেকে ভেসে আসছে, “এসো মা গো কাত্যায়ণী/ নিখিল ভয়হারিণী অসুরদল নাশিনী/ তোমা বিনে ত্রিভুবনে, কে তারে তাপিত জনে/ স্থান দিও ঐ চরণে, ত্রাণ কর ত্রিনয়নী।” কবি তথা রাজপুরোহিত রাখাল চক্রবর্তী, কবি ধ্রুবেশ্বরলাল প্রসাদ সিং দেও এই আগমনি গানগুলির রচয়িতা। রাজদরবারেই রাজার উপস্থিতিতে এই গানে সুর দিতেন রাজেন্দ্রনারায়ণ সিং দেওর মত সুরকাররা। সেই আগমনির সুরেই আজও মাতোয়ারা তামাম পঞ্চকোট।

Advertisement

দেখুন ভিডিও: 

ছবি ও ভিডিও: অমিত সিং দেও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ