Advertisement
Advertisement

অপরাধ জগতের কেউকেটাদের টেক্কা দেবে ‘বহুরূপী’ মনোতোষ

বেশ কয়েকজন স্ত্রী, অফুরান টাকার জোগান সবই ছিল মনোতোষের জীবনে।

Polymorphous Manotosh, a dangerous criminal in disguise
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:November 24, 2017 4:44 am
  • Updated:September 22, 2019 6:16 pm

তরুণকান্তি দাস: মাছ ব্যবসার কাজে যাওয়ার নামে দুই নারীর কাছে হপ্তা বদলে রাত্রি যাপন। কখনও জঙ্গি সংগঠনের কাজে বাইরে পাড়ি। কয়েক রাত। আগেই প্রথম স্ত্রী-সন্তানের হাত ছেড়ে এক আত্মীয়ার হাতে নিজেকে সমর্পণ। আবার তার মায়ের সঙ্গেই সম্পর্ক। মা-মেয়েকে নিয়ে বসিরহাট পাড়ি। সেখানে আবার এক স্বামী পরিত্যক্তাকে নাম বদলে বিয়ে। মাঝে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ ঘুরে আসা। সামান্য ঘড়ির মেকানিক থেকে বিশ্বস্ত হয়ে ওঠা আল কায়দার মতো জঙ্গি সংগঠনের।

[নেটওয়ার্ক তৈরিতে জঙ্গিদের টার্গেট ছিল মেধাবী ছাত্ররা]

বহুরূপী শব্দটাকেও ক্লিশে লাগছে! স্বাভাবিক। তাকে কেন্দ্রীয় চরিত্র করে ‘ছদ্মবেশী ২’ নামে একটা সিনেমায় লগ্নি করতেই পারে টলিউড। ক’টা বিয়ে, কয় খানা নাম, কতগুলি ধাম, কতরকমের পেশা, তা জানার পর মাথায় চক্কর লাগার জোগাড় হয়। মনোতোষ আসলে জিয়ারুল? সেই জিয়ারুল কি তবে খলিল? বসিরহাটের গৌরীর স্বামী আদতে তাহলে মনোতোষ? পেশা তা হলে মাছব্যবসা? মুঙ্গের থেকে অস্ত্র আনা, বিশেষ বিস্ফোরক, ডিভাইসের জোগান দেওয়া? সেই লোকটির স্ত্রী লক্ষ্মী? নাম? মনোতোষ? ঘনচক্করে পড়লেও এ-ও এক বৃত্ত বটে।

Advertisement

[জঙ্গিদের ল্যাপটপে কলকাতার নামী স্কুল, রাজভবন-ভিক্টোরিয়ার নকশা]

এত বর্ণময় চরিত্র যে, এক কথায় তা প্রকাশ করা অসম্ভব। অপরাধ জগতের লোকজন এমনিতেই রঙিন হয়। তবে উত্তর ২৪ পরগনার মনোতোষ অনেককেই টেক্কা দেবে। বাংলাদেশ যাওয়া, ফিরে আসা, সীমান্তে একের পর এক ঘর ও ঘরণী বদলানো, পরতে পরতে রঙের ছিটে। রহস্যেরও। যার জট ছাড়াতে গিয়ে গোয়েন্দারা বলছেন, এ যেন ছিপের হুইলের সুতো। গুটিয়ে আনা হয়েছে যখন ভাবা হচ্ছে তখন দেখা যাচ্ছে জলে খেলছে মাছ।
সত্যি তাই। একেবারে ছাপোষা বাঙালি সন্তানের জীবনের লুডো খেলায় ছক্কা ফেলার স্বপ্ন ছিল বরাবরের। কিন্তু সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন শেষ হল যে সাপের মুখে পড়ে। বাবা ইছাপুরে সরকারি অস্ত্র কারখানার কর্মী। সেই সুবাদে নানা আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে চাক্ষুষ আলাপ ছোট থেকেই। একাধিকবার গিয়েছে কারখানায়। সেখান থেকেই কি ভাবনায় নয়া মোড়? গারুলিয়ার এই পরস্পরের চেনা পাড়ায় তার নাম তো মনোতোষ। বাবা মনোরঞ্জন দে। গারুলিয়া পুরসভার লেনিননগরের বাড়িতে আজ থেকে প্রায় দুই যুগ আগে আগ্নেয়াস্ত্র কারবারে হাতেখড়ি তার। তখন তার খোঁজে পুলিশও তো হানা দিয়েছিল এই বাড়িতে। হুগলির ভদ্রেশ্বর থানা গ্রেফতার করেছিল তাকে। যা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল প্রথম স্ত্রী লক্ষ্মীর সঙ্গে। তবে অশান্তির আর একটি কারণ ছিল নারীসঙ্গ। বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীদেবী বলেছেন, “এক আত্মীয়ের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মনোতোষের। হঠাৎ একদিন উধাও হয়ে গিয়েছিল আমার স্বামী। সৎপথে ছিল এমন দাবি করি কী করে?”

Advertisement

[মেজর জিয়ার মন্ত্রেই জেহাদি হয়ে ওঠে মেধাবী সামশাদ]

পেশায় ঘড়ির মেকানিক মনোতোষের ডাকনাম নাকি রতন। যে ১৯৯৫-’৯৬ সাল নাগাদ পুরোদস্তুর নেমে পড়েছে ভিনরাজ্য থেকে অস্ত্র এনে এখানে জোগানে। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তার খদ্দের অনেক। এহেন রতনকে চিনেছিল বাংলাদেশি জঙ্গি টিম। তাকে সরাসরি স্লিপার সেলের সক্রিয় সদস্য না করা হলেও অস্ত্র জোগান ও তথ্য সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে পাড়ি দেয় বসিরহাট। ততদিনে জুটেছে নয়া সঙ্গী। ইছাপুরের যে আত্মীয়া সবিতার সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাকে নিয়েই বসিরহাটের মৈত্রবাগানে ভাড়াবাড়িতে আশ্রয়। সঙ্গে সবিতার মেয়ে গৌরী। যে গৌরীর সঙ্গেও তার সম্পর্ক তৈরি হয় এবং সবিতাকে শ্বাশুড়ি সাজিয়ে বাড়ি বদল করতে হয়। সেখানে মাছ ব্যবসার নামে মনোতোষ তখন বাইরে যাতায়াত শুরু করেছে। একাধিক স্থানে ভাড়া বাড়ি ঠিক করা, বাংলাদেশ থেকে আসা সংগঠনের লোকজনের আশ্রয়ের ব্যবস্থার দায়িত্ব তার। তখন আজগর নামে ন্যাজাট এলাকার একটি ছেলের মাধ্যমে আলাপ ভেবিয়ার খড়মপুরের স্বামী পরিত্যক্তা আফরোজার সঙ্গে। বসিরহাটের খোলাপোতার বাড়িতে বসে যে বলছে, “জিয়ারুল ওর নাম জানতাম। দিন দশেক আগে শেষ এসেছিল। বলত মাছ ব্যবসা। বাইরে যাচ্ছে। কিন্তু আর একটা বউ, বাংলাদেশে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগ আছে জানতাম না।” তবে টাকার অভাব যে ছিল না তা স্পষ্ট এখানে দুটি বাড়ি ভাড়া এবং সংসার চালানোর বেহিসাবি খরচে। আফরোজার সঙ্গে বিয়ের খাতায় বাবার নাম সিরাজুল গাজি। ঠিকানা কিন্তু ফাঁকা। বুধবার রাতে দুই বাড়িতেই হানা দিয়েছিল পুলিশ। এরই মধ্যে খোঁজ মিলেছে আর একটি বাড়ির। যেখানে যাতায়াত ছিল মনোতোষের। সবাই নাম জানত খলিল। আবার ধৃত আল কায়দা জঙ্গিদের কাছে তার নাম যে অন্য।
লক্ষ্মী ও সবিতা চলে এসেছে ইছাপুর। পড়ে রয়েছে আফরোজা। অপেক্ষা আজগরের। না-কি মনোতোষের? উত্তর খুঁজে হয়রান যে তদন্তকারীরাও।

[লক্ষ্য ‘কলকাতা মডিউল’, দশমীর পর থেকেই শহরে ঘাঁটি গাড়ে দুই জঙ্গি]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ