Advertisement
Advertisement

Breaking News

নববধূর সাজে নদিয়ার ভট্টাচার্য বাড়িতে এসেছিলেন দেবী

রীতি মেনে গ্রামের ছুতোররা এই কালী প্রতিমা তৈরি করেন।

Story of Nadia Puja

নদিয়ার হরিনাথপুরের ভট্টাচার্য বাড়ির কালী প্রতিমা।

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:November 6, 2018 5:28 pm
  • Updated:November 6, 2018 5:28 pm  

নিজস্ব সংবাদদাতা, তেহট্ট: হরিনাথপুরের ভট্টাচার্য বাড়ির বুড়োমার পুজোর মাহাত্ম্য এখনও নদিয়ার বাসিন্দাদের মুখে মুখে ফেরে। দেবী নববধূ রূপেই ভট্টাচার্য বাড়িতে এসেছিলেন। তবে সে ক্ষণিকের আগমন ছিল। বউভাতের দিন নতুন বউয়ের মাথা থেকে ঘোমটা সরতেই চারহাত সর্বসমক্ষে চলে আসে। তখন নতুন বউ বাড়ির প্রবীণ সদস্যদের খাবার পরিবেশন করছেন। দু’হাত জোড়া। এমন সময় মাথা থেকে ঘোমটা খসে পড়ল। বাকি দুটি হাত দিয়ে ঘোমটা ঠিক করছেন নতুন বউমা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বিষয়টি দেখতে না দেখতেই মুহূর্তের মধ্যে দেবী অদৃশ্য হয়ে যান। এই সময় স্ত্রীর খোঁজে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান ভট্টাচার্য বাড়ির ছেলে রাজারাম সিদ্ধান্ত। পরবর্তীকালে রাজারামের দাদা নৃসিংহ তর্কবাগীশের নাতি দীননাথ তর্কালঙ্কার জুড়ানপুরে জঙ্গলে  সাধনায় যান। একটি নিমগাছের নিচে বসে মা কালীর সাধনা শুরু করেন। একটাই উদ্দেশ্য, মা কালীর দর্শন পাওয়া। সাধনার মধ্যেই দীননাথ একদিন মাকে দেখার আরজি জানালে দৈববাণী হয়। মা জানান, ভট্টাচার্য বাড়িতে তাঁকে দক্ষিণাকালী রূপে পুজো করা হোক। তিনি ওই পুজোর মধ্যে দিয়েই আসবেন। এই দৈববাণীর পরেই নদিয়ার হরিনাথপুরের ভট্টাচার্য বাড়িতে কালীপুজো শুরু হয়।

মুর্শিদাবাদ সীমান্ত লাগোয়া ভট্টাচার্য বাড়ির কালীপুজো বুড়োমা নামেই এলাকায় পরিচিত। ভট্টাচার্য বাড়ির উত্তরপুরুষরা এই পুজোর সূচনাকাল সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন না। তবে আনুমানিক ১৭৪০-১৭৫৬ সাল নাগাদ নবাব আলিবর্দি খাঁর সময়ে এই বুড়োমার পুজো শুরু হয়েছিল বলে মনে করা হয়। পুজো যতই প্রাচীন হোক না কেন সমগ্র জেলা জুড়েই বুড়োমায়ের খ্যাতি রয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, বুড়োমা খুবই জাগ্রত। কেননা মায়ের কাছে কিছু চাইলে খালি হাতে ফিরতে হয় না। তাই কালীপুজোতে হরিনাথপুরের ভট্টাচার্য বাড়িতে উপচে পড়ে ভিড়। দুর্গাপুজোর সময়ই শ্যামা মায়ের আরাধনার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। বিজয়া দশমীর দিন গঙ্গাজল ও সিঁদুর দিয়ে কাঠামো পুজো করা হয়। একাদশী থেকে কাঠামোতে খড় বিচুলি বাধা থেকে শুরু করে  মাটি লেপার কাজ হয়। রীতি মেনে গ্রামের ছুতোররা এই কালী প্রতিমা তৈরি করেন। প্রতিমার কাছে শিয়াল থাকে। গলায় ও হাতে থাকে মুণ্ডমালা। মা এখানে দক্ষিণাকালী রূপে পূজিতা হন। এই বুড়োমাকে নিয়ে কথিত কাহিনী একাধিক। একসময় বামাখ্যাপার শিষ্য তারাখ্যাপা স্থানীয় জুড়ানপুরে দেবীর সঙ্গে ধ্যানে কথা বলার সময় দেখতে পান, তিনি অস্থির হচ্ছেন। তারাখ্যাপা এর কারণ জানতে চাইলে দেবী জানান, ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোয় তাঁকে যেতে হবে। ভট্টাচার্য বাড়ির বর্তমান বংশধর মহেশ্বর ভট্টাচার্য বলেন,  ‘তারাখ্যাপা দেখেছিলেন একটা তারা বেরিয়ে যাচ্ছে। সেই তারা দেখে তখনই উনি আমাদের বাড়িতে চলে আসেন।’

Advertisement

[শ্যামা মাকে দু’ভাগ করেই পুজো হয় এই গ্রামে, কেন জানেন?]

একসময় ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোয় বলি প্রথার প্রচলন ছিল। তবে এখন আর বলি হয় না। কিন্তু বলি না হোক, বুড়ো মায়ের ভোগে বিশেষত্ব রয়েছে। দেবীর ভোগে থাকে পোলাও, ইলিশ-সহ একাধিক মাছের নানা পদ, তরকারি, ভাজা। ভোগ রান্না করেন বাড়ির দীক্ষিত মহিলারা। বুড়ো মায়ের আরাধনায় ভট্টাচার্য বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে শামিল হয় গোটা হরিনাথপুর।

[পাহাড় চূড়ায় মন্দির, কালীপুজোয় সাধনা করতেন অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement